সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
বিল্লুর দস্যিপনা

যেই কথা সেই কাজ সাত-আট দিন ঘুরে ঘুরে সারা বনে দুষ্টু বানর খুঁজে পেল সাত জন। এই সাত জনেই সারা বনে ঘুরে ঘুরে পাকা পেঁপে, লিচু, জামরুল, আনারস যত্তো ফল খেয়ে নেয়। রাতের বেলায় সব পশুপাখি যখন ঘুমিয়ে যায় তখন বিল্লু তার দলবল নিয়ে নতুন নতুন ফন্দি আঁটে। কাল কার বারোটা বাজাবে, কার ক্ষেতে হানা দেবে কার কলাবাগানের কাঁদিটা কাটবে, কোন দলের উঠতি বাদরটা বেয়াড়া হয়ে গেছে একটু কান মলে দিতে হবে; এইসব তার দলের প্রতিরাতের আলোচ্য বিষয়। এখন তাদের আস্থানাটা টিয়াচর ঠিকই। তবুও তার একটা এলাকা আছে যেসব জায়গায় মাঝে মাঝে যায়, একটু গল্প করতে, আড্ডা মারতে। টিয়াচরের চারপাশে নদীর পানি ছোট ছোট গাছ কিনার দিয়ে এঁটে রয়েছে। নদীর ঢেউ এসে গাছের গায়ে লেগে গানের সুর তোলে আর মাঝে মাঝে বাওয়ালী-মউয়ালরা যায়। তবে বনের কেউ তাদের এই টিয়াচরের আস্তানার কথা জানে না। চরের বড় বড় কেওড়া ডালে রোজ গোসলের সময় হলে দোল খায় দোলনার মতো; বিল্লুর দলের সবগুলোই হলো ঘোর এঁচড়ে পাকা একজনকে দোল খেতে দেখলে বাকি ছয়টা এসে লেজ ধরে ঝুলে পড়ে আর টপাটপ লাইন ধরে নীচে পড়ে গিয়ে বলে উহুঃ আহঃ করতে থাকে। একবার তো বিরুট পাড়ার দস্যি বানর বাক্কুর হাতে এমন জোরে ব্যথা লাগলো যে তিন দিন মাস্তানী করতে পারেনি। বিল্লু অবশ্য বলেছিল, যা শেয়াল মামার কাছে আলাপ করে একটা ঔষুধ খাওয়ায়ে দে; সবাই তো বিল্লুর কথা শুনে থি-হি-হি করে হেসে শেষ। বিল্লু বললো হাসলি কেন দাদাগিরি করছিস সবগুলো?

তখন ব্যথা পাওয়া বাক্কু ও বললো, বিল্লুদা শেয়াল মামা তো পন্ডিত ব্যক্তি সে তো আর বদ্যি না। তখন বললো, ওই হলো একটা-তাইলে বদ্যির কাছে যা।


শীতের আগে আগে সময়টা বেশ মজা হয়। দুবলার চরে বসে রাস মেলা। জলপাই রঙের মোচঅলা লোকগুলো বড় বড় জাহাজে করে আসে। তারপর ছোট ছোট নৌকায় করে ঘুরে বেড়ায়। শহর থেকে কত্তো মজার মজার খাবার কিনে আনে। হরিণ শিকারে ওরা আবার আনন্দ পায় খুব। হরিণের দল এই সময়ে বেশ ভয়ে থাকে কখন কোথা থেকে এসে গুলি করে, জাল পেতে ধরে নিয়ে যায়; বিল্লুর দল আবার বেশ উপকারকরে হরিণদের আগে থেকে কোনো নৌকা বা জাহাজ দেখলে চিইইইইইই করে সাবধান করে দেয় হরিণদের। এবার অবশ্য বিল্লু একটু অন্যরকম বুদ্ধি এঁটেছে। যেভাবে হোক একটা নৌকার সব ফল নিয়ে নেবে। নৌকা দেখলেই তক্কে তক্কে থাকে চোখে চোখে রাখে তার দস্যিবাহিনী নিয়ে।


পাশের কটকা খালে একটা নৌকা ভিড়েছে খবর দিল হাক্কু বানর। জনা দশেক লোক আছে। আজ রাতেই যেভাবে হোক সব ফল আর খাবার দাবার নিতে হবে। বিল্লুর পরামর্শ হলো রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে যাবে তখন তারা চুপি চুপি গিয়ে নৌকা থেকে সমস্ত কিছু নিয়ে আসলে হয়ে যাবে। কেবল সাবধান থাকতে হবে ওরা টের না পায়। কিন্তু ঘটনাটা ঘটলো উল্টো। রাতে গিয়ে দেখা গেল কেউ নৌকায় নেই প্রচুর খাবার আর ফল-ফলারি পড়ে আছে। বিল্লুরা দেরি না করে সব বস্তায় ভরে টানতে টানতে নদীর কিনার থেকে একটু দূরে এসেছে তখন শোনা গেল কান্না। আমাকে ছেড়ে দাও আমাকে ছেড়ে দাও। আমি মার কাছে যাবো বাবার কাছে যাবো। বিল্লু থেমে গেল। বললো, তোরা দাঁড়া আমি দেখে আসি কার কী হলো। বিল্লু আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে গিয়ে ঝোপের আড়ালে দেখলো, একটা হরিণশাবক কাঁদছে। তার গলায় দড়ি দিয়ে বাঁধা। সামনে দাঁড়িয়ে হাসছে বেশ ক’জন লোক। হরিণশাবক কেঁদেই চলেছে। বিল্লু ভাবলো কী করা যায়, হরিণের বাচ্চাটাকে কীভাবে বাঁচানো যায়। এখনই না বাঁচাতে পারলে আর সম্ভব হবে না। তাহলে উপায় কী?


হরিণশাবকের জন্যে তার মন কেঁদে উঠলো। দ্রুত দলের কাছে চলে গেল। বললো, তোরা সবাই বস্তাটা টেনে নিয়ে লুকিয়ে পড়। আর বাক্কু, হাক্কু আমার সাথে আয়। বিল্লু ধনু-বান নিয়ে রেডি হয়ে গেল। বাক্কুকে বললো গোল ফল নিয়ে আরেক পাশে যেতে আর হাক্কুকে বললো- চিঁই্ই্ই্ করে ডাক দিতে দিতে এ গাছ থেকে ও গাছে লাফিয়ে ডাকতে। তারপর যা বিল্লু তীর ছুঁড়ে মারতে লাগলো, বাক্কু একাধারে গোল ফল মারতে লাগলো আর হাক্কু চিঁইইইইইইই করতে করতে একগাছ থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে ডাকতে লাগলো। সে এক তান্ডব শুরু হলো যেন, ভয়ে লোকগুলো হরিণশাবকে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে বাঁচতে চাইলো। কেউ গিয়ে পড়লো নদীতে কেউ গিয়ে উঠলো গাছে কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইলো। আর এদিকে ছোট্ট হরিণশাবক ছাড়া পেয়ে ছুটে পালাল বনের মধ্যে।

এহসান হায়দার প্রকৌশলী রূপে পড়াশোনা করলেও, পেশায় সাংবাদিক। ঢাকা, বাংলাদেশের বাসিন্দা এহসান বর্তমানে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর নিজেকে পরিচয় দেন ছোটকাগজ কর্মী হিসেবে। কারণ, কবিতা প্রবন্ধ এই ছোটকাগজেই ছাপতে ভালো লাগে। একান্ত ইচ্ছে শিশুদের জন্যে একটি নতুন ধরনের পত্রিকা‌ ‌‍'রূপকথা' প্রকাশ করা। ছেলেবেলায় শিশুসাহিত্যর প্রতি যে আগ্রহ জন্মেছিল তা থেকে দূরে যাওয়া যায়না- আরতাই শিশুদের নিয়ে লিখতে ভালো লাগে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা