খেলাঘরখেলাঘর

ডেইসি ফুল

এখন শোন! ওই দূর গ্রামে, বড় রাস্তার ধারে, ছিল একটা খামার বাড়ি; হয়ত তুমি ঐ পথ দিয়ে যেতে সেটা দেখেছ। সেখানে চারিধারে কাঠের বেড়া দেওয়া একটা ছোট্ট ফুলের বাগান ছিল। কাছেই ছিল একটা নালা, তার টাটকা সবুজ পাড়ে ফুটেছিল একটা ছোট্ট ডেইসি; সূর্যদেব তার ওপরে ততটাই উষ্ণতা আর আলো ছড়িয়ে দিচ্ছি্লেন, যতটা তিনি দিচ্ছিলেন বাগানের দারুণ ফুলগুলির ওপরে, আর তার ফলে সে খুব সুন্দরভাবে বেড়ে উঠেছিল। এক সকালে সে প্রায় ফুটেই গেল, আর তার ছোট্ট তুষারধবল পাপড়ি গুলি মাঝখানের হলুদ কেন্দ্রটির চারিপাশে ছড়িয়ে গেল, সূর্যের কিরণের মত। তাকে  ঘাসের মধ্যে কেউ দেখতে পাচ্ছে না বলে তার কোন মাথাব্যথা ছিল না, সে যে একটা তুচ্ছ ছোট্ট ফুল, সে নিয়েও ছিল না; বরং, সে খুব খুশি ছিল, আর সূর্যের দিকে মুখ ফিরিয়ে, ওপরের দিকে তাকিয়ে উঁচু আকাশে ভেসে বেড়ানো লার্কের গান শুনছিল।

ছোট্ট ডেইসিটা এমন খুশি ছিল যেন এক দারুণ ছুটি পেয়েছে। কিন্তু দিনটা ছিল মোটে সোমবার। সব ছেলেমেয়েরা ইশকুলে গেহিল, আর যখন তারা তাদের আসনে বসে পড়া মুখস্থ করছিল, সে তখন তার পাতলা সবুজ ডাঁটির ওপর বসে নিজের আশপাশ দেখে আর সূর্যদেবের থেকে শিখছিল ঈশ্বর কত দয়ালু, আর এই ভেবে খুশি হচ্ছিল যে লার্কের মিষ্টি গান যেন ঠিক তার মনের কথাই বলছে। বেশ খানিকটা শ্রদ্ধার সাথে ডেইসিটা সেই পাখির দিকে তাকাল, যে কিন উড়তে এবং গান গাইছে পারে। কিন্তু সে হিংসা করল না।"আমি দেখতে পাচ্ছি আর শুনতে পাচ্ছি" সে ভাবল, " সূর্য আমার ওপর আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে, আর বনের গাছগুলি আমাকে আদর করছে। আমি কত সুখী!"

পাশে বাগানে ফুটেছিল অনেক বড় ,আকর্ষনীয় ফুল, আর, খুবই অবাক ভাবে, যাদের যত কম সুগন্ধ ছিল, তারা তত বেশি অহঙ্কারী ছিল। পিওনিগুলি নিজেদেরকে ফুলিয়ে উঁচু করে রাখত, যাতে তাদেরকে গোলাপদের থেকে দেখতে বড় লাগে, কিন্তু চেহারাই সবকিছু নয়! টিউলিপদের ছিল সবথেকে সুন্দর রঙ, আর তারা সেটা জানত, কারণ তারা সোজা মোমবারতির মত দাঁড়িয়ে ছিল, যাতে সবাই তাদের ভালভাবে দেখতে পায়। অহঙ্কারের চোটে তারা ছোট্ট ডেইজিটাকে দেখতেই পেল না, যে তাদের দিকে তাকিয়ে ভাবছিল, "কি সুন্দর আর রঙিন ওরা! আমি ঠিক জানি ওই সুন্দর পাখিটা নিচে নেমে এসে ওদের সাথে কথা বলবে। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, যে আমি এত কাছে দাঁড়িয়ে আছি আর এত সব সুন্দর জিনিষ দেখতে পাচ্ছি।" আর যখন ডেইজি এইসব ভাবছিল, তখন লার্কটা সোজা নেমে এসে বলল "টুইট" -কিন্তু পিওনি বা টিউলিপদের কাছে নয়, -বরং, ছোট্ট ডেইজিটার পাশে ঘাসের মধ্যে।সে এত খুশি হল যে সে বুঝতেই পারল না কি ভাববে। ছোট্ট পাখিটা তার চারিপাশে লাফিয়ে লাফিয়ে ঘুরতে লাগল আর গাইতে লাগল ,"  ঘাসগুলি কি সুন্দর, আর কি সুন্দর একটা ছোট্ট ফুল তার সোনার হৃদয় আর রূপোর পোষাকে সেজে এখানে ফুটে আছে।" ডেইজির মাঝখানের হলুদ বলয়টি সত্যি সোনার মত দেখাচ্ছিল, আর তার ছোট্ট সাদা পাপড়ি গুলি রূপোর মত চকচক করছিল।

ডেইজি যে কি খুশি হল! কারোর ধারণাতেই নেই। পাখিটা তাকে ঠোঁট দিয়ে চুমু খেল, তার কাছে গান গাইল, তারপরে আকাশে উড়ে গেল। বেশ অনেক্ষণ পরে ডেইজি যেন তার হুঁশ ফিরে পেল। বেশ খানিকটা লজ্জা পেয়ে, কিন্তু মনে মনে খুশি হয়ে, সে বাগানের মধ্যে অন্য ফুলগুলির দিকে তাকাল; ওরা নিশ্চয় তার আনন্দ দেখেছে, দেখেছে কিভাবে সে সম্মানিত হল; ওরা তার আনন্দ দেখেছে; কিন্তু টিউলিপগুলি আরো যেন শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল, তাদের মুখগুলি সব ছুঁচোলো আর লাল, কারণ তারা খুব বিরক্ত হয়েছিল। পিওনিগুলি মুখ গোমড়া করে রইল, ওরা যে কথা বলতে পারে না তাতে এক বিষয়ে ভালই হল, নাহলে ওরা নিশ্চয় ডেইজিকে বেশ খানিকটা জ্ঞান দিয়ে দিত। ছোট্ট ফুলটা খুব ভাল করেই দেখতে পেল যে ওরা খুব অস্বস্তিতে রয়েছে, আর ওদের জন্য তার সত্যি খুব করুণা হল।

একটু পরেই একটা মেয়ে বাগানে এল, হাতে নিয়ে একটা বড়, ধারালো ছুরি। সে টিউলিপগুলির কাছে গেল আর সেগুলিকে কাটতে শুরু করল, একের পর এক। "ওহ!" ডেইজি দীর্ঘশ্বাস ফেলল, "কি ভয়ানক; ওরা সব শেষ হয়ে গেল।"

মেয়েটা টিউলিপগুলিকে তুলে নিয়ে চলে গেল। ডেইজি এই ভেবে খুশি হল যে সে বাইরে আছে, আর সে একটা ছোট্ট ফুল। সূর্য ডুবে গেলে সে তার পাপড়ি মুড়ে ফেলল, আর ঘুমিয়ে পড়ল, আর সারা রাত ধরে সূর্য আর সেই ছোট্ট পাখিটার স্বপ্ন দেখল।

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।