খেলাঘরখেলাঘর

অনেক অনেক দিন আগে, এক ফোঁটা সূর্যের আলো এসে পড়েছিল পৃথিবীর বুকে। সেই আলো থেকে জন্মালো এক জাদু গাছ। সেই গাছে ফুটল এক সূর্যের মত সোনালি ফুল। সেই ফুলের ছিল এক আশ্চর্য ক্ষমতা। সময়ের কাঁটাকে ঘুরিয়ে দিতে পারত সেই ফুল -  যে কোন পুরানো জিনিষ তার ছোঁয়ায় হয়ে উঠত নতুন, যে কোন ক্ষত সেরে যেতে পারত এক নিমেষে, মৃত্যুর মুখ থেকে প্রাণ ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারার ক্ষমতা ছিল সেই ফুলের।

ট্যাঙ্গেল্‌ড্‌


কিন্তু, সেই ফুলটাকে আর কেউ খুঁজে পাওয়ার আগেই, সেটা মাদার গথেল নামে এক দুষ্টু বুড়ির চোখে পড়ে গেল । বুড়ি সেই গাছটাকে একটা চুপড়ি দিয়ে চাপা দিয়ে রাখল। তার চামড়া যখন কুঁচকে বিবর্ন হয়ে যেত, চোখের দৃষ্টি হয়ে যেত ধূসর, কালো চুল হয়ে যেত শনের নুড়ির মত, সে তখন চুপিচুপি সেই ফুলের কাছে এসে গাইত এক ছোট্ট গান। গান শুনে ফুলের থেকে বেরোত সূর্যকিরণের মত জ্যোতি, সেই জ্যোতির স্পর্শে গথেলের কুঁচকানো চামড়া হয়ে যেত মসৃণ, চোখের দৃষ্টি হত উজ্জ্বল, সাদা চুল হয়ে যেত কালো। এক ধাক্কায় গথেলের বয়স কমে অর্ধেক হয়ে যেত। এইভাবে বছরের পর বছর ধরে, মাদার গথেল নিজের বয়স কমিয়ে রেখে রেখে বেঁচে থাকার আনন্দ উপভোগ করছিল।

সেই দেশে রাজত্ব করতেন এক খুব ভাল রাজা আর তাঁর ভালমানুষ রানী। রানী যখন সন্তানসম্ভবা, তখন তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বাঁচার আর কোন আশা রইল না। সৈন্য সামন্তরা ছড়িয়ে পড়ল দেশের আনাচে কানাচে, খুঁজে বার করতে চাইল রানীকে সুস্থ করে তোলার কোন না কোন উপায়। আর তারা একদিন খুঁজে পেল  সেই সোনালি ফুল। সেই গাছ তুলে নিয়ে এল তারা। আর সেই ফুল ভেজানো জল খেয়ে সুস্থ হলে রানী। জন্ম দিলেন সূর্যের সোনালি কিরণের মত সোনালি চুলের এক ফুটফুটে রাজকন্যার। রাজা আর রানী নতুন রাজকন্যার জন্মদিন উপলক্ষ্যে ওড়ালেন রঙিন ফানুস। সারা দেশ আনন্দে মেতে উঠল।

ট্যাঙ্গেল্‌ড্‌


কিন্তু এই আনন্দ বেশিদিন সইল না। এক রাতে, আবার বয়স বেড়ে যাওয়া মাদার গথেল রাজপ্রাসাদে ঢুকল। সে রাজকন্যার সামনে গিয়ে ফিস ফিস করে গাইল সেই গান - আর রাজকন্যার চুল থেকে ঠিকরে পড়ল সোনালি দ্যুতি। সেই দেখে গথেল রাজকন্যার চুল একটুখানি কেটে নিল। কিন্তু যাঃ - কাটা মাত্র সেই চুল রঙ পালটে হয়ে গেল খয়েরি ! তার আর কোন যাদুশক্তি রইল না। মাদার গথেল বুঝতে পারল, এক টুকরো চুলের গোছা দিয়ে তার কাজ হবে না। তাই সে রাজকন্যাকে চুরি করে নিয়ে পালিয়ে গেল। রাজ্যের থেকে অনেক দূরে, গভীর জঙ্গলের মধ্যে, একটা অনেক উঁচু গম্বুজের মধ্যে সে তাকে লুকিয়ে রাখল। সে লুকানো গম্বুজের ভেতরে থেকে বড় হতে থাকল রাজকন্যা -নাম তার রাপুনজেল্‌ । তার একমাত্র সঙ্গী পাস্‌কাল নামের এক গিরগিটি।

ট্যাঙ্গেল্‌ড্‌

ট্যাঙ্গেল্‌ড্‌

আরে, এত অবধি পড়ে তুমি নিশ্চয় বলবে - এত তো রাপুনজেল্‌ এর গল্প, এটাতো আমি জানি। হ্যাঁ , এটা আমাদের সেই খুব চেনা গল্পটাই, কিন্তু একটু অন্য রকম ভাবে বলা হয়েছে। পুরোনো রাপুনজেলের গল্পে এক রাজপুত্র আসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য; কিন্তু এই গল্পে - রাপুনজেলের দেখা হয় এক দুঃসাহসী চোরের সাথে।

ট্যাঙ্গেল্‌ড্‌

সেই চোরের সাহায্য নিয়ে রাপুনজেল গম্বুজ থেকে বেরিয়ে দেখতে যায় প্রতিবছর তার জন্মদিনে দূর আকাশে  ভেসে ওঠা রঙিন ফানুসগুলিকে। পথে আসে নানারকমের বিপদ।

ট্যাঙ্গেল্‌ড্‌

ট্যাঙ্গেল্‌ড্‌

কিন্ত চোর ইউজিন আর রাজপ্রাসাদের ঘোড়া ম্যাক্সিমাসের সাহায্যে রাপুনজেল সব বিপদ কাটিয়ে বেরিয়ে আসে। আর সে খুঁজে পায় তার আসল বাবা মাকেও।

এই ছবির নাম 'ট্যাঙ্গেল্‌ড্‌' । রাপুনজেলের এই গল্পটিকে নতুন ভাবে আমাদের কাছে নিয়ে এসেছেন ওয়ল্ট ডিজনি পিকচার্স। ওয়ল্ট ডিজনি অ্যানিমেশন স্টুডিওর এটা পঞ্চাশতম অ্যানিমেটেড ছবি।

ট্যাঙ্গেল্‌ড্‌


তাহলে আর কি? সময় নষ্ট না করে যোগাড় করে ফেল এই ছবির একটা ডিভিডি। আর গরমের ছুটিতে দুপুরবেলায় রাপুনজেল আর তার সোনালি চুলের সাথে তুমিও হারিয়ে যাও রূপকথার দুনিয়ায়।


 

 

মহাশ্বেতা রায়
কলকাতা

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।