সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
অতিমারির আবহে, মন রাখো শান্ত

"বড় দিদি দাদারা স্কুলে যাচ্ছে, আমি কবে স্কুলে যাবো মা ?"

"স্কুলের মাঠে আবার কবে খেলব সব বন্ধুরা মিলে মা ?"

"এই অনলাইন ক্লাসে আর আমার মন বসছে না মা…"

"বাবাও তো আর অনলাইনে অফিসের কাজ করে না, এখন তো রোজ অফিস যাচ্ছে … "

"আমাকে কবে আবার বাইরে খেলতে যেতে দেবে মা ?"

আমার ছোট্ট বন্ধুরা,

আজকাল কি প্রায়ই এই ধরনের কথা বলো তোমরা? মনটা কি বাইরে বেরনোর জন্য খুব ছটফট করছে অনেককে বাইরে যেতে দেখে? মাঝে মাঝে কি একটু বিরক্তিও লাগছে? আজ তাহলে এটাই হোক আমাদের আলোচনার বিষয় যে কিভাবে মন শান্ত করবে এই পরিস্থিতিতে আর নিজেদের কিভাবে গঠনমূলক কাজে ব্যস্ত রাখবে।

এই প্রসঙ্গে প্রথমেই তোমাদের যে কথাটা বলবো, সেটা হলো এই পরিস্থিতিকে ভালোভাবে বুঝতে হবে। বিগত প্রায় এক বছরে তোমরা সবাই এটা ভালো করেই বুঝে গেছো যে ‘করোনা’ নামক শত্রুর থেকে বাঁচার জন্য মাস্ক পরা, প্রয়োজনীয় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, নিয়ম করে সাবান জল দিয়ে হাত ধোওয়া বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করা ইত্যাদি হলো আমাদের রক্ষা-কবচ। আসলে তোমরা সবাই এই লড়াইয়ের এক-একজন সৈনিক। কিন্ত তোমাদের লড়াই করার ধরনটা একটু আলাদা। কারণ তোমরা তোমাদের শত্রুকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছো না। তাই এই লড়াইতে শত্রুর থেকে নিজেদের আর নিজেদের চারপাশের লোকজনকে বাঁচানোর জন্য তোমাদের এখনও বাড়িতে থাকাটা জরুরী। তার মানে হলো এই যে, আমার সব ছোট্ট সৈনিক বন্ধুরা আসলে বাড়ীতে থেকে নিজেদের এই লড়াই এখনও চালিয়ে যাচ্ছো। সৈনিক কি মাঝ পথে কখনও লড়াই ছেড়ে দেয় অধৈর্য হয়ে আর বিরক্ত হয়ে? নিশ্চয় না। তাই তোমরাও এত তাড়াতাড়ি অধৈর্য আর বিরক্ত হলে চলবে না। মনে থাকবে তো? যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিকে যত ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে পারবে আর বুঝতে শিখবে, তত সহজে সেই কঠিন সময়কে জয় করতে পারবে। যেহেতু তোমরা এখন ছোট, তাই বাড়ীর বড়দের সাহায্য নিতেই হবে যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিকে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করার জন্য আর বোঝার জন্য।

এবার আসি আমাদের এই আলোচনার দ্বিতীয় পর্যায়ে।

আমার ছোট্ট সৈনিক বন্ধুরা কিভাবে বাড়ীতে থেকে নিজেদের মনকে গঠনমূলক কাজে ব্যস্ত রাখবে সেটা নিয়ে এবার একটু আলোচনা করি। এই পরিস্থিতিতে মনকে শান্ত রাখা আর ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনার (positive thinking) মধ্যে নিমজ্জিত রাখা খুব দরকার। আর এই ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনা(positive thinking) আসে ইতিবাচক শক্তি (positive energy) থেকে। বিভিন্ন গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে এই ইতিবাচক শক্তিকে তোমরা নিজেদের মধ্যে সঞ্চারিত করতে পারো। তার জন্য সবার আগে প্রতিদিনের কাজের একটা ছক (daily routine) তৈরী করে নাও। ঠিক যেরকম স্কুলের একটা রুটিন থাকে। বাড়ীতে আছো বলে আলস্য একটু বেশী লাগবে, এটাই স্বাভাবিক। সেইজন্য এই সময়ে নিয়মানুবর্তিতা (discipline) ভীষণ জরুরী।সারাদিন অনলাইন ক্লাসে যা শিখলে সেগুলো নিয়ম করে পুনরায় পাঠ করবে(revision) আর রোজ স্কুল থেকে দেওয়া বাড়ীর কাজ (home work) ঠিক করে করবে; ঠিক আগে যেরকম স্কুল থেকে বাড়ী ফিরে করতে।রোজ পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে (creative activity) নিজেকে ব্যস্ত রাখো; যেমন ধরো, ছবি আঁকা, নাচ, গান, লেখালিখি, হাতের কাজ (handicraft), কোনো বাদ্যযন্ত্র শিখে বাজানো, বাড়ীর বাগানের কাজ বা টবের গাছগুলোর যত্ন নেওয়া, বাড়ীর মধ্যেই বিভিন্ন খেলাধুলা, মা-বাবাকে বাড়ীর টুকটাক কাজে সাহায্য করা, নিজের বই-খাতা, জিনিসপত্র যতটা পারো নিজে গুছিয়ে রাখা ইত্যাদি।আমি কিন্তু সব কিছু একদিনে করতে বলছি না। যেদিন তোমাদের যেগুলো করতে ইচ্ছে করবে, সেদিন সেগুলোই করবে। কিন্তু রোজ কিছু না কিছু গঠনমূলক কাজ করতেই হবে। সব কাজের মধ্যেই একটা সৃজনশীলতা আছে যা মনের মধ্যে একটা নির্মল আনন্দ (pure joy) আর ইতিবাচক শক্তি (positive energy) তৈরী করে।

অতিমারির আবহে, মন রাখো শান্ত

প্রতিদিনের সব কাজ একটা খাতায় লিখে রাখবে তারিখ দিয়ে আর সেই খাতাটা রোজ বাড়ীর বড় কাউকে দেখিয়ে নেবে।তাঁদের বলবে, তাঁরা যেন সেখানে রোজ তাঁদের মতামত লিখে সই করে দেন। বড়দের মতামত নেওয়ার পরে ওই তারিখে নিজের মতামত লিখেও সই করে রাখবে। তুমি নিজের কি কি ভুলত্রুটি বুঝতে পারলে আর সেগুলো কিভাবে সংশোধন করা যায় তা নিয়ে নিজের মতামতও লিখে রাখবে। তারপর একটু একটু করে নিজেকে সংশোধন করবে আর নতুন ভাবে গড়ে তুলবে। একে বলে স্ব-মূল্যায়ন (self-evaluation) আর স্ব-সংশোধন (self-rectification)। যেহেতু তোমরা এখন ছোট, তাই তোমাদের এই মতামতগুলো বাড়ীর বড়দের অবশ্যই দেখিয়ে নেবে রোজ। এইভাবে আস্তে আস্তে নিজেকে রোজ একটু একটু করে তৈরী করো। কিছুদিন পর পর অবশ্যই আগের মন্তব্যগুলো আর পরবর্তী মন্তব্যগুলো দেখে মিলিয়ে নেবে। তাহলে তোমরা বুঝতে পারবে যে ঠিক কত দিনে কী কী নতুন জিনিস শিখলে আর তোমাদের কতটা ব্যক্তিত্বের বিকাশ (personality development) হল। এইভাবে একটা নিয়মানুবর্তিতার অভ্যাস তৈরী করে ফেলতে পারলে আর কখনই কোনও অসুবিধা হবে না আর রোজ বিভিন্ন গঠনমূলক আর সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে নিজেদের মনের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব(positive attitude) তৈরী করতে পারবে।

আজ এই পর্যন্তই থাক। ভালো থেকো, আনন্দে থেকো।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা