খেলাঘরখেলাঘর

           ভূতোর ভূত

নাম ছিল তার ভূতো।নামে যাই মনে হোক না কেন-- আসলে ভূতো ছিল বেশ বুদ্ধিমান।
সে দিন আমি ও খোকন দা রাস্তায় পায়চারী করছিলাম--এমনি সময় ভুতো এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দিলো।কথায় কথায় আমি আমার ভূত দেখার কথা বললাম ওকে।ও ইন্টারেস্ট নিয়ে বলল,‘কোথায় দেখেছিস?’
বললাম,‘ওই তো শ্যামরাই পাড়ার পোড়ো বাড়িটায়’।খোকন দা মাঝখানে বলে উঠলো,‘কে জানে ভূত দেখেছে কি না!ও নাকি ছাগল ভূত দেখেছে ওখানে!’
--‘ছাগল ভূত!’ব্যঙ্গ করার মত টেনে টেনে বলে উঠলো ভূতো,‘মানুষ ভূত হলে হতেও পারে--কিন্তু জীবনে এই তোর মুখেই প্রথম শুনলাম ছাগল ভূত!’খোকনদাও ভূতোর দলে যোগ দিলো--ভূ্তোও সঙ্গে সঙ্গে অবিশ্বাসের হাসি হাসতে লাগলো।
আমার রাগ হল,ওদের দু জনের ওপর রাগ করে চুপ চাপ বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম।
--‘এই দেখো,রেগে গেলি কেন?’খোকনদা আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে বলে উঠলো—‘তুই দু দিনের জন্যে আমাদের বাড়ি এসেছিস,এসব রাগ গোঁসা নিজেদের মধ্যে মানায়?’
ভুতো কাছে এসে খোকনদাকে বলল,‘ও তোমাদের বাড়ি এসেছে নাকি?’
--‘হ্যাঁ,আমার মাসির ছেলে,রানাঘাট থেকে এসেছে।’ভুতো আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,‘তাহলে ওই বাসে এসেছিস বোধ হয়--রানাঘাট টু কালনা ঘাট?’
--‘হ্যাঁ’,সংক্ষিপ্ত জবাব দিলাম।
ভূতো বলল,‘আমিও মামা বাড়ি যাই ওই বাসে--শান্তিপুরে আমার মামার বাড়ি’।
সামান্য সময় তিনজনেই চুপ চাপ হাঁটছিলাম।মাঝখানে ভূতোই বলে উঠলো,‘তবে হ্যাঁ,ওই পোড়ো বাড়িতে ভূত আছে ঠিকই!’ভূতো খোকনদার দিকে তাকিয়ে বলল,‘তুমি তো জানো দাদা,আমাদের বাড়ি কোথায়?’
--‘হ্যাঁ,হ্যাঁ,মানে ওই পোড়ো বাড়ির আশপাশে কোথাও—তাই তো?’খোকনদা বলে ওঠে।
--‘হ্যাঁ,মানে ওই ভাঙ্গাচোরা পোড়ো বাড়ির একটা বাড়ি আগে--ওই বাড়ির ঠিক উল্টো দিকে’,ভূতো কথাগুলি বলে একটু থামল,তারপর আবার শুরু করল,‘দেখো আমি ভূত বিশ্বাস করিনা--তবু তোমার ভাই--নাম যেন কি?’
--‘তপন’,খোকন দা বলে উঠলো।
--‘হ্যাঁ,তপন যখন বলেছে তখন তো ভূত ওকে দেখাতেই হবে’,এবার যেন ভূতোর ঠোঁটের কোণে হাসি ঝিলিক খেলে গেলো।
আমি এবার  কৌতূহলী হয়ে বলে উঠলাম,‘সত্যি ভূত আছে?’
--‘তা জানি না,তবে তোমাদের আমি দেখাবো’,কেমন যেন হেঁয়ালির মত কথাগুলি বলে ওঠে ভূতো!
--‘দেখা তবে,কবে দেখাবি বল?’যেন আমার মুখের প্রশ্নটাই খোকনদা ভূতোকে বলে উঠলো।
ভূতো বললো,‘অমাবস্যা রাতেই দেখা যায়।সে দিন রাত ঘন কালো থাকে।ভূতেরা নিজেদের ছায়া বানিয়ে চলাফেরা করতে পারে।আর বেশী আলোতে ওদের দেখা যায় না--কারণ তখন ভূতেরা আলোর সঙ্গে মিশে থাকে,’কথা কটি বলে ভূতো আমার দিকে তাকিয়ে কেন যেন মুখ টিপে হাসল!
খোকন দা বলল,‘বাবা:,ভূতের সম্বন্ধে তুই তো অনেক কিছু জানিস?’
--‘হ্যাঁ,ওসব জানতে হয়’,বিজ্ঞের মত ভূতো জবাব দিলো।
বাড়ি গিয়ে খোকনদা দেখলাম পঞ্জিকাতে কিছু দেখবার চেষ্টা করছে!আমি ও নিয়ে মাথা ঘামালাম না,সোজা মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,‘মা,অমাবস্যা কবে গো?’
মা আশ্চর্য হলেন,‘বললেন,তুই অমাবস্যার খোঁজ করছিস!ব্যাপার কি বলত?’
--‘এই,এমনি’,বলে সব কথা চেপে গেলাম।
মা বললেন,‘আগামী শনিবার অমাবস্যা থাকবে।’   
খোঁজ নিয়ে খোকন দার কাছে পৌঁছে গেলাম।দেখি খোকনদা তখনও পঞ্জিকা ঘেঁটে চলেছে!
নিজেকে বুদ্ধিমান জাহির করার মত ভাব নিয়ে বলে উঠলাম,‘এই শনিবার অমাবস্যা।’
সঙ্গে সঙ্গে খোকনদা বলে উঠলো,‘তুই কি করে জানলি?’খোকন দা আমার দিকে তাকিয়ে আশ্চর্য হয়ে আমায় প্রশ্ন করে ওঠে।
--‘হ্যাঁ,মার কাছে শুনেছি’,ভণিতায় না গিয়ে বলে ফেলি।
দু দিন পরেই ভূতোর সঙ্গে ওদের বাড়ির সামনেই দেখা হয়ে গেলো।দেখলাম ভূতুড়ে বাড়িটা ওদের বাড়ির সামনের দিকে,ওদের বাড়ি থেকে তাকালে স্পষ্ট ও বাড়ি দেখা যায়!
ভয়ে ভয়ে বলে উঠলাম,‘রাতে তোদের ভয় লাগে না?’
--‘কিসের ভয়?’স্বাভাবিক ভাবে ভূতো বলে উঠলো।
--‘এই শনি বারে অমাবস্যা রে!কখন আসলে তুই ভূত দেখাতে পারবি বল?’খোকন দা ভূতোকে কথাগুলি বলল।ও যেন কিছু একটা চিন্তা করল,তারপর বলল,‘তা রাত দশটার পরে আয়!’
মনে মনে ভয় হচ্ছিল,বাবা:,রাত দশটার পরে এই ভূত বাড়ির পাশে আসতে পারব তো?
খোকনদা বলল,‘ঠিক আছে,আমরা তিনজন আসবো।আমরা দুজন,আর সঙ্গে বন্ধু রবিও থাকবে।আর ভূতো!তুই তো আছিসই।’
ভূতো তাড়াতাড়ি বলে উঠলো,‘না,না,না,আমি থাকতে পারব না,আমার ওই দিন ইমপরটেন্ট কাজ আছে।’
--‘তবে?আমি বলে উঠলাম,তবে আর কি করে ভূত দেখা হবে?’
--‘রাত এগারোটা বাজবে আর দেখবি ভূতেরা এসে যাবে--রাস্তায় দাঁড়িয়ে তোরা দেখতে পাবি’,ভূতো তার কথাগুলি বলে যায়।
--‘রাস্তা থেকেই দেখা যাবে!’খোকনদার আবার প্রশ্ন।
--‘হ্যাঁ,দেখবে পোড়ো বাড়ির দেওয়ালে বড় বড় ভূতের আকৃতি--নড়াচড়া করবে--ফিসফিস করে কথা বলবে,কিন্তু তোমরা কিছু শুনতে পাবে না!’
--‘আচ্ছা!’,হতবাক হয়ে কল্পনা করতে থাকলাম।এখনি যেন গায়ের লোমগুলি খাড়া হয়ে যাচ্ছে!
খোকনদা এবার আমার পিঠে হালকা চাপড় দিয়ে বলে উঠলো,‘তপন তা হলে পোড়ো বাড়ির ছাগল ভূত সত্যি হবেরে--যেটা তুই সে দিন দেখেছিলি!’
--‘তবে?তোমরা তো কিছুতেই আমার কথা বিশ্বাস করতে চাও নি’,আমি যেন নিজের বিশ্বাস ফিরে পাচ্ছিলাম।

তাপস কিরণ রায় অর্থশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। স্কুলে শিক্ষকতা করেন বেশ কিছু বছর। পরে আয়কর বিভাগে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি মধ্য প্রদেশের জবলপুর শহরে বাস করেন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি করেন। ছোটদের এবং বড়দের জন্য লেখা তাঁর অনেকগুলি বই-ও প্রকাশিত হয়েছে।