সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
সান্টার গিফট

সন্ধ্যাবেলা থেকেই রেমি ছটফট করছে। বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে, কখন ঘড়িতে বারোটা বাজবে তারই প্রতীক্ষা। কারণ বারোটা বাজলেই সান্টা তার উইশ্ পূর্ণ করবে। কাল যে বড়দিন। প্রতিবছর সান্টা ক্লজ্ এইদিনে রেমির মতো ছোটো ছোটো ছেলে মেয়ের মনের ইচ্ছে পূরণ করে, তাদের বিভিন্ন গিফট দেয়। কিন্তু রেমি জানে গিফট পাওয়ার একটা বিশেষ পদ্ধতি আছে। সেইমতো রাতে মাথার ওপর টাঙাবে বলে মোজা রেডি করে রেখেছে। সান্টা নাকি মোজা থাকলে তবেই গিফট দেয়। স্কুলের বন্ধু নেহা আগেরবার টাঙাতে ভুলে গেছিলো, বেচারি কোনো গিফট পায়নি। স্কুল খোলার পর বন্ধুদের কাছে খুব কেঁদেছিল নেহা।

রেমি প্রতিবছরই সুন্দর সুন্দর গিফট পায়। সান্টা আশ্চর্য ভাবে তার উইশ্ জানতে পেরে যায়। আগেরবার রেমি সান্টার কাছে বার্বি ডল চেয়েছিল। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখে একটা বড়ো বার্বিডল তার পাশে শুয়ে আছে। আনন্দে চিৎকার করে উঠেছিল সে। বাড়ির সবাইকে ডেকে ডেকে দেখিয়েছিল রেমি। যদিও রনিদা কিছুতেই বিশ্বাস করেনি। রনি ওর জেঠুর ছেলে, রেমির থেকে প্রায় নয় বছরের বড়ো। ওর এখন ক্লাস টেন। তাই সবেতেই বিজ্ঞ বিজ্ঞ ভাব। রনিদা বলেছিল - "ওসব সান্টা ক্লজ বলে কিছু হয় না রে রেমি। কেউ আসেনা। সব আজগুবি গল্প।" রেমির খুব রাগ হয়েছিল কথাটা শুনে। সে কিছুতেই মানতে চায়নি কথাটা। আর মানবেই বা কি করে। প্রতিবার রেমি সান্টার কাছে যা চায় তাইতো পায়। আর তার উইশের কথা সে কারুকে জানায় না শুধুমাত্র তার বাবিকে ছাড়া।

রেমি তার বাবির কাছে কিছু লুকোয় না। সব কথা শেয়ার করে। বাবি ছাড়া আর কাকেই বা বলবে তার মনের কথা। রেমির মা তো তাকে ছেড়ে চলে গেছে। তখন রেমির বয়স চার। বাবি বলেন মা নাকি আকাশের তারা হয়ে গেছে। আকাশের সবথেকে উজ্জ্বল তারাটাই রেমির মা। অথচ ঠাকু্ম বলে্ন তার মা কে নাকি শিবঠাকুর নিয়ে গেছে। শিবঠাকুর ভালো ভালো লোকেদের মাঝে মাঝে নাকি নিয়ে যান। রেমি আবার শিবঠাকুরকে খুব ভালোবাসে। তাই মাঝে মধ্যেই লুকিয়ে জিজ্ঞেস করে যে কবে তার মাকে শিবঠাকুর ফেরত পাঠাবে তার কাছে। কিন্তু এর কোনো উত্তর এখনও পায়নি রেমি। আসলে রেমি তার মাকে খুব মিস্ করে। মাকে অল্প মনে পড়ে তার। মা তাকে খাইয়ে দিত, ঘুম পাড়িয়ে দিত। মাকে ছেড়ে আর থাকতে ভালো লাগে না রেমির। তাই এবছর সে ঠিক করেছে সান্টার কাছে সে সবথেকে ভালো গিফ্‌ট্‌টা চাইবে। তার 'মা' কে। সান্টা তার সব কথা শোনে। রেমি জানে এবছরও সান্টা তার উইশ্ পূরণ করবে। দেখতে দেখতে ঘড়িতে এগারোটা বেজে গেল। এখন রেমির ঘুমোনোর পালা। মাথার ওপর মোজা টাঙিয়ে, সাহস করে সান্টার কাছে উইশ্ টা করেই ফেলল সে। তারপর ঘুমিয়ে পড়লো।

পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলে চোখ খুলল না সে। একটা অদ্ভুত উত্তেজনা হচ্ছে তার মনের মধ্যে, কারণ চোখ খুললেই সে মাকে দেখতে পাবে। আস্তে আস্তে রেমি তার চোখ খুলল। কিন্তু একী !! ঘর যে ফাঁকা। কেউ কোথাও নেই। রেমি তার মা’কে দেখতে পেল না। ঘর থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে এল সে। সারা বাড়িময় খুঁজতে লাগল তার মা’কে। রেমির হঠাৎ এরকম অস্বাভাবিক ব্যবহারে সবাই অবাক হল। কেউ কিছু বুঝতে পারল না। ঠাকুম রেমিকে জিজ্ঞেস করলেন - "কী হয়েছে রেমি ?? সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই এরকম ছুটোছুটি করছ কেন ?? পড়ে যাবে তো।"

রেমি বলল - "আমি সান্টার গিফ্‌ট্‌ খুঁজছি। আজ তো খ্রীস্‌মাস।"
ঠাকুম হেসে বললেন - "ওহ্ !! এই ব্যাপার। তা গিফ্‌ট্‌ তো তোমার ঘরেই আছে। চলো, দেখবে চলো।"
-"ঘরে ? কই আমি তো কোথাও দেখতে পেলাম না। "

ঠাকুম রেমিকে নিয়ে ঘরে এলেন। একটা বড়ো প্যাকেট দেখিয়ে বললেন - "এই দেখো রেমি। কত বড় গিফ্‌ট্‌। খুলে দেখো সান্টা কী দিয়েছে তোমায় ?"

রেমি গিফ্‌ট্‌ খুলল। দেখল তাতে একটা ভিডিও গেম রয়েছে। সে মাথা নেড়ে বলল - "কিন্তু আমি তো এটা চাইনি। এটা সান্টার গিফ্‌ট্‌ নয়। সেটা কোথায় ?"
-"কী চেয়েছ তুমি ? "
-" আমি আমার মাকে ফেরত চেয়েছি। মা কোথায় ?? বলোনা ঠাকুম। "

রেমির কথা শুনে ঠাকুমা স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। ছোট্ট নাতনিকে কি বলবেন বুঝতে পারলেন না। নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বললেন - "রেমি, তোমাকে তো বলেছি, তোমার মা শিবঠাকুরের কাছে আছে। তোমার কাছে আসতে পারবে না। ওখানে অনেক কাজ যে।"
-"না, আসবে। সান্টা সবার উইশ্ ফুলফিল্ করে। আমারও করবে। সান্টা মাকে আনবেই। "
-" সান্টা তো তোমায় গিফ্‌ট্‌ দিয়েছে। ওটা নিয়ে খেলো। "
-" না, আমার মাকেই চাই। আমি আজ সারাদিন অপেক্ষা করব। মা ঠিক আসবে। "

সান্টার গিফট

রেমির এই জেদের ওপর কেউ কোনো কথা বলতে পারলনা। তার বাবিও অনেক করে বোঝানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু কোনো লাভ হল না। রেমি তার কথায় অনড়। সে সারাদিন ঘরে বসে অপেক্ষা করবে, কোথাও যাবে না। দেখতে দেখতে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেল। কিন্তু সান্টা তার গিফ্‌ট্‌ নিয়ে এল না। এবার রেমির কান্না পেল। সে জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। কান্না শুনে ঠাকুম, বাবি সবাই ছুটে এলেন। সকলে অনেক ভোলানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু রেমির কান্না থামল না। কান্নার জন্য তার শরীর খারাপ হতে লাগলো। জ্বর আসায় সে বিছানায় অচেতন হয়ে পড়ল। এরকম ভাবে কতক্ষণ কেটে গেছে তা রেমির জানা নেই। হঠাৎ তার মনে হল কে যেন খুব যত্নের সঙ্গে তার মাথায় হাত বোলাচ্ছে। ঠিক যেমন তার মা তাকে ঘুম পাড়ানোর সময় করত।

রেমি আস্তে আস্তে চোখ খুলল। দেখল মাথার কাছে তার মাসি বসে আছে। রেমি মাসিকে খুব ভালোবাসে। মাসিও রেমি অন্ত প্রাণ। রেমির জ্বর শুনে রাতের বেলাই মাসি ছুটে এসেছে তার এই ছোট্ট মেয়েটার কাছে। রেমি বুঝল সান্টা তার কথা ফেলেনি। সত্যি সত্যি তার উইশ্ পূরণ হয়েছে। কারণ মাসি শব্দের মধ্যেই তো 'মা' লুকিয়ে আছে। রেমি তার মাসিকে জড়িয়ে ধরলো। তখনই ঘড়িতে ঢং ঢং করে বারোটা বাজলো।


ছবিঃ পার্থ মুখার্জি

সুনিষ্ঠা প্রাণিবিদ্যায় স্নাতক এবং পরিবেশ বিদ্যায় স্নাতকোত্তর । শখ বই পড়া এবং গল্প লেখা । প্রধানত সমাজ ভিত্তিক এবং ছোটদের জন্য লিখতে পছন্দ করেন । বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে ।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা