খেলাঘরখেলাঘর

পুরাণঝুলি

এদিকে বিস্তর পুণ্যবলে পুনর্জন্ম লাভ করে উল্রাও।তাঁর পবিত্র শরীর থেকে ক্রমে তৈরী হয় স্বর্গ মর্ত্য মহাসাগর এবং সেই সঙ্গেই আগুন জল মাটি ও আত্মা।শেষ চারটি উপাদান মিলে  সৃষ্টি হয় প্রাণী ও উদ্ভিদ জগত।

জগৎ না হয় গড়া হলো।এবার সমস্যা হচ্ছে এতো বিশাল জায়গা দেখাশোনার ঝক্কি কে সামলাবে?চিন্তায় চিন্তায় ওজন অবধি কমে গেলো দেবতাদের।যাইহোক মুহুর্মুহু টেবিল চাপড়ে,অগুন্তি ভাঁড় ডাবের জল গলায় চালান করে শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো গুন্গে ও সহের কৃতী ছেলেপুলেদের দেওয়া হোক এই কাজের ভার।

পৃথিবী যে এমন অপরূপা স্বপ্নেও ভাবে নি কেউ।হেথায় গাঢ় নীল সাগরের অচেনা হাতছানি,তো হোথায় চোখ জুড়ানো সবুজ মাঠে হাওয়ার কানামাছি খেলা।কোথাও ধূসর পাহাড়ের মাথায় রামধনুরঙা বরফের মুকুট,তো অন্যখানে চঞ্চল সোনালী বালির শরীরে একমুঠো রোদের নামতা!উল্রাও ঠাকুমাকে মনে মনে ধন্যবাদ জানালো সকলে।কারণ সমস্তটা যে তাঁরই রচনা!নাতিপুতিরা পছন্দমত জীবনসঙ্গী খুঁজে বিয়ে করেছে,খবর পেলেন মাগো ।আবার ঘর ভরে উঠলো কচিকাঁচাদের মিঠে কলতানে।এইরূপে ধীরে ধীরে পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়তে লাগলো!

সেই যুগে প্রাণীদের দাঁত ছিলো না।ধরিত্রী  মায়ের  বুকের দুধই জোগাত তাদের খাবার।পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা ঝর্ণাগুলো ছিলো সেই সুস্বাদু দুধের উত্স।অথচ এতগুলো পেট ভরানোর মত যথেষ্ট পানীয় কোথায়?দেখা গেলো ঘন্টার পর ঘন্টা সারিবদ্ধ হয়ে অপেক্ষা করেও বহুজনকে অনাহারে থাকতে হচ্ছে।দিনের পর দিন খিদের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে জিসো নামের এক যুবক একদিন খেয়ে ফেললো টসটসে কয়েক ছড়া আঙ্গুর!ফলগুলো জিভের স্পর্শে আসতেই সে চমকে ওঠে!আরে এ যে এক অদ্ভুত মনকাড়া স্বাদ!এমন আজব অভিজ্ঞতা বাকি সঙ্গী  সাথীদের কানে না তুলে কী পারা যায়?ছুট্টে গিয়ে জানালো যাকেই সামনে পেলো।জিসোর কাছে বর্ণনা শুনে সেদিন যারা মুখে দিয়েছিলো সেই লোভনীয় আঙ্গুর,দেখা গেলো সাত দিনের মধ্যে হুড়মুড়িয়ে তাদের প্রত্যেকের দাঁত গজাতে আরম্ভ করেছে!তা দাঁত থাকতে কে আর শুধু দুধে সন্তুষ্ট থাকবে?এবার আর গিলে নয়,সব খাবার চিবিয়ে খেতে সাধ হলো।ব্যাস্,সেই থেকে চালু গাছের ফল ও পশু শিকার করে পেটপুজো।

এতোদিন চোখ থাকলেও দৃষ্টি ছিলো না।কিন্তু খাদ্য সংগ্রহ করতে হলে চোখে দেখতে পাওয়া জরুরী।সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহে অবতারমানুষ লাভ করল দর্শনশক্তি।হাত পা আগের চেয়ে ভারী হয়ে গেলো।গায়ের চামড়ার মসৃণতা কমে এলো।শিখল মুখে শব্দ করতে।তবে হারিয়ে ফেলল বিশেষ শ্রবণক্ষমতা,যা তাদের ঈশ্বরের বাণী শুনতে সাহায্য করেছিলো। এই প্রকারে তিলে তিলে আমাদের মহান পূর্বপুরুষেরা রূপান্তরিত হয় আজকের মানুষে।

আট বছরের কিম এতক্ষণ প্রায় গোগ্রাসে গিলেছে শুরু থেকে শেষ।এবার মনের সামান্য সন্দেহটুকু উগরে না দিয়ে পারল না!

''গল্পটা সত্যি দিদিমা?''
নাতির ঘন চুলে কাঁপা হাতে আঙ্গুল চালাতে চালাতে কী যেন চিন্তা করলো কুন্‌গুত্যে।সত্যিই কি কেউ জানে পৃথিবী আর মানুষের জন্মরহস্য? হয়তো না।তবে কোরিয়া দেশের ঘরে ঘরে সব বাচ্চা এই গল্প শুনেই তাদের শৈশব পার হয়।



শর্মিষ্ঠা খাঁ  
দক্ষিণ কোরিয়া