সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

এবার দেখা যাক ‘গ্রীনহাউস এফেক্ট’ কি সত্যিই এক ভয়ঙ্কর ভিলেন, যে বিশ্বের পরিবেশ ধ্বংস করে দিচ্ছে? আসলে ব্যাপারটা একটু জটিল, যা ঠিক এক কথায় বলা যায় না। সূর্যের যে তাপ পৃথিবীতে আসে, জল-মাটি তার কিছুটা শুষে নেয়, বাকিটা ধাক্কা খেয়ে আকাশে ফিরে যায়। সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব ও পৃথিবীপৃষ্ঠের ধরন অনুসারে যেটুকু তাপ পৃথিবীর ধরে রাখার কথা, তাতে পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা হওয়ার কথা শূন্যের চেয়েও পনেরো ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। ঐ ঠাণ্ডায় প্রাণের সৃষ্টি অসম্ভব না হলেও মানুষ সহ অনেক উন্নত প্রাণীর অবস্থা কঠিন হয়ে দাঁড়াতো। কিন্তু পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা আসলে প্রায় চোদ্দ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তাই মানুষ ও অন্যান্য অনেক উন্নত প্রাণী বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে, খাচ্ছে-দাচ্ছে-বংশবৃদ্ধি করছে। এটা সম্ভব হচ্ছে পৃথিবী ঘিরে যে বায়ুমণ্ডল আছে, তার জন্য। সে ‘গ্রীনহাউস ডোম’এর মতো কাজ ক’রে জল-মাটির ফিরিয়ে দেওয়া তাপের এক অংশকে ধরে রাখে। অবশ্য এই ‘ডোম’টা কাঁচের মতো কঠিন নয় বলে তার মধ্য দিয়ে অনেকটা তাপই বাইরে মহাশূন্যে মিলিয়ে যায়। যেটুকু থাকে, তাতেই আমাদের স্বস্তি।

গ্রীনহাউস
বায়ুমণ্ডল কতটা তাপ আটকে দেবে আর কতটা শূন্যে মিলিয়ে যাবে সেটা নির্ভর করছে বায়ুমণ্ডলের উপাদান, ঘনত্ব ইত্যাদির ওপর। দেখা গেছে, বিশেষ কিছু গ্যাস তাপ আটকাতে পটু, তাই সেগুলো যত বাড়বে পৃথিবী ততই গরম হতে থাকবে। বিজ্ঞানীরা হিসেবনিকেশ করে দেখিয়েছেন যে পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা যদি আরো দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বেড়ে যায়, তবে সেটা মানুষ ও প্রাণীদের জীবনযাত্রা তছনছ করে দেবে। পাহাড়ের ওপরকার হিমবাহ বা গ্লেসিয়ার গলে প্রথমে দেখা দেবে জলোচ্ছ্বাস ও নদীতে বন্যা, তারপর সেই নদীই ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাবে।

উত্তর-দক্ষিণ মেরুতে মেরুতুষার বা পোলার আইস-ক্যাপ গলে সারা পৃথিবীতে সমুদ্রের জলতল বেড়ে নিচু উপকূলবর্তী জায়গা ও দ্বীপ ডুবে যাবে। প্রকৃতি হয়ে উঠবে অনিশ্চিত ও রুক্ষ, বেড়ে যাবে ঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়। একবার সেই স্তরে চলে গেলে ‘চেন রিঅ্যাকশন’-এর মতো পরপর এমন সব প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটতে থাকবে যে প্রকৃতিকে আর মানুষের সুস্থ হয়ে বাঁচার অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে না।

গ্রীনহাউস এফেক্ট

পৃথিবীকে অতি ঠাণ্ডা হতে দেয়নি ‘গ্রীনহাউস এফেক্ট’। কিন্তু এখন আবার তার বাড়াবাড়িতে পৃথিবী অতি গরম হয়ে উঠে মানুষের বসবাসের প্রতিকূল হয়ে উঠতে চলেছে। এই বিপদের মোকাবিলা করা তাই আজ অত্যন্ত জরুরী। যে গ্যাসগুলি ‘গ্রীনহাউস এফেক্ট’-এ সাহায্য করে, তাদের বলা হয় গ্রীনহাউস গ্যাস। যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রোজেনের অক্সাইড। পৃথিবীর পরিবেশ মানুষের বসবাসযোগ্য রাখতে হলে তাই আজ এই গ্যাসগুলির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। সেটা অনেকটাই মানুষের হাতে। মূলতঃ ফসিল জ্বালানী অর্থাৎ কয়লা ও পেট্রোলিয়াম ব্যবহারের ফলেই বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড বাড়ছে। আবার গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নেয়, কিন্তু ‘সভ্যতা’র তাগিদে আমরা জঙ্গল-কে-জঙ্গল কেটে সাফ করছি। গ্রীনহাউস এফেক্ট নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের এই কর্মগুলিও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

কিন্তু সেটা কীভাবে করা যায়? কাজটা সহজ নয় – তবে সে আর এক গল্প, পরে হবে।


ছবি সৌজন্যঃ
উইকিপিডিয়া
স্পেকট্রোস
জায়ান্টফ্রিকিনরোবোট

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনীয়ার ও মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অনিরুদ্ধ সেন কলকাতা-মুম্বইয়ের বিভিন্ন সাময়িকপত্র ও ওয়েব ম্যাগাজিনের নিয়মিত লেখক। তাঁর লেখা ও অনুবাদ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, এবং সংকলিত বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা