রস্কো এবার বেশ ঘাবড়েই গেল। সত্যিই তো! ওই সব ব্যাপারগুলো তো সে ভেবেই দেখেনি! ওরা থাকে তো একটা ফ্ল্যাট বাড়িতে, সেখানে তো মোটেই বেশি জায়গা নেই! সে ভয়ে প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, “কিন্তু আমি তো শঙ্কুমামার জন্যে সব করছিলাম! এবার কী হবে?”
বাবা অফিস থেকে ফিরে সব শুনে বললেন, “শঙ্কুর জন্যে ভেবেছো তুমি এটা খুবই ভাল কথা কিন্তু তোমার মা আর আমার দিকটাও একটু ভাবলে ভাল হত। যাক, দেখি কী করা যায়!”
পরদিন স্কুলে যাওয়ার পথে নন্দনকে ব্যাপারটা বলতে সে বলল, “অঙ্ক স্যারকে বল না কথাটা। দেখিস উনি ঠিক কিছু একটা উপায় বলে দেবেন।”
অঙ্ক স্যার ওদের ক্লাস টিচার। ভারি হাসিখুসি অমায়িক মানুষ। ক্লাসের সবাই ওনাকে খুব ভালবাসে।
ক্লাসের পর ওনাকে কথাটা বলতে উনি বললেন, “হ্যাঁ, সেটা তো সত্যি একটা বড় সমস্যা! এক স্কুল ভর্তি লোক তোমাদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হলে তো তোমার মা বাবার খুব মুশকিল হবে! একটু অপেক্ষা করো, আমি প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে একটু কথা বলে দেখি। ব্যাপারটা যে কত বিশাল আকার ধারণ করেছে সেটা ওনার জানা দরকার।”
কিছুক্ষণ বাদেই উনি ফিরে এলেন। এসে বললেন, “আর চিন্তা নেই! স্কুলের সবাই যখন যেতে চায় তখন ব্যাপারটা স্কুলে হলেই ভাল হবে সেটাই ঠিক করেছেন প্রিন্সিপাল স্যার! তবে জন্মদিন নয় তোমার শঙ্কুমামার জন্যে একটা বিশেষ চ্যারিটি শো হবে। তার টিকিট করা হবে। টিচাররা এবং ছাত্র ছাত্রীরা নাচ গান ইত্যাদি করবে। টিকিট থেকে ওঠা সব অর্থ তোমার শঙ্কুমামার অপারেশানের জন্যে দেওয়া হবে! কী এবার খুশি তো?”
আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল রস্কো। মামাকে সব জানাতে শঙ্কুমামার মা বাবাও এসে প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে দেখা করলেন।
রস্কোর জন্মদিনের দিনই হল চ্যারিটি শোটা। ভিড় একেবারে উপচে পড়ছিল স্কুলে। শঙ্কুমামা আর ওর মা বাবাও এলেন। শঙ্কুমামার চোখের কোলে কালি কিন্তু মুখে হাসি।
শো দারুণ হল। প্রিন্সিপাল স্যার ম্যাজিক দেখালেন। অনেক টিচাররা গান গাইলেন, আবৃতি করলেন। সিনিয়ার দাদা দিদিরা যাদের নাচ নাটক ইত্যাদি তৈরি ছিল তারাও করল।
ফাংশানের শেষে প্রিন্সিপাল স্যার রস্কোকে ডাকলেন স্টেজে। সবাইকে বললেন, “ওর জন্যেই আজ আমরা সবাই উদ্যোগ নিয়েছি এই মহান কাজে!”
তারপর সবাই হ্যাপি বার্থডে গাইল ওর জন্যে। একটু লজ্জা লাগছিল রস্কোর তবে আনন্দও হচ্ছিল খুব। এই জন্মদিনটার কথা কোনদিন ভুলবে না সে। সব শেষে টিকিট বিক্রি থেকে ওঠা সব টাকা শঙ্কুমামার মা বাবার হাতে তুলে দেওয়া হল।
রস্কো বলল, “ওসব নিয়ে ভেব না। তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে ওঠো। ‘শঙ্কুর সুবর্ণ সুযোগ’ গল্পটা অর্ধেক মোটে শোনা হয়েছে, ওটা পুরোটা শুনতে হবে তো!”