সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
জল বাঁচানোর কিছু উপায়

প্রতি বছরের মতই এবারও গ্রীষ্ম এসে পড়েছে বীরবিক্রমে। বাড়িতে, স্কুলে সর্বত্র একই আলোচনা, "কী গরম রে বাবা! আগে তো এত গরম পড়ত না!" ঠিক তাই। প্রতি বছরই গরমের পরিমাণ আগের বারের চেয়ে বেড়ে চলেছে। গরম বাড়লেই বাড়ে জলের চাহিদা। এদিকে সূর্যের তাপে জল বাষ্পীভূত হয়ে যাওয়ায় নদী-পুকুরের জল যায় শুকিয়ে, বৃষ্টি খুব কম হয় ব'লে নদী-পুকুরে জল জমতেও পারে না। মাটির নীচের জলও আরো নীচে নেমে যায়। কুয়ো-নলকূপ থেকেও ব্যবহারের যোগ্য জল খুব বেশি পাওয়া যায় না। এমনিতেই আমাদের দেশের জনসংখ্যা যা, ব্যবহারযোগ্য জলের পরিমাণ তার তুলনায় অনেক কম। তার ওপর গরমকালে কম বৃষ্টি, পুকুর-নালা শুকিয়ে যাওয়া- এসব কাণ্ডের জেরে অবস্থাটা আরো করুণ হয়ে পড়ে।

আমরা যদি একটু ভাবনা চিন্তা করে জল ব্যবহার করি, আর কতগুলো খুব ছোট্ট ছোট্ট অভ্যেস নিজেরা আর বাড়ির বড়রা মিলে মেনে চলতে পারি, তাহলে কিন্তু গ্রীষ্মকালে জলের সমস্যা কিছুটা কমতে পারে।

প্রথমে বলি, এই গরমে, মানে আজ থেকেই তুমি কোন কোন অভ্যাস তৈরি করতে পারো।

জল বাঁচানোর কিছু উপায়

বাড়িতে RO (Reverse Osmosis)/ রিভার্স অসমোসিস পদ্ধতিতে চলা বৈদ্যুতিন জল পরিশোধক বা ওয়াটার পিওরিফায়ার বসানো আছে কি? থাকলে নিশ্চয়ই খেয়াল করেছ, ফিল্টারে যখন জল ভর্তি হয়, যে সরু পাইপটা ফিল্টারের নীচের দিকে বেরিয়ে থাকে, সেটা দিয়ে তখন বেশ অনেকটা জল বাইরে বেরিয়ে যায়। বিশুদ্ধ জল পেতে গেলে এই জলটুকু নষ্ট করতেই হবে, পদ্ধতিটাই এমন। বিভিন্ন তথ্যসূত্র বলছে, এই ধরনের পরিশোধন পদ্ধতিতে ১ লিটার বিশুদ্ধ জল পেতে গেলে ৩-৪ লিটার জল ফেলা যায়। ভারতবর্ষের মত দেশে এই মাপে ব্যবহারযোগ্য জল নষ্ট হওয়া এক সাঙ্ঘাতিক সমস্যা। কিন্তু আমাদের অনেকের বাড়িতেই আজকাল এইধরনের যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ভেবে দেখ তো, এই নষ্ট হয়ে যাওয়া জলকে কাজে লাগানো গেলে সারাদিনে কতটা জলের অপচয় কমানো যাবে? প্রশ্ন হল, কিভাবে কাজে লাগাবে এই জলকে? খাওয়া যাবে না, রান্না বা বাসন ধোওয়ার কাজেও ব্যবহার করা যাবে না, তবে?

যদি পারো তো, জল বেরনো সরু পাইপটার নীচে একটা বড় বালতি রেখে দাও। না পারলে মাঝারি একটা পাত্র পেতে রেখো, জমতে থাকা জল নিয়ে বারে বারে একটা বালতিতে জমা করো। দেখবে সারাদিনে অনেকখানি জল জমেছে। এই এত্তখানি জল নষ্ট হচ্ছিল, ভাবতে পারো!এই জল দিয়ে তুমি ঘর মুছতে পারো, বাথরুম পরিষ্কারের কাজে লাগাতে পারো, বিভিন্ন আসবাবপত্র পরিষ্কার, এমনকি সাইকেল-বাইক-গাড়ি ধোওয়ার কাজেও লাগবে এই জল। টয়লেট ব্যবহার করার পরে এই জল দিয়ে ফ্লাশ করে ফেলা যায়।

জল বাঁচানোর কিছু উপায়

আর যদি তোমার বাড়িতে নিজেদের বাগান থাকে, বা বারান্দায় থাকে কয়েকটা গাছের টব, অথবা বাড়ির সামনের ফুটপাথ ঘেঁষে কিছু গাছ, তাহলে সেই সমস্ত গাছে দেওয়ার জন্য তুমি এই জল ব্যবহার করতে পারো।

এই জল দিয়ে বাড়িতে নিত্য ব্যবহার্য কিছু জিনিষ, যেমন পাপোষ, ডাস্টার, ঝাড়ন - এইসব কাচাকাচিও করতে নিতে পারা যায়।

আরেকটা কাজ করবে, মা-কাকীমাদেরও অনুরোধ করবে কাজটা করতে। ধরো, সবজি কাটার পরে সেগুলোকে জল দিয়ে ধুচ্ছো। ধোওয়া হয়ে গেলে জলটা ফেলে দিয়ো না। খুব নোংরা হয়ে গেলে আলাদা কথা, নইলে এই জলটা দিয়েই রান্নার জায়গাটা পরিষ্কার, কিংবা সবজি কাটার ছুরি-বঁটিগুলো ধোওয়া হয়ে যাবে।

জল বাঁচানোর কিছু উপায়

বাথরুমে কিংবা রান্নাঘরে,যে কোনো কল-ই খুব ভাল করে বন্ধ করার পরেও দেখবে, ফোঁটা-ফোঁটা করে জল কিছুক্ষণ পর পর পড়তে থাকে। কলের ঠিক নীচে একটা বালতি বা কোনো পাত্র রেখে দাও। কয়েক ঘণ্টা পরে দেখো, কতখানি জল জমা হয়েছে। বালতি পেতে না রাখলে জলটার অপচয় হত তো! অভ্যেসটা নিজে তো করোই,বাড়ির সব্বাইকেও ধরিয়ে দাও এই অভ্যেস। দেখবে জল-সমস্যার কিছুটা সুরাহা হয়েছে।

জল বাঁচানোর কিছু উপায়

বালতিতে জল ভরে স্নান করার বদলে শাওয়ার চালিয়ে স্নান করললে যে জল বেশি খরচা হয় সেটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু শাওয়ার ব্যবহার করে স্নান করাটা আমাদের অনেকেরই অভ্যাস বা পছন্দ। রাতারাতি এই অভ্যাস বদলাতে না পারলেও, একটা চেষ্টা আমরা সবাই করতে পারি। শাওয়ারটাকে পুরো না চালিয়ে অল্প খুলে রাখা, যাতে পরিমিত পরিমাণে জল বেরোয়। আর স্নান করাকালীন সাবান মাখা বা শ্যাম্পু মাখার সময়ে মনে করে শাওয়ার বন্ধ করে রাখা। একই কথা দাঁত ব্রাশ করার সময়েও মনে রাখতে হবে। অনেকেই খুব না ভেবে করে যতক্ষন ব্রাশ করেন, ততক্ষন বেসিনের কল খুলে রেখে দেন। বাড়িতে বড়দের এইরকম ভুল করতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে কল বন্ধ করে দিও।

পথ ভুল করে এক-আধদিন বিকেলে যদি একপশলা বৃষ্টি তোমার বাড়িতে হাজির হয়, তবে যে বারান্দা বা জানলায় বৃষ্টির জল আসে, সেখানে বড়সড় পাত্র রেখে বৃষ্টির জল জমাতে ভুলো না। পরেরদিন সকালে ঘর মোছা, বাসন ধোওয়ার মত কাজ এই জলে দিব্যি চলবে।

এ তো হল এক্ষুণি তুমি জল বাঁচানোর জন্য কী কী করতে পারো, তার ছোট্ট ফর্দ। আরও অনেক আছে, সব মনে পড়ছে না বলে লিখতে পারছি না। তুমিও একটু মাথা ঘামাও, দেখো আরো কত ভাল ভাল উপায় বেরোবে। উপায়গুলো কাজে লাগিয়ো, আর ইচ্ছামতীকে জানিও, একসঙ্গে বসে বেশ আলোচনা করা যাবে একদিন।

এবার আসি, জলাভাব কমাবার জন্য সারা বছর আমরা কী কী কাজ করতে পারি, সে কথায়।

জল বাঁচানোর কিছু উপায়

জন্মদিনে খুব হই-চই করো নিশ্চয়ই। সারাদিন ভীষণ ব্যস্ত থাকো। এই ব্যস্ততার মধ্যে একটা ছোট্ট কাজ সেরে ফেল। প্রতিবছর জন্মদিনে সক্কাল সক্কাল ঘুম থেকে উঠে বাগানে গিয়ে একটা করে গাছ লাগাও। বাড়িতে বাগান না থাকলেও চিন্তা নেই, বাড়ির সামনে রাস্তার ধারে অল্প ফাঁকা জমি নিশ্চয়ই থাকবে। বাড়ির বড় কাউকে সঙ্গে নিয়ে সেখানেই পুঁতে দিয়ে এস একটা চারাগাছ। দেখবে গোটা বছর তোমার সঙ্গে হৈ-হৈ করে সে গাছ দিব্যি বেড়ে উঠবে পরের জন্মদিনের আগেই। এই রীতি মেনে চল বাড়ির সবার জন্মদিনে। অভ্যেসটা ছড়িয়ে দাও স্কুলের বন্ধু, পাড়ার বন্ধু- সবার মধ্যে। যে বাড়িতে যতজন সদস্য, সে বাড়ির আশপাশে সারা বছরে বেড়ে উঠবে ততগুলো নতুন চারাগাছ। একবছর পরে দেখবে বাড়ির আশেপাশে সবুজের সংখ্যা কত্ত বেড়ে গেছে! আর গাছ বাড়লে তাদের শিকড়ের টানে মাটি জমাট বেঁধে থাকে, মাটি আরো বেশি জল ধরে রাখতে পারে, বৃষ্টির জল আরও সহজে মাটির গভীরে জমতে পারে, এসব কথা নিশ্চয়ই নতুন করে মনে করিয়ে দিতে হবে না!

জল বাঁচানোর কিছু উপায়

বর্ষাকালে যখন তেড়েফুঁড়ে বৃষ্টি আসবে, তৈরি থেকো। বৃষ্টির জল জমাতে হবে। জানো কি, বেঙ্গালুরু-র ইণ্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (IISc)-র বৈজ্ঞানিক এ. আর. শিবকুমার দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টির জল জমানো এবং তাকে কাজে লাগিয়ে সারা বছরের জলের চাহিদা মেটানোর কাজে ব্যস্ত আছেন, এবং তাঁর পরিকল্পনাকে কাজে লাগিয়ে কর্ণাটক, মেঘালয় প্রভৃতি রাজ্য এবং বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশও উপকৃত হচ্ছে? নানা ছোটখাটো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এই বৈজ্ঞানিক নিজের বাড়িতে শুধুমাত্র বৃষ্টির জলকেই কাজে লাগিয়ে সারা বছরের জলের চাহিদা মেটান।

এতটা পরিকল্পনা করে এক্ষুণি অবশ্য সবার বাড়িতে বৃষ্টির জল ব্যবহার করা যাবে না, তবে বৃষ্টির দিনগুলোতে জলের চাহিদা কিছুটা মেটানোই যায়।

অনেকের বাড়িতেই দেখবে, বাড়ির গা বেয়ে ছাদ থেকে নীচে একটা মোটা পাইপ নেমে এসেছে। এটা হল রেন-পাইপ। বৃষ্টির জল ছাদ থেকে এই পাইপ বেয়ে নেমে নিচে বাগানে বা নর্দমায় গিয়ে পড়ে। এই রেন-পাইপের নিচের খোলা মুখের সামনে যদি একটা বড় ড্রাম রেখে দেওয়া যায়, তবে বৃষ্টির জল ছাদ থেকে নেমে ড্রামটায় জমা হবে। ড্রামের ওপর একটা পাতলা কাপড় ঢেকে রেখো, যাতে আবর্জনা না পড়ে, আর জলের ওপরে অল্প সাদা তেল ঢেলে দিয়ো, তাহলে মশারা ডিম পাড়তে পারবে না। এই জমা হওয়া বৃষ্টির জল দিয়ে এবার তুমি সাইকেল-গাড়ি ধোয়া-মোছা কর, বাসনপত্র ধুতে পারো, এমনকি, মাঠ থেকে খেলে এসে কাদা-মাখা পা-দুটোও ধুয়ে নিতে পারো। তবে হ্যাঁ, এই জল বেশিদিন জমিয়ে রেখো না।

জল বাঁচানোর কিছু উপায়

রাস্তায়, স্টেশনে, স্কুলে- কোথাও যদি দ্যাখো জলের কল খোলা রয়েছে, জল অপচয় হচ্ছে, বন্ধ করার লোক নেই, কোনো দিকে না তাকিয়ে সটান গিয়ে কলটা বন্ধ করে এসো। কে দেখে কী ভাবল, কিচ্ছুটি ভাবার দরকার নেই। স্কুলে তো আমরা সবাই পড়ি জল সঞ্চয় বাড়ানোর কথা, জলের অপচয় রোধ করার কথা। বইয়ে পড়া কথাগুলোকে কাজে করে দেখো, প্রকৃতির ভারসাম্য তো রক্ষা পাবেই, নিজের মনটাকেও দেখবে অনেক তরতাজা লাগছে।

 

ছবিঃ পিক্সাবে

তথ্যসূত্রঃ বিভিন্ন ওয়েবসাইট

ভূতপূর্ব ইঞ্জিনিয়ার, বর্তমানে সাংসারিক কাজের মাঝে সু্যোগ পেলেই পড়া আর লেখার আনন্দে মাতার চেষ্টায় থাকেন। সেই গোত্রের মানুষ, যারা আর কিছু না পেলে ঠোঙ্গায় ছাপা খবরও মন দিয়ে পড়েন। সারাদিনের অনেকটা সময় কাটে মেয়ে কুটুনের সঙ্গে; তার কীর্তিকলাপ মাঝেমধ্যে লিখতে চেষ্টা করেন;বর্তমানে ধানবাদের বাসিন্দা।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা