সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

অনেকদিন আগে অনেক ফুল, বাচ্চাকাচ্চা আর পাহাড়ে পরিপূর্ণ এক দেশ ছিল। সেই দেশে অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে একজন রোগরোও ছিল। সে থাকত ওই অঞ্চলের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ে থাকত, আর খাওয়া ও ঘুম ছাড়া সেখানে তার করবার কিছুই ছিল না। তবে দাদু ঠাকুমারা তার হিংস্র খিদের গল্প বলত । মানে খিদে কতটা তীব্র হিংস্র হতে পারে এই আর কি। এইরকম খিদে পায় যার তাকে একটা দিনও না খেতে দিয়ে রাখা ঠিক নয়। ওরা বলত এসব ব্যাপারে ভীষণ সাবধানে থাকতে হয় সবাইকে, কেননা সামান্য অসতর্কতাই দারুন বিপদের হতে পারে।

সেই রোগরো  প্রতিদিনকার পুরনো খবরের কাগজ খেয়ে পেট ভরাত। ওর পেট ভরানোর জন্য রোজ ভোরে পাহাড়ের পায়ের কাছে একগাদা খবরের কাগজ বস্তা করে রেখে আসতে হত ।
একদিন সে অঞ্চলে একটা সার্কাসের দল এল। সেখানকার কেউই তাদের শো দেখার সুযোগ হারাতে চাইছিল না। তার ফলে সেরাতে এত দেরী করে তারা ঘুমোতে গেল যে রোগরোর বরাদ্দ খাবার দিতেও ভুলে গেল।
পরদিন ভোরে যখন তাদের ঘুম ভাঙল কানে এল মেঘের গুরু গুরু গর্জন, আর তার চিৎকার- আমার খাবার কই??? কিন্তু সে দেশের বাসিন্দারা এত ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়েছিল যে সেই চিৎকার তাদের কানে পৌঁছলই না।
ব্যাপারটা হল রোগরোদের পেটে যদি একদিন খাবার না পড়ে, মাত্র চব্বিশ ঘন্টা যদি তারা না খেয়ে থাকে তাহলে তাদের সামনে প্রথমবার যে পড়ে তাকেই তারা গিলে খায়।
তো সকালে উঠেই সে যাকে দেখল সে হল স্বয়ং ঊষাকাল। প্লপ! দেখামাত্রই গোটা দিনটাকে এক কামড়ে গিলে ফিলল। কী দারুণ খেতে! সে বলল। তবে পেটের খিদে মেটে নি তাতে। বাকী দিনটা খিদে নিয়েই কাটল তার।
সে সপ্তাহে সোমবার এল না।
সে দেশের লোকেদের ঘুম যখন ভাঙল ততক্ষণে সেদিনটা মঙ্গলবার হয়ে গেছে। - হতেই পারে না! সোমবারের কী হল? লোকজন অবাক হয়ে ভাবতে লাগল। কী ঘটনা ঘটল দেখে ক্লেও ঠাম্মা বলে উঠল- আমি তো তাকে দেখিই নি! এটা তো হবারই ছিল,  আমরা যে রোগরোকে খাবার দিতে ভুলে গেছিলাম!
এক মুহূর্তেই  রাজ্যের খবরের কাগয প্যাক করা হয়ে গেল। তবে সবই জলে গেল। কেননা রোগরোরা যদি একদিনও খাবার না পায় তাহলে খবরের কাগজ খাবারের কথাটাও পুরোপুরি ভুলেই যায়।
নতুন মেনু খেয়ে খুশি হয়ে রোগরো এবার খেতে শুরু করেছিল সপ্তাহের দিনগুলো, কখনও একটা বুধবার, কখনও মঙ্গলবার।
শিক্ষক বললেন- বাচ্চারা এবার শুক্রবারের সমস্যাটা সমাধান করো। উদ্বিগ্ন ছেলেমেয়েরা জিজ্ঞেস করল- কিন্তু রোগরো এবার যদি শুক্রবারটাও খেয়ে নেয় তাহলে কী হবে?
জীবন ধীরে ধীরে জটিল হয়ে উঠেছিল তবে ছোটরা তার সঙ্গে নিজেদের মানিয়েও নিয়েছিল।
বাচ্চারা বলল  - এদ্দিন পর্যন্ত যা হল তাতে তো ভালই হয়েছে। হোম ওয়ার্কও কম পেয়েছি আমরা।
বয়সে একটু বড়রা বলল – কাজের পরিমাণ কম।

একা শুক্রবারটাই খালি আছে। সপ্তাহের শেষে কী করবে ভাবতে ভাবতে লোকজন ঘুমোতে গেল। ঘুম ভাঙতেই দেখে সেদিনটা আবার একটা সোমবার!
    - কী হল রে বাবা!
রোগরো শনিবারের গায়ে একটা বড় কামড় বসিয়েছিল। ওটা খেতে এত ভাল লেগেছিল তার যে রবিবারকেও খেয়ে ফেলেছিল সে। এইভাবে আবিষ্কার করে ফেলেছিল যে সপ্তাহান্তের শনি ও রবিবার দিনগুলো খেতে আরও ভাল, আরো সুস্বাদু।
ভাবল- এখন থেকে সবকটা উৎসবের দিন আমি খেয়ে ফেলব।
আর সে যা খুশি খেতে লাগল।
বাচ্চারা নালিশ করল- আমাদের সবসময় ইস্কুলে যেতে হয়!
বয়সে একটু বড়রা বল – খালি কাজ করতে হয়!
সেদিন বিকেলে ব্যাপারটার সমাধান করার জন্য মোড়ের মাথায় সবাই জমায়েত হল।
একজনই মাত্র খুশি ছিল সেখানে । সে হল ক্লেও দিদিমা। কারণ সারাটাদিন ধরে উপন্যাস পড়তে পেত। কিন্তু বাকীরা খুব রেগে ছিল।
এভাবে সেদিন বিকেলে মোড়ের মাথায় জমায়েত হল তারা।
    - আমরা ওকে আটকে রাখব?
    - ওর দিকে ঝাঁটা মারব?
    - না কি আমরা ম্যাডাম সোলের কাছ থেকে পরামর্শ নেব? – মার্তিন বলল- এ অঞ্চলের সবচেয়ে বয়স্ক তিনি, রোগরোর সম্বন্ধে হয়ত বেশিই জানবেন।
ওরা সবাই সোল দিদিমার বাড়ি গেল। দিদিমার পরনে তখন নাইটগাউন। - কী ব্যাপার? হয়েছে টা কী? – সঙ্গে সঙ্গে ওরা সবাই ঘটনাগুলো বলল ওঁকে।
এক মুহূর্ত চিন্তা করলেন দোন্যিয়া সোল। তারপর বললেন- আমি জানি কী করতে হবে!
    - কী কী কী? – সমস্বরে জিজ্ঞেস করে উঠল সবাই।
    - সবাই শোনো। আজ রাতে একটা পার্টি দিতে হবে। সেখানে ফুল, বেলুন আর কেকের আয়োজন করতে হবে।
সবাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগল- পার্টি!! কেন?
যদিও দিদিমা যা বলেছিল সবই তারা আয়োজন করল, কেননা দিদিমা যা বলছে ভেবেই বলছে নিশ্চয়। অতএব সেদিন বিকেলে তাদের সবচেয়ে ভাল পোশাক পরে মোড়ের মাথায় জমায়েত হল সবাই।
রোগরো ঘুমিয়েছিল। রোগরোরা খুব তাড়াতাড়ি শুতে যায়। সেদিন যখন ঘুম ভাঙল জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে অবাক হল সে। চারদিকে লোকজন হাসছে, কেক খাচ্ছে। এটা পার্টি! – কী দারুণ! আর প্লপ! এক কামড়ে রাতটাকে খেয়ে ফেলল সে।
আইই! তবে রোগরোর পেটে সইল না সে খাবার। বদহজম হয়ে গেল। এদ্দিনে যত কটা সপ্তাহান্ত গিলে খেয়েছিল সে সব বমি করে উগরে দিল।
সে দেশের লোকজন এত বেশি অবসর সময় পেয়ে গেল দেখে তারপর একটা লম্বা ছুটিতে গিয়েছিল।

ছবিঃ পার্থ মুখার্জি

মূল গল্পঃ
এল রোগরো El Rogro
আদ্রিয়ানা বাইয়েস্তেরোস/Adriana Ballesteros
আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেস শহরে জন্ম। আদ্রিয়ানা বাইয়েস্তেরোস আদ্যন্ত ছোটদের গল্প লেখক। আর্জেন্টিনা, কল্মবিয়া, মেক্সিকো ও স্পেন দেশে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তাঁর লেখা ছোটদের গল্প প্রকাশ পায়। এতাবৎ কটি গ্রন্থ প্রকাশিত- 'কুয়ান্দো এরা পেক্যেনিও' বা 'যখন ছোট ছিলাম', 'মাখিকোস মুন্দোস' বা ' ইন্দ্রজালের দুনিয়া' ইত্যাদি। নবতম উপন্যাস 'লস সাপাতোস রোখোস দে চারোল' বা 'লাল চকচকে চামড়ার জুতো'।  বর্তমানে স্বামীসহ সে দেশেই থাকেন।

জয়া চৌধুরী মূলতঃ অনুবাদক। মূল স্প্যানিশ ভাষা থেকে বাংলায় বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় নিয়মিত অনুবাদ করে থাকেন। অবসরে প্রবন্ধ ও কবিতা লেখেন বাংলায়। সেগুলিও নিয়মিত প্রকাশিত হয় বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও ব্লগে। প্রিয় শখ হলো নাটক করা। স্প্যানিশ ভাষা শেখান রামকৃষ্ণ মিশন স্কুল অফ ল্যাঙ্গুয়েজ এবং শিবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা