সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

ব্রাজিলে রমরমিয়ে চলছে বিশ্বকাপ ফুটবলের সেরার শিরোপা জিতে নেওয়ার লড়াই। পছন্দের সব দল, প্রিয় সব খেলোয়াড়দের খেলা দেখার জন্য সারা রাত জেগে থাকতেও আপত্তি নেই কারো- তাতে যদি পরদিন স্কুলে কিংবা অফিসে ব-অ-ড় ব-অ-ড় সব হাই ওঠে তো উঠুক, চোখ ঢুলে আসে তো আসুক। বিভিন্ন খবরের কাগজে, পত্র-পত্রিকায়, টিভি চ্যানেলে শুধু খেলাই দেখতে পাচ্ছি না, তার বাইরে ব্রাজিল দেশটার মানুষ জন, তার শিল্প -সংস্কৃতির সাথেও পরিচিত হচ্ছি আমরা। ব্যাপারটা মন্দ নয়, তাই না?

বিশ্বকাপ ফুটবলের রোজকার বিভিন্ন ম্যাচগুলিতে দেখা যাচ্ছে নানারকমের দারুণ ব্যাপারস্যাপার। অসাধারণ সব গোল হচ্ছে, অভাবনীয় সব হার বা জিত। এসবের খবর তো তুমি সবার কাছেই পাবে। কিন্তু বিশ্বকাপ ঘিরে যে সব খবর গুলো আমাদের মন আলাদা করে ছুঁয়ে যাচ্ছে, সেগুলি একেবারে অন্য ধরণের। দেশ-বিদেশের ফটোগ্রাফারদের ক্যামেরায় ধরা পড়ছে সেইসব টুকরো ছবি, যা আমাদের বার বার করে মনে করিয়ে দিচ্ছে, জেতা-হারা-লড়াইয়ের বাইরে আমাদের আসল পরিচয় লুকিয়ে আছে একজন ভাল মানুষ হওয়ার মধ্যে। বিশ্বকাপের হাজারো ফটোগ্রাফের মধ্যে থেকে তাই এই দুটি ছবি আমাদের সবার মন ভাল করে দিয়েছে।

প্রতিটা ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে দেখেছ নিশ্চয়, দুই দলের খেলোয়াড়দের সাথে করে মাঠে নিয়ে আসে ছোট্ট ছোট্ট ছেলেরা (অনেক খেলাতে মেয়েরাও আসে)। তাদের বলা হয় প্লেয়ার এসকর্ট। অস্ট্রেলিয়ার ফুটবল তারকা মার্ক ব্রেসিয়ানোর এসকর্ট ছিল একটি ছোট্ট ছেলে, যে ক্রাচের সাহায্যে হাঁটে। মাঠে দাঁড়িয়ে থাকার সময়ে তার জুতোর ফিতে আলগা হয়ে যায়। আর তারপরে কি হল? অস্ট্রেলিয়ার এই জনপ্রিয় ফুটবল হিরো সত্যি সত্যি হিরোর মত কাজ করলেন। একজন খাঁটি মানুষের মত কাজ করলেন।

এইছবিতে দেখতে পাচ্ছি অস্ট্রেলিয়ার ফুটবলার মার্ক ব্রেসিয়ানো মাঠের মধ্যেই বসে পড়ে তাঁর পাশে ক্রাচে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট ছেলেটির জুতোর ফিতে বেঁধে দিচ্ছেন।

এতো গেল একজন হিরোর কথা। আর একসাথে অনেক হিরোদের দেখতে পেলে কেমন হয়? তাও দেখা গেল ব্রাজিলে। আইভরি কোস্টের সাথে তাদের প্রথম ম্যাচে হেরে গেল জাপান। তারপরে কি হল? তুমি যদি ভেবে থাক, তারা সাঙ্ঘাতিক রেগে গিয়ে স্টেডিয়ামের চেয়ার ভেঙে ফেলল, রেলিং মুচড়ে দিল (যেমন অনেক দেশেই হয়ে থাকে, মাঝেমধ্যে আমাদের নিজেদের দেশেও দেখা যায়)- তাহলে তুমি ভুল ভেবেছ। ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে তারা সবাই স্টেডিয়ামের নিজেদের দিকের অংশটা পরিষ্কার করার কাজে হাত লাগাল। তাই দেখে মাঠের অন্যদিকের দর্শকেরা তো হাঁ !

জাপানে এইধরণের নিয়ম স্বাভাবিক। তারা খেলা দেখে সবসময়েই নিজেদের স্টেডিয়াম নিজেরা পরিষ্কার করে।আর ব্রাজিলেও এই ম্যাচ দেখার সময়ে তারা সাতে করে আলাদা ময়লা তোলার জন্য প্যাকেট বা বিন ব্যাগস নিয়ে গেছিল। জাপানি সমর্থকদের এহেন আচরণ সারা দুনিয়াকে আরেকবার করে ভাবতে শেখাচ্ছে, কিভাবে ছোট্ট ছোট্ট কাজগুলোর মধ্যে দিয়েই ভাল মানুষ হিসাবে আমরা আলাদা করে নিজেদের পরিচয় তৈরি করতে পারি।

ফুটবল নিয়ে হইচইয়ের মধ্যে আরেকটা খুব ভাল খবর আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে কয়েকদিন আগে। মনে আছে নিশ্চয়, ২০১৩ এর ডিসেম্বর মাসে বিশ্বসেরা ফর্মূলা ওয়ান রেসিং ড্রাইভার মাইকেল শ্যুমাখার সুইজারল্যান্ডে স্কি করতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন, এবং কোমায় চলে যান। গত ১৬ই জুন, তাঁর জ্ঞান ফিরে এসেছে। যদিও চিকিৎসকেরা বলছেন শ্যুমাখার হয়ত আর কোনদিন সোজা হয়ে বসতে পারবেন না, বা হুইল চেয়ার ছাড়া নড়াচড়া করতে পারবেন না। এই খবর যদিও আমাদের মন খারাপ করে দিচ্ছে, কিন্তু তাও সারা পৃথিবীর শুভেচ্ছা যে থাকবে এই মানুষটির সাথে,সে তো সবারই জানা।

খেলার দুনিয়ার খুচরো খবরের এই কিস্তি শেষ করব একেবারে ঘরের কাছের একটা সংবাদ সবার সাথে ভাগ করে নিয়ে। গত ১লা জুন, মেদিনিপুরের কাঁথির ছোট্ট মেয়ে সৌগতা জানা এবছর ইংল্যান্ডের লন্ডনের লোগান হলে ‘ইন্টারন্যাশন্যাল যোগা স্পোর্টস ফেডারেশন’ আয়োজিত ‘বিশ্ব যোগাসন প্রতিযোগিতা ২০১৪’-এর অনুর্ধ্ব ১৭ বিভাগ (বালিকা) প্রথম হয়েছে। কাঁথির সৌগতা শুধু পশ্চিমবঙ্গের নয়, সারা দেশের মধ্যে প্রথম মেয়ে যে অনুর্ধ ১৭ বিভাগে প্রথম হয়েছে। এ সত্যিই গর্ব করার মত একটা খবর। সৌগতাকে ইচ্ছামতীর তরফ থেকে জানাই অনেক অভিনন্দন।

ছবি সৌজন্যঃ
আনন্দবাজার
দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট
হাফিংটনপোস্ট
এমশ্যুমাখার

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা