সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
তিনটি হাঁসের ছানা

কিকি,প্যাঁ,পিঁক- তিনটি হাঁসের ছানা। ডোবার জলে ঝুপ ঝুপ ডুব আর মায়ের আশে পাশেই আনাগোনা।প্যাঁ এর খুব ভয় দুম দাম আওয়াজে।কিকির পেছনে পেছনে হেঁটে হেঁটে বেড়ায় । পিঁক কিন্তু কালো নয় ফ্যাকাসে। একা একা ঘোরে পিঁক। মা আগে আগে যায় ।জলে নামায় কমলা রঙের চ্যাপ্টা দুটো পা। কিকি যায় ছুটে ছুটে তার পেছনে প্যাঁ। আর ফ্যাকাসে পিঁক ধীরে ধীরে একা একা আসে। সাঁতরে সাঁতরে জলে তুফান তোলে সব্বাই মিলে। মা , তারপর কিকি, আর প্যাঁ। আর একটু দূরে ফ্যাকাসে পিঁক ধীরে ধীরে। আর সব্বাই মিলে বলে ,প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক মা মা মা প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক।

মাঠে ছেলেরা ব্যাটবল খেলে । সাঁ সাঁ করে লাল বল ছুটে আসে। মা প্যাঁক প্যাঁক করে বলে, " তাড়াতাড়ি চলও... ছুট লাগাও।" কিকির পেছনে প্যাঁ, বেশ কিছুটা দূরে পিঁক। পিঁকএর বুক ধড়াস ধড়াস করে। মা'র দু পায়ের ফাঁকে মুখ ঢুকিয়ে দেয় সে। পাশের বাড়ির ছেলেটি বড় বদমাশ। ফ্যাকাসে পিঁক ধীরে ধীরে চলে। প্রায়ই ওকে পা দুটো ধরে হাতে ঝুলিয়ে নিয়ে হাঁটে। মা থাকলে ভয় নেই। ছুটে এসে মা লাগায় ঠোক্কর। কিকি খুব সাহসী । সে ঠোক্কর দিতে শিখে গেছে। কিন্তু পিঁকের বুক দুরদুর করে।

গুগলি খেয়ে মনটা বেশ খুশি তিন জনের । জল থেকে উঠে একটু রোদ লাগিয়ে নিতে হবে।মা চলেছে দুলে দুলে।কিকির পেছনে প্যাঁ, বেশ কিছুটা দূরে পিঁক।মাঠে তখন খেলা শুরু হয়ে গেছে। সাঁ করে একটা বল এলো। একী! মা ঝপ করে পড়ে গেছে।কিকি আর প্যাঁ ছুট লাগালো ওদের ঘরের দিকে।পিঁক কেও তো যেতে হবে।মার খুব লেগেছে। মা আর উঠতে পারছে না।ওরা তিন জন প্যাঁক প্যাঁক করে কলকল করে উঠল।প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক মা মা মা প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক।

বাড়ির ছেলে বুড়ো সব্বাই ওদের কাছে ছুটে এলো। মা কে দেখে বাড়ির ছোট মেয়েটা কেঁদে ফেলল। বাড়ির সাইকেল চালানো ছেলেটা রেগে গিয়ে লাল বলটা ছুঁড়ে ফেলল ডোবার জলে।ওরা সবাই মিলে মাকে ভেতরে নিয়ে গেল। কিকি , প্যাঁ আর পিঁক চুপ করে তাকিয়ে দেখল। কিন্তু কিকির আজ খুব ভয় করছে। প্যাঁ এর আরও বেশি। আর পিঁক আজ একা একা থাকলো না।রাত পোহালে মাকে নিয়ে ওরা সব্বাই কোথায় গেল। ঘরের মধ্যেই থাকতে হোল সারা সকাল । এরা খুলে দিতে বেমালুম ভুলে গেল। ঘরের মধ্যে অন্ধকার। কিকি খুব ছটপট করেছিল। যে ফুটো দিয়ে আলো আসছিলো প্যাঁ মাঝে মাঝে তার কাছাকাছি ঠোঁট ঠেকিয়ে দেখবার চেষ্টা করছিল। পিঁক চুপ করে থাকলো। কিন্তু খুব খিদে পেয়েছে। প্যাঁক প্যাঁক করে ডেকেই চলে তিনজনে।দরজা খুললো সেই বিকেল বেলা। বাড়ির বুড়ো মতন কুঁজো মানুষ টা বক বক করতে করতে খুলে দিল ওদের। ছটফটিয়ে তিন জন ডোবার জলে নেমে পড়ে। কিকি খুব তাড়াতাড়ি খায়, তারপরে প্যাঁ , আর একটু দূরে একা একা পিঁক আস্তে আস্তে খায়। জলে মুখ ডুবিয়ে অবাক হয়ে যায় পিঁক । আরে জলের ভেতর ওটা কি ?শ্যওলার ভেতরে ...লাল রঙের। আগে তো কখনও ওটা দ্যাখেনি।পিঁক জল থেকে মুখ তুলে চারপাশে তাকায়। আজ মাঠ থেকে ছেলেরা সব ফিরে যাচ্ছে। আকাশে একটু একটু করে অন্ধকার নামছে। ও হো... এই তো সেই লাল বল। এটার জন্যে মায়ের অত কষ্ট। আচ্ছা মা কই? পিঁক প্যাঁক প্যাঁক করে ওঠে।

চাঁদ উঠতেই বুড়ো এসে ডাক দিল ওদের। কিকি আর প্যাঁ জল থেকে উঠতে চায় না। পিঁকের কিন্তু বড্ড ভয় করছে। সে তাড়াতাড়ি ওঠে জোরে জোরে আওয়াজ করে মা কে ডাকে। প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক মা মা মা প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক ।ওর সঙ্গে যোগ দেয় কিকি আর প্যাঁ।প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক মা মা মা প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক ।

তিনটি হাঁসের ছানা

সাইকেল চড়া ছেলে ফিরে এল।তাকে ঘিরে তিনজন চিৎকার করে প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক মা মা মা প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক।ছেলেটা তিনজন এর দিকে তাকিয়ে কি বলে বোঝা যায় না। তার মুখ হাসি হাসি। দরজার দিকে তাকিয়ে আঙ্গুল দেখিয়ে কি বলে। ওরাও তাকায় আর বলে ,প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক মা মা মা প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক । বাড়ির খুকি মাকে কোলে করে ফিরে আসছে। মার পায়ে সাদা মতো কি একটা বাঁধা।মা কে দেখে তিন জন খুব জোরে চিৎকার করে । মা ওদের কাছে পেয়ে ঠোঁট দিয়ে আদর করে। কিন্তু মা খুব দুর্বল।মা চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো। ঘর বন্ধ করে দিল খুকি। মা এর সাথে ওরা তিনজন ।মন খারাপ তিন জনের। মা এর কাছ ঘেঁসে থাকলো তিনজনে।

মা সারাদিন শুয়ে থাকে। খুকি কোলে করে মা কে সকালের রোদে নিয়ে আসে, খাইয়ে দেয়। বুড়ো ,কুঁজো মানুষটা কি যেন চামচে করে খাইয়ে দেয়। ওরা তিনজন মাঝে মাঝে ডোবায় নেমে গুগলি খায়।পাশের বাড়ির বদমাশ ছেলেটার সাথে এক দল ছেলেপুলে এসে বাড়িতে কি যেন খোঁজ করে।খুকি তাদের সাথে চোখ গোল গোল করে খুব ঝগড়া করে।লাল বলটা ফেরত দেবে না জানিয়ে দেয়।পিঁক কিন্তু রোজ জলের তলার লাল বল টা দেখতে পায়।তার রাগ হয় ওটার ওপর।

সেদিন সকালে উঠে দেখে সব্বাই যেন কোথায় যাবে।খুকি নতুন জামা পড়েছে। সাইকেল চড়া ছেলে বার বার চুল আঁচড়াচ্ছে। এমন কি কুঁজো বুড়োও পরিষ্কার জামা পড়েছে। মা জলে নামতে পারে না। ঘাসের ওপর বসে ওদের সাঁতার দেখছে। পায়ে খুব ব্যাথা। মাকে ওরা ঘরে মধ্যে তুলে দিয়ে গেল। ওরা তিন জনে যেমন জলে খেলা করে তেমন খেলা করতে লাগলো। খুকি চোখ গোল গোল করে কি সব বলে গেল। পিঁক অতো বুঝতে পারে না কিকি বুঝতে পারে।সে বলল , " আজ সাবধান,পাশের বাড়ির ছেলেটা'র থেকে।" মা র কাছে গিয়ে বসলো প্যাঁ। জলে সাঁতার কাটতে গেল কিকি। পিঁক একা একা হেলে দুলে ঘুরে বেড়াতে লাগলো। এখনো বিকেল হয়নি। কিকি ,প্যাঁ আর পিঁক মায়ের কাছে কাছে আছে। মা খুব চেষ্টা করছে উঠে দাঁড়াবার।ওরা অবাক হয়ে দেখল মা উঠে দাঁড়িয়েছে। আস্তে আস্তে যে পায়ে ব্যাথা সে পায়ের ওপর কম ভর দিয়ে হাঁটছে। পিঁকের খুব আনন্দ সে মার চারপাশে ছুটোছুটি করে। মা ঘাসের ওপর গিয়ে বসে ।

তিনটি হাঁসের ছানা

কিন্তু , যা ভয় ছিল তাই হল। পাঁচিল পার করে চুপিচুপি সেই ছেলেটা। কী মুশ্‌কিল । ফ্যাকাসে পিঁক লুকিয়ে পড়ে। কিকি আর প্যাঁ শান্ত থাকে। অবাক হয়ে দেখে ছেলেটা যেন কি খুঁজে বেড়াচ্ছে ডোবার পাড়ে , ফুলের গাছের নীচে, ওদের দিকে তাকিয়ে দেখল না। মা আবার উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। মা হাঁটছে। ঘরে ফিরবে। ঘাস জমি পার করে যেই শক্ত জমিতে পা দিল...।উহ মা আবার পড়ে গেছে। ছেলেটা এদিকে তাকায়।এগিয়ে আসে। কিকি ঠোক্কর মারবার জন্যে দৌড় লাগায়।কিন্তু লম্বা লম্বা পা ফেলে ছেলেটা এগিয়ে যায়। মা এর কাছে দাঁড়ায়। ওরা তিন জন চিৎকার করে ,প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক মা মা মা প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক।

ওদের অবাক করে ছেলেটা মা'কে কোলে নেয়। আর আস্তে আস্তে ঘরের দিকে যায় । ঘরের ভেতর মা এর শোবার খড়ের গদিতে মা কে শুইয়ে দেয়। তারপর ওদের দিকে একবার তাকায় ,ডোবার দিকে একবার তাকায় মাথা নিচু করে আবার পাঁচিল টপকে চলে যায়। এই বার পিঁক বুঝতে পারে।

পরের দিন বিকেলে ছেলেটা মাঠে খেলতে যাবার আগে আবার ওদের তিন জনকে দেখতে পায়।আর অবাক হয়ে যায়। কিকি,প্যাঁ,পিঁক- তিনটি হাঁসের ছানা একটা লাল বল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর বলছে ,প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক এই যে ভালো ছেলে এই নাও তোমার বল প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক।

ছবিঃ ঈশিতা চন্দ্র

খুব ছোট থেকে পড়তে ভালবাসেন। তার থেকেই লেখা শুরু। ছোটদের জন্যে কিছু লেখা সব চেয়ে কঠিন। একটু চেষ্টা করছেন লিখতে।

More articles from this author

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা