খেলাঘরখেলাঘর

স্ট্যানলি আর বন্ধুরা
স্ট্যানলি আর তার বন্ধুরা

তুমি কি স্ট্যানলিকে চেন? হয়ত তোমার ক্লাসেই পড়ে স্ট্যানলি। বা হয়ত তোমার স্কুলে, অন্য ক্লাসে, বা অন্য সেক্‌শনে। যদি না চেন তাহলে বলি -
স্ট্যানলি হল এক ছোট্ট ছেলে। সে স্কুলের বন্ধুদের মজার মজার গল্প বলে আসর জমিয়ে রাখে। সে ইংলিশ শিক্ষিকা রোসি মিসের জন্মদিনে নিজের লেখা কবিতা বলে তাক লাগিয়ে দেয়। বিজ্ঞানের প্রজেক্টে সে নানারকমের ফেলে দেওয়া জিনিষ আর লোহালক্করের টুকরো জুটিয়ে লাইটহাউস বানিয়ে সবাইকে চমকে দেয়। সেই লাইটহাউসের ধারের জলে ভাসতে থাকে সত্যিকারের রঙিন মাছ। যদিও এই প্রজেক্ট দেখে বিজ্ঞান শিক্ষিকা মিস আইয়ার মোটেও খুশি হন না।

রোসি মিস
রোসি মিস আর স্ট্যানলি

স্ট্যানলি রোজ সবার আগে স্কুলে আসে। স্কুলে এসে হোম ওয়ার্ক করে। স্ট্যানলি টিফিন আনেনা। টিফিনের সময়ে  মাঝে মাঝে ওর বন্ধুরা টিফিন ওর সাথে ভাগ করে খায়। কিন্তু নিশ্চিন্তে টিফিন খাওয়া কি আর কপালে আছে? এই সময়ে চলে আসেন হিন্দি মাস্টারমশাই বাবুভাই ভার্মা, যাকে ছেলেরা আড়ালে ডাকে "খড়ুস্‌" বলে। ভার্মা স্যার নিজে তো ছেলেদের টিফিন থেকে ভাগ বসানই, তার ওপরে তিনি স্ট্যানলিকে বকুনি দেন, নিজের টিফিন না এনে অন্যদের টিফিনে ভাগ বসাচ্ছে বলে ! কি অন্যায়!

বাবুভাই
লোভী বাবুভাই স্যার

খ্রিসমাসের পরে স্কুলে বেশি করে ক্লাস হবে ঠিক হয়। তার জন্য ছেলেদের বলা হয় বাড়ি থেকে দুটো করে টিফিন নিয়ে আসতে। ক্লাসে সবথেকে বড় টিফিনের ডাব্বা নিয়ে আসে অমন্‌ মেহেরা। গোলগাল অমনের  সবার সাথে টিফিন ভাগ করে খেতে আপত্তি নেই। কিন্তু সেই টিফিনের দিকে যে চোখ পড়ে গেছে ভার্মা স্যারের! ব্রেকের সময়ে ছেলেদের খুঁজতে এসে ভার্মা স্যার দেখেন সব খাবার শেষ! তিনি খুব রেগে যান, এবং সবাইকে ছেড়ে স্ট্যানলিকেই বকেন সবথেকে বেশি। দুঃখে, অপমানে, স্ট্যানলি পরের দিন থেকে বন্ধুদের বলে সে বাড়ি যাচ্ছে  মায়ের তৈরি হাতে গরম খাবার খেতে। কিন্তু দুইদিনেই তার এই চালাকি ধরে ফেলে তার বন্ধু অভিষেক। অভিষেক যে স্ট্যানলিকে দেখে ফেলেছে ব্রেকের সময়ে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করতে আর ক্লাসে শুধু জল খেতে।

বন্ধুদের চাপাচাপিতে স্ট্যানলি জানায়, তার বাবা আর মা দুজনেই শহরের বাইরে গেছেন, তাই রান্না করে দেওয়ার কেউ নেই।  কিন্তু তাতে কি? অমনের অত বড় ডাব্বাটা আর তাহলে কি কাজে লাগল?কিন্তু ভার্মা স্যার? তাঁর কথা ভাবতে বয়েই গেছে ছেলেদের।  তাই ফন্দী এঁটে সবাই মিলে আবার টিফিন ভাগ করে খায়, কিন্তু ক্লাসঘরে বসে নয়। একেকদিন স্কুলের এক এক প্রান্তে। আর তাদের হন্যে হয়ে খুঁজে চলেন লোভী ভার্মা স্যার। কয়েকদিন পরে তিনি তাদের ধরেও ফেলেন। মিথ্যা অহঙ্কারে আর অপমানে, ভার্মা স্যার তাদের প্রচুর বকাবকি করেন। আর স্ট্যানলিকে বলেন, সে যদি নিজের টিফিন না নিয়ে আসে, তাহলে তার স্কুলে আসা বন্ধ!

স্ট্যানলি স্কুলে আসা বন্ধ করে। তার বন্ধুদের মন খুব খারাপ। ওদিকে এক বিশাল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাছাই করা ছাত্রদের পাঠানোর চিঠি আসে স্কুলে। স্ট্যানলির বন্ধুরা জানে, এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য সেরা বাছাই হল স্ট্যানলি। কিন্তু তাকে পাচ্ছে কোথায়?

স্ট্যানলি কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিল। নেচে গেয়ে মাতিয়ে দিয়েছিল দর্শকদের।  আর হ্যাঁ, সে একদিন স্কুলে এসে হাজির হয়েছিল নানারকমের সুস্বাদু খাবার ভরা বিশাল এক ডাব্বা নিয়ে। তুমি হয়ত ভাবছ, ভার্মা স্যার যখন বললেন টিফিন না আনলে স্ট্যানলিকে স্কুলে আসতে দেবেন না, তখন স্ট্যানলি বাড়ি গিয়ে বড়দের বলল না কেন সেই কথা? বাবা- মা'কে ফোন করে কেন জানাল না? স্ট্যানলিকে হটাত করে টিফিন বানিয়ে দিল কে? স্ট্যানলির মা? স্ট্যানলি যখন অনুষ্ঠানে নাচ গান করছিল, তখন তার বাবা-মা কি সেই অনুষ্ঠান দেখে হাততালি দিয়েছিলেন? - সেই গল্প থাক। নাহয় নাই বা বললাম এখন।

সেই না বলা গল্পটা জানতে হলে, শেষ অবধি দেখতে হবে অমোল গুপ্তে পরিচালিত ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া হিন্দি ছায়াছবি 'স্ট্যানলি কা ডাব্বা'। এই ছবিতে স্ট্যানলির ভূমিকায় ছোট্ট ছেলে পার্থ আর রোসি মিসের ভূমিকায় দিব্যা দত্ত'র অভিনয় মন কাড়বে। আর হ্যাংলা বাবুভাই স্যারের ভূমিকায় স্বয়ং অমোল গুপ্তেকে দেখে সত্যি সত্যি রাগে চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছা করবে -"খড়ুস্‌ !" সুযোগ করে অবশ্যই দেখার চেষ্টা কর 'স্ট্যানলি কা ডাব্বা'। স্ট্যানলিকে, অমন্‌ , অভিষেক আর ওদের অন্যান্য বন্ধুদের সাথে আলাপ করতে খারাপ লাগবে না, দেখ।


মহাশ্বেতা রায়
পাটুলি, কলকাতা

ছবিঃ
স্ট্যানলি কা ডাব্বা

 

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।