খেলাঘরখেলাঘর

ছোট্ট ইডার ফূল গূলি

"হ্যাঁ," বলল সেই ছাত্র, " এর পরের বার তুমি যখন যাবে, খেয়াল রেখ একটু , আর তুমি ওদেরকে দেখতেই পাবে, যদি তুমি জানালা দিয়ে উঁকি মার। আমি আজকে তাই করেছিলাম, আর আমি দেখলাম সোফার ওপরে একটা লম্বা হলুদ লিলি টান্‌টান্‌ হয়ে শুয়ে আছে। সে ছিল রানীর সখী।"

"আচ্ছা, বোটানিকাল বাগান থেকে কি সেখানকার ফুলগুলি এই বল নাচের আসরে যেতে পারে?" জিজ্ঞেস করল ইডা ।" ওখান থেকে পথ তো অনেকটা !"

"হ্যাঁ , হ্যাঁ, " বলল সেই ছাত্র, " ওরা যখনই চায়, তখনই উড়তে পারে। তুমি কি সেই সুন্দর লাল, সাদা আর হলুদ রঙের প্রজাপতিগুলিকে দেখনি, যেগুলিকে ফুলের মত দেখতে? সেগুলি তো একসময়ে ফুলই ছিল। ওরা নিজেদের ডাঁটা ছেড়ে , আর নিজেদের পাতাগুলিকে ছোট ছোট ডানার মত নেড়ে উড়ে গেছে। তারপরে, যদি ওরা লক্ষ্মী হয়ে থাকে, ওদেরকে অনুমতি দেওয়া হয় দিনের বেলা উড়ে বেড়ানোর।ওদের আর চুপ করে ডাঁটার ওপরে বসে থাকতে হয় না, আর এইভাবে একসময়ে ওদের পাতাগুলি সত্যিকারের ডানা হয়ে যায়। তবে হ্যাঁ, এটা হতে পারে, যে বোটানিক্যাল বাগানের ফুলগুলি কোন দিন রাজার প্রাসাদে যায়নি, আর তাই, তারা ওখানে যে সব মজা হয়, সেসবের সম্পর্কে কিছুই জানে না। আমি তোমাকে বলছি তুমি ক করবে, আর ওই যে গাছপালার মাস্টারমশাই, যিনি তোমার পাশের বাড়িতে থাকেন, তিনি একদম অবাক হয়ে যাবেন। তুমি তো ওনাকে ভাল করেই চেন, তাই না? তাহলে শোন, এর পরে যেদিন তুমি ওনার বাগানে যাবে, তুমি যেকোন একটা ফুল কে বলে দেবে যে প্রাসাদে একটা বিরাট বল নাচের আসর বসবে, তাহলে সেই ফুলটা অন্যদেরকেও বলে দেব, আর ওরা সবাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রাসাদে উড়ে চলে যাবে। আর যখন ওই মাস্টারমশাই নিজের বাগানে হাঁটতে যাবেন, তখন একটাও ফুল থাকবে না। ভাব একবার, উনি কিরকম অবাক হয়ে যাবেন !"

"কিন্তু একটা ফুল অন্য ফুলগুলিকে বলবে কি করে? ফুলেরা কি কথা বলতে পারে?"

"না, তা পারে না, " উত্তর দিল ছাত্রটি, " কিন্তু ওরা সঙ্কেত পাঠাতে পারে। তুমি কি দেখনি যখন জোরে বাতাস বয়, তখন ওরা কেমন একে অপরের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ায়, আর নিজেদের সবুজ পাতাগুলি দিয়ে খস্‌খস্‌ শব্দ করে?"

"মাস্টারমশাই কি সঙ্কেতগুলি বুঝতে পারবেন?" জিজ্ঞেস করল ইডা।

"হ্যাঁ, সে উনি বুঝতে পারবেন। উনি একদিন সকালে নিজের বাগানে গেছিলেন, গিয়ে দেখেন একটা কাঁটাওয়ালা বিছুটি একটা সুন্দর লালা কার্নেশন কএ বিরক্ত করছে। সেটা বলছে, "তুমি কি সন্দর, আমার তোমাকে খুব পছন্দ"। কিন্তু মাস্টারমশাইয়ের এই দুষ্টুমি পছন্দ হল না, কিন্তু বিছুটি কান মুলে দিতে গেলেন। তখন বিছুটি, নিজের কাঁটাগুলি দিয়ে, যেগুলি কিনা আসলে তার আঙুল , ওনাকে এত জোরে খোঁচা দিয়েছে, আর ওনার এমন চুলকানি হয়েছে, যে তারপর থেকে উনি আর বিছুটির ধারে কাছে ঘেঁষেন না।"

"ওহ, কি মজার ব্যাপার," হেসে উঠে বলল ইডা।

সোফায় বসেছিলেন একজন মুখ গোমড়া উকিলবাবু, যিনি বাবার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তিনি ছাত্রটিকে মজাদার ছবি কাটতে দেখলেই রেগে গজগজ করতেন। সে হয়ত কাগজ কেটে বানিয়েছে ঝাঁটায় চড়ে উড়ে যাওয়া এক ডাইনিবুড়ি, অথবা, আকাশ থেকে ঝুলে থাকা একটা লোক, আর তিনি দেখলেই রগে গিয়ে বলতেন, "কি করে একটা শিশুর মাথায় এইসব আজগুবি কথা কেউ ঢোকাতে পারে! কি অসম্ভব বাজে কথা সব !!" আজকেও তিনি গজগজ করে বললেন, "কি করে একটা ছোট্ট শিশুর মাথায় এইসব কথা কেউ ঢোকাতে পারে?"

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।