সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
জীববৈচিত্র্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা

পৃথিবীর প্রতিটি অংশে ছড়িয়ে রয়েছে অগণিত প্রাণ। উদ্ভিদ, প্রাণী, সব মিলিয়ে যে বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবজগৎ, একেকটি বাস্তুতন্ত্রের অঙ্গ হিসেবে তারা প্রত্যেকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় দায়িত্বটুকু পালন করে চলেছে নিজেদের অজান্তেই। পরিবেশ এবং জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষায় এই জীববৈচিত্র্যের অবদান অনস্বীকার্য। ঠিক একইভাবে, যদি এই জীববৈচিত্র্যের কিছু অংশও কোনওভাবে বিনষ্ট হয়, তবে তার ক্ষতিকর প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়ে পরিবেশের ওপর।

নিচের কয়েকটি উদাহরণ থেকে ব্যাপারটা কিছুটা স্পষ্ট হতে পারে।

  • দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রিত হয় আমাজন রেনফরেস্ট দ্বারা। সুতরাং, আমাজন অরণ্যের বাস্তুতন্ত্রের পরিমাণে কোনও পরিবর্তন এলে তা এই বৃষ্টিপাতকে ব্যাহত করবে।
  • রাশিয়া, কানাডা, স্ক্যাণ্ডিনেভিয়ার Boreal forest পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ কার্বন সঞ্চয়। এই অরণ্য ধ্বংস হলে এই সঞ্চিত কার্বন পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে অনায়াসেই জলবায়ুর বড়সড় ক্ষতি করতে পারে।
  • পিটল্যাণ্ড, বা জলা ঘাসজমি প্রচুর পরিমাণে কার্বন সঞ্চয় করে রাখতে পারে। এই ধরনের পিটল্যাণ্ড ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৩% অংশ অধিকার করে আছে। কাজেই এসব অঞ্চল ধ্বংস হলে যে পরিমাণে কার্বন পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে তা জলবায়ুর ভারসাম্য নষ্ট করার পক্ষে যথেষ্ট।
  • পিটল্যাণ্ড, বা জলা ঘাসজমি প্রচুর পরিমাণে কার্বন সঞ্চয় করে রাখতে পারে। এই ধরনের পিটল্যাণ্ড ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৩% অংশ অধিকার করে আছে। কাজেই এসব অঞ্চল ধ্বংস হলে যে পরিমাণে কার্বন পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে তা জলবায়ুর ভারসাম্য নষ্ট করার পক্ষে যথেষ্ট।
জীববৈচিত্র্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা
ছবি এঁকেছেঃ আগ্নিক দাশগুপ্ত, সপ্তম শ্রেণি, স্প্রিংডেল হাই স্কুল, কল্যাণী

যে কার্বন জীবজগতের অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেই কার্বনই পরিবেশে মুক্ত অবস্থায় বেশি পরিমাণে থাকলে জীবজগতের সমূহ বিপদ। কার্বনের পরিমাণে ভারসাম্য রাখার জন্য প্রকৃতির নিয়মেই বিভিন্ন অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র কাজ করে চলেছে। একটি বাস্তুতন্ত্রের যেকোনও একটি উপাদানও যদি প্রয়োজনের চেয়ে কমে যায়, তাহলে সবক’টি বাস্তুতন্ত্রেরই ভারসাম্য নষ্ট হবে। কারণ, পরিবেশ এবং জীবজগতের প্রতিটি উপাদান একে অন্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। জীববৈচিত্র্যের অন্তর্গত একটি উদ্ভিদ বা প্রাণিকেও যদি আমরা ধ্বংস করে ফেলি, তার ক্ষতিকর প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়বে জলবায়ু এবং পরিবেশের ওপর।

এ তো গেল সম্ভাব্য বিপদ নিয়ে আলোচনা। এবার দেখা যাক, কীভাবে আমরা এই ক্ষতি এড়াতে পারি।

গত তিরিশ বছরে যা যা জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে তাদের অন্তত এক তৃতীয়াংশকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা, এবং এখন যা আছে তাকে রক্ষা করা, এই দুটি কাজ এখন আমাদের কাছে আবশ্যিক।
গবেষকদের মতে, কোনও একটি বাস্তু্তন্ত্রের অবদান থেকে সম্পূর্ণ উপকার পেতে হলে সেই বাস্তুতন্ত্রের অন্তত পঞ্চাশ শতাংশকে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন। অক্সিজেন উৎপাদন থেকে শুরু করে কার্বন সঞ্চয়, সবকিছুই এর অন্তর্গত। রেনফরেস্ট জাতীয় কোনও ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্রের ক্ষেত্রে পরিমাণটা পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি।

গত কয়েক দশকে এটুকু বোঝা গেছে, কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের অন্তত অর্ধেক অংশ সংরক্ষণ করলেই কেবল চলবে না, সমগ্র পৃথিবীর ক্ষেত্রেই এইভাবে সংরক্ষণ প্রয়োজন। জীবজগতকে রক্ষা করে চলেছে প্রকৃতির যে নিজস্ব সুরক্ষা বলয়, তাকে, এবং জলবায়ুর ভারসাম্যকে সঠিকভাবে রক্ষা করতে হলে ভূপৃষ্ঠ এবং সমুদ্রের অন্তত পঞ্চাশ শতাংশ অংশকে শিল্পায়ন এবং নগরায়নের হাত থেকে মুক্ত রাখতে হবে।

জীববৈচিত্র্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা
ছবি এঁকেছেঃ সৌম্যদীপ সরকার, সপ্তম শ্রেণি, গার্ডেন হাই স্কুল, কলকাতা

তবে, আমরা এই মুহূর্তে প্রায় খাদের ধারে দাঁড়িয়ে রয়েছি। প্রতিদিন একটু একটু করে মুক্তাঞ্চল হারিয়ে যাচ্ছে, প্রাকৃতিক ভারসাম্যের অভাব বাড়ছে, এবং সঙ্কটের মুখে এসে দাঁড়াচ্ছে সভ্যতা এবং জীবজগতের ভবিষ্যৎ।

তাই, যতটুকু প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য এখনও রয়েছে, তাকে রক্ষা করা, এবং যা হারিয়ে গেছে তাকে পুনরুজ্জীবিত করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। গত তিরিশ বছরে যা হারিয়ে গেছে তার তিরিশ শতাংশও যদি আমরা পুনরুদ্ধার করতে পারি, তবে জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কার্বন সঞ্চয়ের অন্তত সাঁইত্রিশ শতাংশ আমরা করে ফেলতে পারব।

প্রাকৃতিক সম্পদের বিনাশের সবচেয়ে বড় কারণ হল শিল্পায়ন এবং নগরায়নের জন্য আইনসম্মতভাবে বনভূমি ধ্বংস করা। প্রতিটি দেশের প্রতি অঞ্চলের ছোট ছোট এলাকায় প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধারের কাজ আমাদের করে যেতে হবে। অর্থাৎ, কেবল পরিবেশবিদরাই নন, প্রত্যেকটি মানুষকে তার আশেপাশের অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে, তার শহরের, তার এলাকার প্রকৃতিকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিতে হবে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের, এবং অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দায়িত্ব নিতে হবে, যাতে প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ বিনাশ না ঘটে, এবং জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।

পরিবেশ এবং জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষায় জীববৈচিত্র্যের ভূমিকা কতখানি, এবং জীববৈচিত্র্যের একটি উপাদান নষ্ট হলে তা কীভাবে পরিবেশের ক্ষতি করে, তা খালি চোখে একদিনে বোঝা যায় না। কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে বাড়তে যখন সেটা সবার সামনে স্পষ্ট হয়, ততদিনে ক্ষতিকর প্রভাব প্রায় চিরস্থায়ী হয়ে যায়, আর কিছু করার থাকে না। কাজেই, সময় থাকতে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আমরা প্রত্যেকে যদি জীববৈচিত্র্য এবং প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষার জন্য নিজেদের ন্যূনতম দায়িত্বটুকু পালন করতে পারি, তাহলেই বেশ কিছুটা ভাল কাজ সম্ভব হবে।

ভূতপূর্ব ইঞ্জিনিয়ার, বর্তমানে সাংসারিক কাজের মাঝে সু্যোগ পেলেই পড়া আর লেখার আনন্দে মাতার চেষ্টায় থাকেন। সেই গোত্রের মানুষ, যারা আর কিছু না পেলে ঠোঙ্গায় ছাপা খবরও মন দিয়ে পড়েন। সারাদিনের অনেকটা সময় কাটে মেয়ে কুটুনের সঙ্গে; তার কীর্তিকলাপ মাঝেমধ্যে লিখতে চেষ্টা করেন;বর্তমানে ধানবাদের বাসিন্দা।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা