সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
অ্যানিমেটেড সিরিজঃ কৃষ, ট্রিশ অ্যাণ্ড বাল্টি বয়

 

কৃষ হল এক বুদ্ধিমান বাঁদর, ট্রিশ এক সবজান্তা বেড়াল আর বাল্টিবয় এক সরলসাদা গাধা। এরা তিনজনে হাজির গান গেয়ে আর বাজনা বাজিয়ে  আমাদের নানারকমের গল্প শোনাতে।  কৃষ, ট্রিশ আর বাল্টিবয় আমাদেরকে শোনায় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের লোককথা। সেই যে সব গল্পগুলো অনেক কাল আগে মানুষের মুখে মুখে ফিরত, দিদিমা-ঠাকুমারা রাতের বেলা বলে ঘুম পাড়াতেন নাতি-নাতনিদের- সেইসব লোককথা গুলি। তবে এদের গল্প শোনানোর কায়দাটা বেশ মজার আর অন্যরকমের। ভারতের যেকোনো অঞ্চলের লোককথা শোনানোর এবং সাথে সাথে দেখানোর জন্য, এরা বেছে নেয় সেই অঞ্চলের কোন স্থানীয় ছবি আঁকার এবং গল্প বলার পদ্ধতি। যেমন ধর, বাংলার এর পুরনো লোককথা শোনানোর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে আমাদের অতি পরিচিত পটচিত্র আঁকার ধরণ। আবার বিহারের গল্প বলার সময়ে মধুবনী শৈলীতে আঁকা হয়েছে, রাজস্থানের গল্প বলার সময়ে রাজস্থানী মিনিয়েচার পেন্টিং, অন্ধ্রপ্রদেশের গল্প বলার সময়ে সেখানকার নিজস্বর চামড়ার পুতুলনাচ ( থোলু বোম্মালাতা)-এর পুতুলগুলির ধরনে ছবিগুলি তৈরি করা হয়েছে।

 

অ্যানিমেটেড সিরিজঃ কৃষ, ট্রিশ অ্যাণ্ড বাল্টি বয়

 

কৃষ, ট্রিশ  আর বাল্টিবয় চরিত্র তিনটি কিন্তু থ্রী-ডি মডেলিং করে তৈরি। তাদের কাজকর্মের পটভূমি এবং অন্যান্য চরিত্র, যেমন ইঁদুরছানারা, কিংবা বাদ্যযন্ত্রগুলি সবই একই ভাবে থ্রী-ডি অ্যানিমেশনে তৈরি।  তাই তাদেরকে বেশ চেনা পরিচিত চরিত্র বলেই মনে হয়, ঠিক যেমন আমরা দেখে অভ্যস্ত বিভিন্ন কার্টুন চ্যানেলে কিংবা পূর্ণ দৈর্ঘ্যের অ্যানিমেটেড ছবিতে। তারা কথাও বলে আজকের প্রজন্মের ছোটদের মত - খানিক হিন্দি, খানিক ইংরেজি মিশিয়ে। কিন্তু যখনই তারা গল্প বলতে শুরু করে, সেই গল্পটি দেখানো হয় টু-ডি অ্যানিমেশনের মাধ্যমে। আর এই টু- ডি অ্যানিমেশনে এক একটি গল্পের জন্য একেক রকমের ছবি আঁকার ধরন ব্যবহার করা হয়। এই মিলমিশের ফলে, আমাদের সামনে নতুন করে ফিরে আসছে হারিয়ে যাওয়া যত গল্প আর গল্প বলার ধরন। একথা কে না জানে, আমাদের দেশে বহু প্রাচীন কাল থেকেই ছবি দেখিয়ে গল্প বলার চল ছিল? যেমন রাজস্থানের ফড় পেন্টিং কিংবা বাংলার পট - যেগুলিকে একটু করে খুলে দেখিয়ে গানের মাধ্যমে গল্প বলতেন পুরোহিত কিংবা পটুয়ারা- সেগুলি তো সেযুগের মানুষদের নিজস্ব কমিক বইয়ের মতই ছিল, তাই না?

 

প্রতিটা গল্পের ক্ষেত্রে সঙ্গীত নিয়েও চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। ভারতের যে অঞ্চলের গল্প, ছবির ব্যবহারের মতই সেই সেই অঞ্চলের সঙ্গীতের ছোঁয়া রয়েছে প্রতিটি গল্পে।

 

অ্যানিমেটেড সিরিজঃ কৃষ, ট্রিশ অ্যাণ্ড বাল্টি বয়

 

 গল্পগুলিকেও বলা হয় হিন্দি এবং ইংরেজি মিশিয়ে। আর সেই হিন্দি এবং ইংরেজি উচ্চারণে থাকে আলাদা আলাদা ধরন, যাতে আঞ্চলিক চরিত্রগুলি ভালোভাবে ধরা পড়ে।  মাঝেমধ্যেই  কোনো কোনো চরিত্র অতি পরিচিত হিন্দি ছায়াছবি জগতের বিখ্যাত তারকাদের কথা বলার ধরনে কথা বলে।যেমন এক রাজস্থানী গল্পের নায়ক কথা বলে শাহরুখ খানের মত, কিংবা আরেকটি গল্পে অন্য এক চরিত্র কথা বলে দক্ষিণী সুপারস্টার রজনীকান্তের মত। পুরো ছবির সংলাপ অতি সহজবোধ্য ভাবে তৈরি করা। তাই প্রচলিত হিন্দি এবং ইংরেজিতে না বলে বিশেষ কোনো উচ্চারণভঙ্গীতে বললেও বুঝতে অসুবিধা হয় না। তবে হ্যাঁ, বড়রা কেউ কেউ এখানে বলতে পারেন যে, এইভাবে বিকৃত উচ্চারণ করা দেখিয়ে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের মানুষদের অসম্মানিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেমন, ব্রহ্মরাক্ষসের গল্পে নাপিত , নাপিতানী এবং অন্যান্য চরিত্রেরা যেভাবে হিন্দি এবং ইংরেজি বলে, সেরকম ভাবে বাংলার কোনো মানুষজনই কথা বলেন না; কিংবা এই গল্পটিতে বাংলা উচ্চারণ ও ঠিকঠাক করা হয়নি। কিন্তু এত কিছু সত্বেও, হয়ত এই ছাড়টুকু শিল্পের স্বার্থে আমরা দিতেই পারি। কারণ বলাই বাহুল্য, বিহারী গল্পের অ্যানিমেশন দেখার সময়ে মধুবনী শৈলীতে আঁকা ছবিগুলির সাথে যখন ভোজপুরি কিংবা মৈথিলী ভাষায় সংলাপ শুনি, তখনও যেমন মজা লাগে, তেমনি কেরলের গল্পটি দেখার সময়ে বিশেষ 'দক্ষিণী' উচ্চারণ শুনতে বেশ মজাই লাগে।

 

তবে দুয়েকটা ভুল চোখে পড়ে, যে বিষয়ে নির্মাতাদের আরোও একটু সচেতন হওয়া উচিত ছিল। যেমন বাংলার গল্পে নারী চরিত্রকে অ্যানিমেশনের প্রয়োজনে মাঝেমধ্যেই 'ফ্লিপ' করে ব্যবহার করা হয়েছে। তার ফলে বাঙালি দিশি ভঙ্গীতে পরা শাড়িটি যে একেবারে উল্টে গেল, সেটা আর কেউ খেয়াল করেন নি। এই রকম ভুল না থাকলেই ভালো হত। কিন্তু এইসব একদুটো ভুলকে বাদ দিলে বলা যায়, 'কৃষ, ট্রিশ অ্যাণ্ড বাল্টিবয়' ভারতের অ্যানিমেটেড সিরিজের দুনিয়ায় নিঃসন্দেহে এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ, যেটি প্রচলিত অ্যানিমেশন শৈলীর বাইরে গিয়ে , ভারতীয় স্বাদে-গন্ধে ভরপুর নতুন কিছু পরিবেশন করার চেষ্টা করছে। মূলতঃ চার থেকে দশ বছর বয়সীদের কথা ভেবে তৈরি হলেও, বড়রাও যে দেখে আনন্দ পাবেন, সে কথা নিশ্চিত ভাবে বলাই যেতে পারে।

 

অ্যানিমেটেড সিরিজঃ কৃষ, ট্রিশ অ্যাণ্ড বাল্টি বয়

 

গ্রাফিটি মাল্টিমিডিয়া সংস্থার দ্বারা নির্মিত এই সিরিজটির পরিচালক মুঞ্জল শ্রফ আর তিলক শেট্টি। সিরিজটি টিভিতে কার্টুন নেটওয়ার্কে যে দেখতে পাওয়া যায়, সেটা তো অনেকেই জানো। এ ছাড়াও অনলাইনে নেটফ্লিক্সে দেখতে পাওয়া যায় এই সিরিজ। আর চিল্ড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটির ওয়েবসাইট থেকে কিনতে পাওয়া যেতে পারে ডিভিডি সংকলন। তবে দুঃখের বিষয়, ইউটিউবে এই সিরিজের বিভিন্ন  টুকরো টুকরো অংশ দেখতে পাওয়া গেলেও, পুরো একটা গল্প খুঁজে বার করা বেশ কঠিন ব্যাপার। এই বিষয়ে  নির্মাতারা কিংবা প্রযোজক চিল্ড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটি একটু ভেবে দেখতে পারেন। এত সুন্দর একটা উদ্যোগ, যত বেশি মানুষ দেখতে পাবেন, ততই তো তার সাফল্য।

 

সবার জন্য খুঁজে পেতে একখানা লিঙ্ক দেওয়া গেল ইউটিউব থেকে। এই লিঙ্কে আছে দুটো গল্প। 'বোকা বাঁদর আর চালাক বেড়াল' এবং 'নাপিত ও ব্রহ্মরাক্ষস'।  সুযোগ পেলে চালিয়ে দেখে নাও কেমন করে আমাদের ভারতের বৈচিত্রময় সংস্কৃতির সয়াথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে কৃষ, ট্রিশ আর বাল্টিবয়।

 

 

ছবিঃ বিভিন্ন সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা