খেলাঘরখেলাঘর

দুই ব্যাং

অনেকদিন আগে জাপানে দুটো ব্যাং থাকত - একজন বাস করত  সমুদ্রের তীরে ওসাকা শহরের কাছে  একটা গর্তে, আর আরেকজন থাকত কিয়োটো শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা একটা ছোট্ট পরিষ্কার জলের নালার মধ্যে।তারা একে অপরের থেকে এত দূরে থাকত, যে তারা কোনদিন একে অপরের কথা শোনেইনি। কিন্তু মজার ব্যাপার এই যে, তারা দুইজনে একই সময়ে ভাবল যে দুনিয়াটা একটু ঘুরে দেখা উচিত; আর তাই কিয়োটোর ব্যাং ভাবল ওসাকা বেড়াতে যাবে, আর ওসাকার ব্যাং ঠিক করল, কিয়োটোতে গিয়ে সম্রাটের প্রাসাদ দেখে আসবে।

তাই বসন্তের এক সুন্দর সকালে, তারা দুজনেই  কিয়োটো থেকে ওসাকা যাওয়ার পথ ধরে যাত্রা শুরু করল - একজন এক দিক থেকে আর অন্যজন অন্য দিক থেকে। তারা দুজনেই বেড়াতে যাওয়ার সম্পর্কে খুব কিছু জানত না, তাই তাদের ধারণা ছিল না যাত্রাটা কত কষ্টকর হবে; আর দুই শহরের মাঝামাঝি জায়গায় একটা পর্বত ছিল যেটাকে ডিঙিয়ে অন্যদিকে যেতে হবে। তারা দুজনে অনেক কষ্টে প্রচুর লাফ দিয়ে দিয়ে  সেই পর্বতের মাথায় উঠল, আর উঠে সামনে আরেকজন ব্যাং কে দেখে দুজনেই খুব অবাক হয়ে গেল।

তারা খানিক্ষণ একে অপরের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইল, তারপর একে অপরের সঙ্গে কথা বলা শুরু করল, আর দুজনেই একে অপরকে জানাল তারা বাড়ি থেকে এত দূরে কি করছে।  তারা যখন জানল যে তাদের দুজনেরই উদ্দেশ্য এক - নিজের দেশকে আরেকটু জানা - আর যেহেতু তাদের সেরকম কোন তাড়া ছিল না- তাই তারা  একটা ঠাণ্ডা, স্যাঁতসেঁতে জায়গা খুঁজে নিয়ে হাত পা ছড়িয়ে  বসল, আর ঠিক করল ওরা নিজেদের যাত্রা আবার শুরু করার আগে ভালভাবে বিশ্রাম নিয়ে নেবে।

"আমরা যদি আরেকটু  বড় হতাম, " বলল ওসাকার ব্যাঙ, "তাহলে আমরা এখান থেকেই দুটো শহরকে দেখতে পেতাম, আর বুঝতে পারতাম সত্যিই সেগুলি দেখে আসার মত শহর কিনা।"

"ওহ, এটা তো খুব সহজ ব্যাপার," বলল কিয়োটোর ব্যাঙ," আমাদের দুজনকে, একে অপরকে ধরে রেখে নিজেদের পেছনের পায়ের ওপরে ভর দিয়ে দাঁড়াতে হবে, আর তাহলেই আমরা যে শহরটাতে যাচ্ছি সেটাকে দেখতে পাব।"

এই কথা শুনে বেদম খুশি হয় ওসাকার ব্যাঙ লাফ দিয়ে উঠল। কিয়োটোর ব্যাঙও  উঠে দাঁড়াল। তার বন্ধু তার কাঁধে সামনের পা দুটো রাখল। সেইভাবে তারা দাঁড়াল,  পেছনের পা যতটা সম্ভব টান টান করে, আর সামনের পা দিয়ে একে অপরকে শক্ত করে ধরে রেখে, যাতে তারা পড়ে না যায়। কিয়োটোর ব্যাঙ নিজের নাকটাকে ওসাকার দিকে ঘোরাল, আর ওসাকার ব্যাঙ ঘোরাল কিয়োটোর দিকে। কিন্তু বোকা দুটো  ভুলে গেল যে যখন ওরা উঠে দাঁড়িয়েছে, তখন ওদের বিরাট বিরাট চোখ দুটো তাদের মাথার পেছনের দিকে পড়ে গেছে। তার ফলে, যদিও ওদের নাক দুটো সেইদিকেই আছে যেদিকে ওরা যেতে চায়, ওদের চোখ দুটো কিন্তু সেইদিকেই তাকিয়ে রয়েছে যেদিক থেকে ওরা এসেছে।

" হা ভগবান!" ওসাকার ব্যাঙ চেঁচিয়ে বলল, " কিয়োটো তো একদম ওসাকার মত দেখতে। এইটা দেখার জন্য আর এত দূর যাওয়ার কোন মানে হয়না। আমি বাপু বাড়ি যাব!"

"আমি যদি জানতাম ওসাকা একেবারে কিয়োটোর হুবহু নকল, তাহলে আমি এতটা পথ হেঁটে আসতাম না।" কিয়োটোর ব্যাঙ হতাশ হয়ে বলল, আর বলতে বলতে সে তার বন্ধুর কাঁধ থেকে সামনের পা দুটো সরাতেই, দুজনেই ধপাস্‌ করে ঘাসের ওপর পড়ে গেল। তারপর দুজনে দুজনকে বিদায় জানিয়ে , তারা বাড়ি ফরে চলল, আর জীবনের শেষ দিন অবধি তারা বিশ্বাস করত যে ওসাকা আর কিয়োটো একদম একে অপরের মত দেখতে দুটো শহর, যদিও আদপে মোটেও তা নয়।


জাপানি উপকথা

অনুবাদঃ
মহাশ্বেতা রায়
কলকাতা

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।