সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
এই উইকেন্ডে মহাকাশে

অন্তু আজ বেশ আগেই ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে। হাতে কর গুনে, ক্যালেন্ডার দেখে দেখে দিন তো কম গোনেনি। কাল রাতে তো প্রথমে ঘুমই আসছিল না উত্তেজনায়, সকালের কথা ভাবতে ভাবতেই কখন ঘুম এসে গিয়েছিল জানে না। তবে আজ সকালে কিছু করে নেওয়ার জন্যই মাকে বলে দিতে হয়নি, নিজেই মোটামুটি নিজের সব কাজ করে নিয়ে বাবা-মায়ের আগে রেডি হয়ে গিয়েছে।

তিন ঘন্টার পথ, সকালে ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি করে গেলে আরেকটু কম সময় লাগে। প্রায় এক বছর বাড়িতেই কাটানোর পর এই প্রথম একটু দূরে যাওয়া, মানে ঠিক ঘুরতে নয়, মামাবাড়িতে যাওয়া, সবার সঙ্গে একটু হইহুল্লোড়। তবে এসবের থেকেও বড় আনন্দের কারণ হচ্ছে আজ অন্তুর সঙ্গে ওর বড়মামার দেখা হবে। বড়মামা ওর ফেভারিট, সবসময় কত গল্প বলে, তবে তারচেয়েও বেশি বলে দুনিয়ায় ঘটে চলা আজব, অদ্ভুত কাহিনী। ও প্রতিবার শোনে আর ঠায় হাঁ করে গিলতে থাকে প্রতিটা শব্দ। তবে ও নিজেও এখন এসবের খোঁজ রাখে পড়াশোনা, খেলাধুলোর পাশাপাশি।

মামাবাড়িতে ঢুকে সবার কোল ঘুরে, আদর খেয়ে যখন বড়মামার ঘরে এলো, তখন মামা ল্যাপটপে কী যেন দেখছে। ও একটু ঝুঁকে দেখলো একটি উড়ন্ত বিমানের পেছন থেকে জ্বালানি তীব্র গতিবেগে বেরিয়ে যাচ্ছে ঠিক রকেটের মতো। যত গতিবেগে জ্বালানি বের হচ্ছে, তত গতিবেগেই প্লেনটা উপরের দিকে উঠছে। অন্তুও মামার পাশে বসে একমনে দেখতে থাকলো। তবে অন্তু কোনও শব্দ শুনতে পাচ্ছে না, হেডফোনে শুধু মামাই শুনতে পাচ্ছে। ও একটু ইতস্তত করে মামাকে ডাকলো, মামা পুরো চমকে গেল ওকে দেখে। ভিডিও থামিয়ে ওকে কোলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, "কখন এলি?"
"এই তো একটু আগে। ভিডিওটা আবার চালাও না, দেখি। কী দেখছিলে?"
বড়মামা হাসলো। "আচ্ছা, আজ তাহলে এটা দিয়েই শুরু হোক। আজকাল নাকি তুইও নানা ব্যাপারের খুব খোঁজখবর রাখছিস। দেখবো আমায় চমকে দিতে পারিস কিনা।"
অন্তু হেসে বললো, "এটা কী দেখছিলে বলো না।"
"স্পেস ট্যুরিজম শুনেছিস?"
"ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন(International Space Station) ঘুরে আসার ব্যাপারটা? রাশিয়া ২০০০ সালের দিকে এরকম প্রোগ্রাম করেছিল, তবে অনেক বছর তেমন কিছু শোনা যায়নি। কিন্তু এখন মনে হয় আবার স্পেসেক্স(SpaceX) চেষ্টা করছে, তাই না? ওরা নাকি একসঙ্গে কুড়িজনকে মহাকাশে পাঠাবে।"
বড়মামা হাততালি দিয়ে বললো, "আমি অভিভূত। দারুণ, একদম ঠিক পথে আছিস। তবে তুই আমায় আরও চমকে দেওয়ার আগে আমিও কিছু বলে নিই। তারপর দুজনে একসঙ্গে দেখবো যেটা দেখছিলাম। বস এখানে।"
দুজনে বিছানায় বেশ আরাম করে বসলো। অন্তু আর বড়মামা দুজনের চোখই চকচক করছে। দুজনেই সমান উত্তেজিত।
বড়মামা শুরু করলো, "পুরোটাই ঠিক বলেছিস, তবে এখন স্পেস ট্যুরিজম মানেই শুধু আর ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন বা আইএসএস-এ(ISS) যাওয়া নয়। "
"তাহলে?"
"আচ্ছা বল তো আইএসএস পৃথিবী থেকে কতদূরে রয়েছে?"
"এটা জানি। চারশো আট কিলোমিটার। প্রায় দুশো পঞ্চাশ মাইল।"
"সাব্বাশ। আইএসএস-এ যেতে সময় লাগে প্রায় ছয় ঘন্টা। আর ফিরতেও ওরকম। তাই আইএসএস -এ যারা যায় তারা তিন-চারদিন বা সপ্তাহব্যাপী প্রোগ্রাম করে। এবার এতটা সময় না কাটিয়ে, অতদূরে না গিয়ে, একটুতেই সন্তুষ্টির পথ বেছে নিয়েছে কিছু প্রাইভেট কোম্পানি। তুলনামূলকভাবে অনেকটা কম পথ ট্র্যাভেল করছে এরা, কিন্তু মহাকাশ ঘুরে আসার, মহাকাশ থেকে পৃথিবী এবং মহাশূন্যকে কাছ থেকে দেখার সমস্ত সুযোগ করে দিচ্ছে। এদের মধ্যে এখন সবচেয়ে আগে রয়েছে ভার্জিন গ্যালাক্টিক(Virgin Galactic)। ২০০৪ সালে স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন মহাকাশ সফরের জন্য ভার্জিন গ্যালাক্টিক সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তখনই তিনি বলেছিলেন, 'চাঁদের মাটিতে মানুষ পা রাখার পর আমিও ছোটবেলা থেকে মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। আর আমি মনে করি, মহাকাশে যাওয়ার অধিকার সবার রয়েছে।'

রিচার্ড ব্র্যানসনের পরিকল্পনাই ছিল স্পেস ট্যুরিজম বা মহাকাশ পর্যটনকে বাণিজ্যিকরূপে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের মধ্যে আনা। নাহলে মহাকাশে তো চিরকাল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এই লক্ষ্য পূরণ করার জন্য ভার্জিন গ্যালাক্টিকের ইঞ্জিনিয়ার এবং নানা কর্মীরা দীর্ঘ সতেরো বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে গিয়েছেন। আর তারই ফসল হলো আজকের ভিএসএস ইউনিটি(VSS Unity) বা ইউনিটি-২২(Unity-22)।

মাদারশিপ ভিএমএস ইভ(VMS Eve) এর মাঝে ভার্জিন গ্যালাক্টিক ভিএসএস ইউনিটি(VSS Unity) বা ইউনিটি-২২(Unity-22)
মাদারশিপ ভিএমএস ইভ(VMS Eve) এর মাঝে ভার্জিন গ্যালাক্টিক ভিএসএস ইউনিটি(VSS Unity) বা ইউনিটি-২২(Unity-22)

অন্তু মামাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো, "ভিএসএস ইউনিটি কী?"
মামা উত্তর দিলো, "ভিএসএস ইউনিটি হলো ভার্জিন গ্যালাক্টিকের মহাকাশযান যা গত ১১ই জুলাই দুইজন পাইলটসহ ছয়জন মহাকাশচারীকে নিয়ে মহাকাশ থেকে ঘুরে এলো। পুরো জার্নির সরাসরি সম্প্রচার হয়েছিল বিভিন্ন সোশ্যাল সাইটে যেমন ইউটিউব, ফেসবুক, ট্যুইটার ইত্যাদি। ভিএসএস ইউনিটি আমেরিকার নিউ মেক্সিকোর মরুশহর 'ট্রুথ অর কনসিকোয়েন্সেস'-এর (Truth or Consequences) খানিকটা দূরে মরুভূমি থেকে যাত্রা শুরু করেছিল , তবে খারাপ আবহাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের দেড় ঘন্টা পরে। এর এক মাস আগে শুধু পাইলটরা ভার্জিন গ্যালাক্টিকের মহাকাশযান নিয়ে একটি টেস্ট ফ্লাইট সফলভাবে সম্পন্ন করেছিলেন। আর ১১ই জুলাই ভিএসএস ইউনিটি বিমানের সব সিটে মহাকাশচারীদের বসিয়ে নিয়ে ঘুরে এলো। পাইলট হিসাবে ছিলেন ডেভ ম্যাকে এবং মাইক মাসুচ্চি। যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন স্বয়ং সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড ব্র্যানসন (০০১), দুই নম্বর (০০২) যাত্রী ছিলেন কেবিন লিড এবং টেস্ট ডিরেক্টর বেথ মোজেস, তিন নম্বর (০০৩) যাত্রী ছিলেন কেবিনের যাবতীয় খুঁটিনাটি পরীক্ষক কলিন বেনেট এবং চার নম্বর (০০৪) যাত্রী ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার শিরীষা বান্দলা। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪০ নাগাদ 'ভিএমএস ইভ'(VMS Eve) নামের একটি 'মাদারশিপ' মহাকাশযান ভিএসএস ইউনিটিকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ি দেয়। প্রায় ৫০ হাজার ফুট পর্যন্ত উঠে যেটি ইউনিটি-২২কে মুক্ত করে দেয়। মাদারশিপ থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়ার পরই এটি ঘন্টায় প্রায় ৩৭০০ কিলোমিটার গতিবেগে ৮৫ কিলোমিটার বা ৫৩ মাইল উচ্চতায় ওঠে। এটাই তুই দেখছিলি ল্যাপটপ স্ক্রিনে যখন আমি পজ করলাম ভিডিও। হয়তো জানিস যে ৫০ মাইলের উপরের উচ্চতাকেই মহাকাশ বলা হয়। আকাশের সীমানা বলে যদি কিছু থাকে সেটি ছাড়িয়ে মহাকাশের সীমানায় ঢুকে যায় মহাকাশযানটি। এই সময় মহাকাশযানে উপস্থিত চারজন মহাকাশচারী পাইলটের থেকে সিট বেল্ট খোলার অনুমতি পেয়ে গিয়েছিলেন। তখন প্রায় পাঁচ মিনিট ভারশূন্য অবস্থায় ছিলেন ওঁরা, নানাভাবে ডিগবাজি খেয়ে, প্রায় উড়তে উড়তে জানালা দিয়ে মহাকাশের বিন্দু বিন্দু কিছু তারা দেখে, পৃথিবীর পৃষ্ঠতল দেখে বেশ আনন্দ করে নিয়েছিলেন এটুকু সময়। ইউনিটি-২২ এর সতেরটি জানালা থেকে বাইরে দেখা যায়। কী অসাধারণ, অসামান্য অভিজ্ঞতা হয়েছিল ওঁদের তা ভাবা যায় না। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ফেরার তোড়জোড় শুরু হয়, পাইলটের নির্দেশ অনুযায়ী সবাইকে সিটে ফিরতে হয়। সব মিলিয়ে নব্বই মিনিটের ছিল এই মহাকাশ সফর।"

ইউনিটি-২২ এর ক্র্যু; ডান দিক থেকে দ্বিতীয় ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিরীষা বান্দলা
ইউনিটি-২২ এর ক্র্যু

অন্তু এবার একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, "মাটি থেকে উড়ে মহাকাশে গিয়ে জিরো গ্র্যাভিটিতে সবাই ঘুরপাক খেয়ে আবার নব্বই মিনিটের মধ্যে পৃথিবীতে ফিরে এলো?"
মামা হাসলো, " হ্যাঁ রে, এই যাওয়া আসার ভিডিওটাই দেখছিলাম। পুরোটাই রেকর্ড করেছে। বলতে পারিস ভার্জিন গ্যালাক্টিকের মহাকাশচারীদের নিয়ে টেস্ট ফ্লাইট সম্পূর্ণভাবে সফল। আজ যেমন আমরা প্লেনে করে দেশ-বিদেশের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যাই, তেমনই সহজ, সরল হবে এই যাত্রা, সেটাই আশা করা হচ্ছে। এই বছরই আরো দুবার মহাকাশে যাত্রী পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে ভার্জিন গ্যালাক্টিকের। আগামী বছরের শুরু থেকেই পুরোপুরি বাণিজ্যিকভাবে চালু হবে এই মহাকাশ সফর। তারপর বছরে ৪০০ বার মহাকাশ সফরের পরিকল্পনা রয়েছে এই সংস্থার। ইতিমধ্যেই ৬০০টি টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে আগামী বছরগুলোর সফরগুলির জন্য। টিকিটের দাম প্রায় দুই থেকে আড়াই লক্ষ মার্কিন ডলার, এই টেস্ট ফ্লাইট সফল হওয়ার পর চাহিদা বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে, তখন ভাড়া প্রায় পাঁচ লক্ষ মার্কিন ডলার হয়ে যেতে পারে। "

" টিকিটের দাম তো অনেক! সাধারণ মানুষ নাগাল পাবে?"
মামা উত্তর দিলো, " হ্যাঁ, টিকিটের দাম অনেক। তবে আশা করা যায় আগামী দিনে দাম কমবে। একসময় যখন টেলিভিশন, কম্পিউটার, ল্যান্ডফোন, মোবাইল ফোন বাজারে এসেছিল তখন সেগুলোও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ছিল, তারপর ধীরে ধীরে দাম কমতে কমতে এখন অনেকেরই সাধ্যের মধ্যে চলে এসেছে। এরোপ্লেনের টিকিটের দামও একসময় খুব বেশি ছিল, আর এখন অনেকেই পারে ফ্লাইটে যাওয়া আসা করতে। এই মহাকাশ সফরও তাই হবে হয়তো কোনওদিন। যখন আরো অনেক সংস্থা এই সফর চালু করবে, কম্পিটিশন বাড়বে, অভিজ্ঞতা বাড়বে তখন টিকিটের দাম কমবে। ইতিমধ্যে কিন্তু আরো দুটো কোম্পানি এই রেসে আছে। "


"স্পেসেক্স আর?"
মামা হাসলো, "ই-কমার্স সাইট আমাজনের কর্ণধার জেফ বেজোসের সংস্থা 'ব্লু অরিজিন'(Blue Origin)। 'ব্লু অরিজিন' ভার্জিন গ্যালাক্টিকের মতো শুধু বাণিজ্যিকভাবে মহাকাশ সফর করবে না, মহাকাশে থেকে কাজ করা, দেশের মিলিটারি এবং সরকারি কাজে কতটা সাহায্য করা যায় তাও দেখবে ভবিষ্যতে। ২০২১ এর ২০শে জুলাই 'ব্লু অরিজিন' সংস্থার মহাকাশযান 'নিউ শেপার্ড'(New Shepard) পাড়ি দেবে মহাকাশের প্রান্তে। শব্দের গতিবেগের তিনগুণ বেগে 'নিউ শেপার্ড' এগিয়ে যাবে মহাকাশের দিকে। ভিএসএস ইউনিটির মতো এটি বিমানের মতো দেখতে নয়, বরং এটি রকেটের মতো দেখতে।"

 'ব্লু অরিজিন'-এর মহাকাশযান 'নিউ শেফার্ড'
'ব্লু অরিজিন'-এর মহাকাশযান 'নিউ শেপার্ড'

"রকেটের উপরে একটি স্বয়ংক্রিয় ক্যাপসুল থাকবে যেটিতে ছয়জন যাত্রী থাকতে পারবে। আমেরিকার টেক্সাসের(Texas) পশ্চিম প্রান্তে 'ভ্যান হর্ন'(Van Horn) টাউন থেকে এর যাত্রা শুরু হবে। ওড়ার তিন মিনিটের মধ্যে ক্যাপসুলটি রকেটের থেকে আলাদা হয়ে যাবে এবং প্রায় ৬২ মাইল বা ১০০ কিলোমিটার উচ্চতা বরাবর ভাসমান থাকবে। মানে এটি ইউনিটি-২২ এর থেকে প্রায় ১৫-১৬ কিলোমিটার উঁচুতে ভাসমান অবস্থায় থাকবে। রকেটটি আলাদা হওয়ার পর তখনই পৃথিবীতে ফিরে আসবে। ক্যাপসুলটি পৃথিবীতে ফিরবে প্যারাশুটের মাধ্যমে। যাত্রা শুরুর মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে ক্যাপসুলটির আবার পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা। ২০শে জুলাই নিউ শেপার্ড যাত্রা করবে জেফ বেজোস, তাঁর ভাই মার্ক, ৮২ বছর বয়সী প্রাক্তন অভিজ্ঞ পাইলট, উড়ান প্রশিক্ষক ওয়ালি ফাঙ্ককে নিয়ে।"

"১৯৬১ সালে নাসা প্রথম ১৩ জন মহিলাদের নিয়ে মহাকাশে যাওয়ার প্রোগ্রাম করেছিল। ওয়ালি ফাঙ্ক ছিলেন এঁদের মধ্যে অন্যতম। এই ১৩ জন মহিলাদেরই প্রচন্ড কঠিন মানসিক এবং শারীরিক ট্রেনিংয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল মহাকাশচারী হওয়ার জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত প্রোগ্রামটিই বাতিল হয়ে গিয়েছিল। আর এই ১৩ জন মহিলা যাঁদের একসঙ্গে "মার্কারি ১৩(Mercury 13)" বলা হয় এঁরা কোনওদিন আর মহাকাশে যেতে পারেননি। এরপর ওয়ালি ফাঙ্ক অনেক কীর্তি গড়েছিলেন। যেমন তিনিই হয়েছিলেন আমেরিকার ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট সেফটি বোর্ড (NTSB)-এর প্রথম মহিলা এয়ার সেফটি ইন্সপেক্টর, হয়েছিলেন ফেডারাল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন(FAA)-এর প্রথম মহিলা ইন্সপেক্টর। তিনি তাঁর কর্মজীবনে প্রায় ৩০০০ মানুষকে উড়ানের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তাঁর এই দীর্ঘ কর্মজীবনকে সম্মান জানাতে, তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ইচ্ছেপূরণ করতে, তাঁর মহাকাশ যাওয়ার দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটাতে জেফ বেজোস তাঁকে ব্লু অরিজিনের প্রথম মহাকাশযাত্রায় অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ করেছেন।"

বাঁদিকে ওয়ালি ফাঙ্ক; ডান দিকে অলিবার ডিমন
বাঁদিকে ওয়ালি ফাঙ্ক; ডান দিকে অলিভার ডিমন

"ওয়ালি ফাঙ্ক ভেবেছিলেন তিনি হয়তো আর কোনওদিন মহাকাশে যেতেই পারবেন না। এমনকী মহাকাশে যাওয়ার জন্য তিনি ২ লক্ষ ডলার দিয়ে ভার্জিন গ্যালাক্টিকের মহাকাশ সফরের আগাম টিকিটও কেটেছিলেন। আর এবার ব্লু অরিজিনের যাত্রার মাধ্যমে ৮২ বছর বয়সী ওয়ালি ফাঙ্কই হবেন পৃথিবীর ইতিহাসে ওল্ডেস্ট বা প্রবীণতম মহাকাশচারী। এই নতুন রকম মহাকাশ পর্যটনে যেমন ভার্জিন গ্যালাক্টিক প্রথম সংস্থা হিসাবে পাড়ি দিলো মহাকাশে তেমনই ব্লু অরিজিন হবে প্রথম সংস্থা যা একজন পেয়িং প্যাসেঞ্জারকে নিয়ে পাড়ি দেবে। ব্লু অরিজিন তাদের এই প্রথম মহাকাশ সফরের একটি সিটের টিকিট কেনার জন্য নিলামের আয়োজন করেছিল যেখানে একজন ব্যক্তি ২ কোটি ৮০ লক্ষ মার্কিন ডলার দিয়ে এই টিকিট কিনেছিলেন। কিন্তু সর্বশেষ খবর অনুযায়ী তিনি যাচ্ছেন না। তাঁর বদলে আরেকজন বিডার বা দরদাতার ১৮ বছর বয়সী ছেলে অলিভার ডিমন যাবে। ব্লু অরিজিনের পক্ষ থেকে এই বিডের অঙ্ক ঘোষণা করা হয়নি, তবে মনে করা হচ্ছে আগের জনের অঙ্কের থেকে কম। আর অলিভার এই মহাকাশ সফরের অংশ হওয়ায় একটি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে। অলিভারই হবে পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ মহাকাশচারী। দারুণ না?"

এতটা বলে মামা থামলো। যেন অন্তুকে সময় দিলো কিছুটা ভাবার, কিছুটা নিজের মনেই রোমাঞ্চিত হওয়ার। সবটা শুনে অন্তুর শুধু মনে হলো, সবকিছুই সম্ভব, যা যা ভাবা যায় তাই তাই করে দেখানো যায়। কেউ না কেউ ঠিকই পারছে। ও ভীষণ ভীষণ খুশিও হয়ে গেলো এই মিশনে একজন ভারতীয়র নাম জড়িয়ে রয়েছে বলে। অন্তু জিজ্ঞেস করলো মামাকে, "শিরীষা বান্দলা তাহলে তৃতীয় ভারতীয় মহিলা মহাকাশচারী হয়ে গেলেন না?"
"হ্যাঁ রে, ঠিক তাই। কল্পনা চাওলা এবং সুনীতা উইলিয়ামসের ঠিক পরেই। অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন শিরীষা বান্দলা, যদিও আমেরিকার হিউস্টনে বড় হয়েছেন। তাঁর পরিবারের অনেকেই এখনও গুন্টুরেই থাকেন, তাঁদের পরিবারের মেয়ের এই কীর্তি নিয়ে তাঁরাও আজ ভীষণ আপ্লুত, খুবই গর্বের বিষয় যে এটা সবাই বুঝেছে। ৩৪ বছরের শিরীষার প্রধান কাজ ছিল এই টেস্ট ফ্লাইটের গবেষণার অভিজ্ঞতার উপর কাজ করা।"

অন্তু যেন নিজেকেই কল্পনায় দেখলো। যেন মহাকাশে গিয়ে পৃথিবীকে দেখতে পাচ্ছে। মহাকাশের অসীম শূন্যতা, নিস্তব্ধতা টের পাচ্ছে। ভারশূন্য বা জিরো গ্র্যাভিটি অবস্থায় থাকতে পারছে। সবটা সম্ভব হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ পেরিয়েছে কিছুজন। রিচার্ড ব্র্যানসন বা শুধু তাঁর কিছু সহকর্মী ১১ই জুলাই মহাকাশে যাননি, পৃথিবীর সবাইকেও যেন নিয়ে গিয়েছিলেন একসঙ্গে। এই দেড় ঘন্টার সফরের মাধ্যমে তাঁরা অনেক অনেক সাধারণ মানুষকে মহাকাশ ভ্রমণের স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করেছেন।

বড়মামা অন্তুর ঘোর কাটিয়ে বলে উঠলো, "চল এবার ভিএসএস ইউনিটির পুরো জার্নিটা দেখে নিই, দারুণ রোমাঞ্চকর, ইউটিউবেই পুরোটা আছে।"

মামা-ভাগ্নে দুজনেই মগ্ন হয়ে বসে পড়লো ল্যাপটপের সামনে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা