খেলাঘরখেলাঘর

হরিন

 পার্বতী আর রাধার সাথে দেখা করে ফেরার পথে দুটো কাজ আছে। আসার পথে দেখে এসেছে, ফেজ্যান্ট আরুশার সঙ্গে খাঁচায় এক নতুন পাখী। কি তার রূপ ! কালচে লাল ভেলভেটের মত মসৃন পালকে ঢাকা শরীর, মাথার পালক গুলি আবার সোনালি রেশমের মত। গলার কাছে গোল করে লাল-হলুদ কলারের মত পালকের আস্তরন। দেখলে মনে হয় ঠিক যেন রানীর মত পোষাক পড়ে আছে। আরুশা বলল মোটে দুই দিন হল এসেছে, তাই খুব মুষড়ে পড়ে আছে। ওর সঙ্গে একটু গল্প করে আসতে হবে। আসলে এত সুন্দরী পাখি দেখে লালকন্ঠের একটু ভাব করতে ইচ্ছা হয়েছে।  ময়ূর নীলাদ্রিকে যদি একবার দেখাতে পারত!!  নীলাদ্রি সুন্দর বলে তার খুব অহংকার, কারোর সঙ্গে ভালো করে কথাই বলে না! লালকন্ঠকে তো পাত্তাই দেয় না। একদিন বলেছিল - কি বিচ্ছিরি লম্বা লম্বা পা ! আচ্ছা, এতে লালকন্ঠের কি করার আছে? প্রকৃতি মা যদি তাকে এইরকম করে গড়ে তোলেন! লালকন্ঠ কিছু বলে না। সে তো জানে, সে অন্য অনেক সারসের থেকে লম্বায় অনেক বড়,তার ডানায় কত জোর!!...এই নতুন নাম না জানা পাখি, যে নাকি পৃথিবীর অন্য প্রান্তের দক্ষিন আমেরিকা থেকে এখানে এসেছে, সে নিশ্চয় নীলাদ্রি ময়ূরের মত হবেনা...

ওদিকে আবার গতকাল দুপুরবেলায় শিম্পাঞ্জি বীরেশ্বর এক কান্ড ঘটিয়েছে। ওকে দেখতে এসে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ওর দিকে কলা, বাদাম এইসব ছুঁড়ে দিচ্ছিল। বীরেশ্বর ও দিব্বি বসে বসে খাচ্ছিল। এমন সময় একটা লোক আচমকা বীরেশ্বর-এর দিকে একটা ঢিল ছুঁড়ে মারে। কেন যে মারল!!মানুষগুলোর কি মাথায় কোন বুদ্ধি নেই? বীরেশ্বরের মাথায় ভালোই লেগেছিল। তাই বীরেশ্বর উলটে রেগে গিয়ে সেই পাথরটাই ছুঁড়ে মারে বাইরের দিকে। পাথরটা গিয়ে সোজা লাগে একটা ছোট্ট মেয়ের কপালে। কপাল ফেটে রক্তও বেরোয়। বীরেশ্বর ও খুব ঘাবড়ে গেছিল। পরিখার পাশ থেকে অনেক দূরে এক কোনায় চলে গিয়ে বসে ছিল বাকি দিনটা। ওকে অবশ্য চিড়িয়াখানার ডাক্তার এসে দেখে গেছেন। কিন্তু বেচারা গতকাল থেকে খুবই মন খারাপ করে বসে আছে। বার বার বলছে ও আসলে ওই ছোট্ট মেয়েটাকে আঘাত করতে চায়নি...ওর সঙ্গেও দেখা করা দরকার। ব্যথাটা কমল কিনা কে জানে!!

মাঝে মাঝে নিজেকে ভাগ্যবানই মনে করে লালকন্ঠ। সে চিড়িয়াখানায় বন্দী নয়। ইচ্ছামত দেশ-বিদেশে ঘুরতে পারে। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে খাবার জিনিষ সব সময় পাওয়া যায়না। আজকাল তো বিস্তীর্ণ মাঠ বা জলা জায়গা খুঁজে বার করাই অসাধ্য হয়ে গেছে। চারিদিকে শুধু উঁচু উঁচু গাছপালার মাথা ছাড়িয়ে ওঠা মানুষদের থাকার বাড়ি। শীতে উড়ে আসতে হয় এদিকে, গ্রীষ্মে আবার ফিরতে হয় উত্তরে। অবশ্য লালকন্ঠের প্রজাতির সব সারসই যে উড়ে আসে দক্ষিনে , তা নয়। অনেকেই আসে না। কিন্তু লালকন্ঠ আসে। তার ভালো লাগে আসতে। শীত ও একটু কম লাগে। তবে খাল বিলের ধারই বলো, বা তার উড়ে আসার পথ, সবেই আছে নানারকম বিপদ। সবসময় হুঁশিয়ার থাকতে হয়। কিন্তু তাও, সব মিলিয়ে দেখতে গেলে লালকন্ঠ ভালোই আছে। অন্তঃত ঘুরে ফিরে সবার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ ও তো হয়। বাঘ, সিংহ থেকে জেব্রা, হরিণ, হাতি, এমনকি, পুঁচকে খরগোশগুলোর সঙ্গেও তার ভাব আছে। অথচ দেখো, এই যে রাধা আর জনি, দুটো বাচ্চারই তো এক বয়স, কিন্তু একে অপরের সঙ্গে আলাপ তো দূর, মুখই দেখতে পায়না। তার মুখে জনির লম্বা গলার কথা শুনে তো ছোট্ট রাধা হেসেই গড়িয়ে পড়ল। ওদিকে জনি যেই শুনল হাতিদের লম্বা শুঁড়ের কথা, অমনি এমনভাবে তাকালো যেন লালকন্ঠ বানিয়ে বানিয়ে বলছে!! আহা রে...ওরা যদি একসঙ্গে খেলাধুলো করতে পারত...

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।