খেলাঘরখেলাঘর

কুটুস ও ভিখারি

কুটুস কই রে নীলেশ?কুটুসের মার প্রশ্নে নীলেশ এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে বলে,আমাদের সঙ্গেই তো খেলছিল ও,গেছে হয়ত আশেপাশে,বলে আবার খেলতে লেগে গেল।

কুটুসের মা,কুটুস,কুটুস,ডাকতে ডাকতে আশপাশে বাড়িতে খুঁজতে বের হলেন। স্নানের সময় হয়ে গেল,কোথায় যে গেল ছেলেটা!দিন ভর খেলা,খেলা,আর খেলা-- একটুক্ষণ যদি ঘরে থাকে,মনে মনে কথাগুলি আওড়াতে থাকেন আর খুঁজে বেড়াতে থাকেন ছেলেকে।

এক ঘন্টার মত খোঁজার পর যখন ছেলের দেখা মিল না,মার মনে এবার চিন্তা হতে লাগলো.চয়ন,পাখী,নীলেশ সবাই আশেপাশে কুটুসকে খুঁজতে বের হলো। কেউ বলল,যাবে কোথায়,দেখো,কারো ঘরে চুপ করে বসে হয়ত খেলছে!এমনি হয়, দেখা যায় কারো ঘর থেকে খেলেটেলে বেরিয়ে আসছে কুটুস। কিন্তু দীর্ঘ এক ঘন্টার ওপরেও যখন কুটুসের খোঁজ পাওয়া গেল না,মা,বাবা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এ পাড়া, সে পাড়া,গলি ঘুপচি কোথাও তার খোঁজ পাওয়া গেলো না। কুটুস কোথাও নেই,কুটুসকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না.হন্যে হয়ে সবাই খুঁজে বেড়াচ্ছে, অনেক সময় হয়ে গেছে সে নেই। মা কাঁদতে লাগলেন,বাবা হন্যে হয়ে খুঁজতে লাগলেন.আশপাশের সবাই ভালোবাসে কুটুসকে,ওরা সবাই কোথাও না কোথাও খোঁজায় ব্যস্ত হোয়ে গেলো।কুটুস নেই।এখানে নেই। ওখানে নেই। কুটুস কোথাও নেই। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যে হতে চলল । কুটুসের বাবা রমেনের বন্ধু,এখানকার পুলিশ সুপার.তাঁকেও খবর দেওয়া হয়েছে--সে  মত পুলিশ এসে জিজ্ঞাসাবাদ করে গেছে।ও দিকে বিলহারি গ্রামে বিশু ভিখারী যেখানে থাকত খোঁজ নেওয়া হয়েছে.সকাল থেকে ও নাকি ঘরে নেই.ভিখারী বাইরে বাইরে ঘুরতে পারে--এমন কি এক আধ দিন ঘরে নাও আসতে পারে,কাজেই সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত ঘরে না আসার জন্য কুটুসের হারানোর ব্যাপারে ও জড়িত এটা বলা সম্ভব নয়.পুলিশ খুঁজছে -- আর যেহেতু পুলিশ সুপার রমেনের বন্ধু--খোঁজা খুঁজির দিক থেকে কোনো ঢিল হবে বলে  মনে হয় না।

কুটুসের বাড়িতে কান্না কাটির রোল পড়ে গেলো.বাবা মা দুজনেই কাঁদছেন.পড়শীরা যাঁরা আসছেন--চঞ্চল অস্থির সবার সঙ্গে এত সহজে মিলে মিশে যাওয়া একটা জলজ্যন্ত ছেলের এমনি হটাত হারিয়ে যাওয়ায় চোখে জল রাখতে পারছেন না.

ট্রেন মুম্বাইয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে,বিশু ভিখারী ধোপদুরস্ত হোয়ে বসে আছে ট্রেনের সিটে, পাশে বসে আছে কুটুস।
--আর কতদুর তোমার মুম্বাই?অধৈর্য্য হয়ে বলে ওঠে কুটুস,আমরা কখন ঘরে ফিরব?
এমনি একের পর এক প্রশ্ন করে চলেছে।
--আমাদের ট্রেন অনেক দেরী করে ফেলল,তাই আজ আর আমরা ঘরে ফিরতে পারব না, কাল মুম্বাই ঘুরে দেখবো,আর সন্ধ্যের মধ্যেই ঘরে ফিরে আসবো,কেমন?বিশু ভিখারী অনেক  বুঝিয়ে যাচ্ছে কুটুসকে.শত শত প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে।
বিশুর এখন ভিখারীর বেশ নেই.অন্য সাধারণ লোকের মতই তার বেশভূষা.পা টান টান করে চলার বদলে দিব্বি পা স্বাভাবিক রেখেই চলা ফেরা করছে.আর কুটুসের চেহারা বেশ- বাশ এমন রাখা হয়েছে যে কেউ বলতে পারবে না এক ভিখারী ছেলে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে!

প্রায় রাত দশটার সময় ওরা পৌঁছালো মুম্বাই.তারপর ট্যাক্সিতে এক ঘন্টা ধরে অনেক রাস্তা পার হয়ে সোজা পৌঁছে গেলো বিশু নিজেদের আড্ডায়। কুটুস তখন ঘুমে আচ্ছন্ন,বিশু ওরফে বিশ্বনাথ রাস্তায় ওকে এটা ওটা কিনে খায়িয়েছে.ভোলাবার জন্য তাকে কম অভিনয় করতে হয়নি!তিন মাসের ওপর থাকতে হয়েছে জবলপুরের বিলহারীর মত গ্রামে!কত ছেলে, কত লোকদের সঙ্গে ভাব করতে হয়েছে.অনেক পটিয়ে পাটিয়ে কুটুসকে নিয়ে আসতে পেরেছে। আড্ডা পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছে যখন,তখন পুরোপুরি কাজ তার শেষ।

 

তাপস কিরণ রায় অর্থশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। স্কুলে শিক্ষকতা করেন বেশ কিছু বছর। পরে আয়কর বিভাগে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি মধ্য প্রদেশের জবলপুর শহরে বাস করেন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি করেন। ছোটদের এবং বড়দের জন্য লেখা তাঁর অনেকগুলি বই-ও প্রকাশিত হয়েছে।