সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
টাইটেল মিউজিক

আকাশ বাঁশি বাজানো কারও কাছে শেখেনি। বছর দুই আগে বাবা মেলা থেকে একটা বাঁশি কিনে দেয় আকাশকে, তার আগে সত্যিকারের বাঁশি দেখেনি সে। কী সুন্দর শব্দ হয়, কিন্তু সে তো বাঁশিওয়ালা বাজালে, আকাশ তো বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেও কোনও সুর বের করতে পারল না। বাঁশির গায়ে অনেকগুলো ফুটো, একটায় ঠোঁট লাগিয়ে ফুঁ দিতে হয় আর বাকি যে সাতটা ফুটো আছে আঙুল দিয়ে খোলা বন্ধ করলেই নানান সুর বেরোয় তার থেকে। বাঁশিওয়ালা বাঁশিটা আকাশকে দিয়ে বলেছিল, রোজ বাজিয়ো কিন্তু, দেখো একদিন ও তোমার বন্ধু হয়ে যাবে। তোমার যেমন ইচ্ছে তেমন সুরে বাঁশি বাজবে।

আকাশ যে ছোট্ট শহরে থাকে তার পাশ দিয়ে একটা নদী বয়ে গেছে। খুব বড় না, কিন্তু বর্ষাকালে জলে টইটুম্বুর থাকে। খানিক দূরে পাহাড় দেখা যায়, সেখানে অনেক গাছপালা, কত পাখি, কাঠবেড়ালি, প্রজাপতি। আকাশ নিজে নিজেই বাঁশি বাজায় মানে চেষ্টা করে, কখনও মনমতো হয়, কখনও হয় না। তাতে কী, আকাশ যখন ঘুরতে ঘুরতে নদীর পাড়ে চলে যায় বা বন্ধুদের সাথে পাহাড় জঙ্গল পায়ে পায়ে বেরিয়ে আসে তখন বাঁশি বাজাতে দারুণ মজা। নদীর জলের বয়ে চলার শব্দ, বৃষ্টির ঝমঝম কি টাপুর টুপুর বা ধরো পাখিদের গানে গানে কী সুন্দর বাঁশির সুর মিশে যায় ।

সেই ছোট্ট শহরে হঠাৎ এক আগন্তুক এসে উপস্থিত। তার মাথায় টুপি, পুরনো কোট প্যান্ট পরা, কাঁধে একটা ছেঁড়া রুকস্যাক। সে বেশি কথাবার্তা বলে না, ঘুরে বেড়ায়। কখনও নদীর ধার ধরে হাঁটতে থাকে, কখনও বা পাহাড়ের রাস্তায় শিস দিয়ে হেঁটে বেড়ায়। একটা বেশ বড়ো ক্যামেরা দিয়ে পাখির ছবি তোলে, কখনও বা নদীর ছবি, গাছেদের ছবি বা সূর্য যখন ঠিক ডুববে ডুববে করছে সেই আকাশের ছবি তোলে, মাঝে মাঝে একটা ডিঙ্গি নৌকো চড়ে চলে যায় নদীর ওইপারের গ্রামগুলোতে। কেউ বলে পাগল, ভবঘুরে। কেউ বলে সিনেমার লোকেশন খুঁজতে এসছে আবার কেউ বলে ফটোগ্রাফার। আকাশের কিন্তু বেশ লাগে লোকটাকে, যদিও তার সাথে কোনওদিন তার কথা হয়নি, গল্প হয়নি, কিন্তু কেমন মজায় ঘুরে ঘুরে বেড়ায়, কোনও চিন্তা ভাবনা নেই, পরীক্ষা পড়াশুনো, হোমটাস্ক কিচ্ছু নেই।

সেদিন আকাশ আর তার বন্ধু ঝিনুক গেছে নদীর ধারে, হঠাৎ দেখা সেই লোকটার সাথে। আকাশের হাতে বাঁশি দেখে বলল, "তুমিই বুঝি বাঁশি বাজাও?"
আকাশ বলল, "হ্যাঁ, বাবা কিনে দিয়েছে বাঁশিটা।"
লোকটা বলল, "কাল তাহলে তুমিই বাজাচ্ছিলে বাঁশি? মুখরাটা শোনাও দেখি একটু।"

আকাশ বাঁশি বাজায় বটে, কিন্তু সে তো কারও কাছে শেখেনি। গানের ব্যাকরণ, কোনটা অন্তরা, কোনটা মুখরা এসব কিছুই জানে না। তার নেই কোনও গানের খাতা, যাতে কিনা স্বরলিপি লেখা থাকে। তা আকাশ আমতা আমতা করে বলল, "কাল কী বাজিয়েছিলাম আমার তো মনে নেই, দেখি সবাইকে জিজ্ঞেস করে।" লোকটা তো অবাক! বলে, "তুমি কী বাজিয়েছিলে তোমারই তা মনে নেই? কাকে জিজ্ঞেস করবে এখন বল দেখি! এখানে তো ঝিনুক ছাড়া আর কাউকে দেখছি না।"

টাইটেল মিউজিক
আকাশ বলল, "কেন? নদী আছে, কামরাঙ্গা, শিমূল গাছ আছে, প্রজাপতি আছে, কাঠবেড়ালি আছে, বাতাস, মৌমাছি সবাই তো আছে। ওরাই তো আমার গান শোনে, গলা মেলায়, হাততালি দেয়, মাথা দোলায়।" আকাশ বাঁশিতে ফু দিল, অমনি নদীর জল ছলাৎছল করে পাড়ে আছড়ে পড়ল, আমলকী গাছ মাথা দোলাতে লাগল, দুটো কাঠবেড়ালি ল্যাজ তুলে স্ট্যাচু হয়ে গেল, উড়ে এল প্রজাপতি, মৌমাছি আর সাথে সাথে বাতাস শনশন করে বইতে লাগল। আকাশ বাঁশি থামিয়ে ওদের জিজ্ঞেস করল, "হ্যাঁরে, কাল কী বাজিয়েছিলাম তোদের মনে আছে?" সবাই বলল, "আমরা কি গানের অত বুঝি? ভালো লাগে তাই শুনি। তবে কাল কিন্তু তুমি জব্বর বাজিয়েছিলে।"

হঠাৎ কোত্থেকে এক ল্যাজঝোলা পাখি আর বুলবুলি এসে উপস্থিত, "আমার মনে আছে, আমার মনে আছে" বলে গান ধরল তারা। ব্যাস, মনে পড়ে গেল আকাশের কী যেন বলে সেই মুখরা, অন্তরা সব। বাজাতে লাগল আকাশ আর সেই সুর যেন নদী পেরিয়ে, পাহাড়, বন-জঙ্গল ডিঙ্গিয়ে পরের পাহাড়ে, পাশের গ্রামে ছড়িয়ে পড়তে লাগল। হঠাৎ আকাশ দেখে, টুপিপরা সেই লোকটার চোখে জল। কী মুশকিল, গান শুনে কেউ কাঁদে আকাশ জীবনে এই প্রথম দেখল। বাজানো শেষ হলে লোকটা আকাশ আর ঝিনুককে দুটো চকলেট দিল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ের রাস্তায় উধাও হয়ে গেল।

মাসখানেক বাদে আকাশের নামে এক চিঠি পোস্টমাস্টার বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেল। তাতে লেখা, "তোমার বাজানো সুর আমার পরের ছবির টাইটেল মিউজিক। শিগগিরই যাচ্ছি তোমাদের সাথে দেখা করতে। তোমার বন্ধুদের খবরটা দিও। ভালো থেকো, ইতি টুপিওয়ালা বন্ধু।"


ছবিঃ মঞ্জিমা মল্লিক

আশুতোষ ভট্টাচার্য্যি নিয়মিত ছোটদের এবং বড়দের বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালিখি করেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা