সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
এক ঘড়া মোহর আর দুষ্টু পুরোহিত

বাড়ি ফিরে সে তার বৌকে সব ঘটনা খুলে বলল। তার বৌ-এর স্বভাবও তারই মত। এসব শুনে সে তক্ষুনি তার স্বামীর সঙ্গে বসে গেল কি ভাবে সেই টাকাগুলি আত্মসাৎ করা যায়, তার জন্য ষড়যন্ত্র করতে। কিছু পর পুরোহিত একটা মতলব ঠিক করল। তাদের ধর্মমত অনুযায়ী শয়তানের গায়ে থাকে একটা ছাগলের চামড়া, মুখে ছাগলের দাড়ি এবং মাথায় ছাগলের শিং। সে বৌকে জিজ্ঞাসা করল, “আমাদের একটা ছাগল ছিল না?” বৌ বলল, “হ্যাঁ, আছে তো। কি হবে সেটা দিয়ে?” “সেটাকে ভিতরে নিয়ে আয় তো”, বলে পুরোহিত তার সমস্ত পরিকল্পনা বৌকে খুলে বলল।

ছাগলটাকে এনে সেটাকে দুজনে মিলে কেটে ফেলল। তারপর তার চামড়াটা পশুটার গা থেকে খুলে নিজে পড়ল। এরপর ছাগলের শিং আর দাড়িটাও নিজের মুখে এঁটে নিল। এইভাবে সে নিজেকে শয়তানের মত করে সাজিয়ে তুলল।

মধ্যরাতে এই সাজে পুরোহিত গেল বুড়ো লোকটার বাড়িতে। সে শিং দিয়ে দরজায় ধাক্কা দিতে লাগল। এত রাতে দরজায় ধাক্কা আর আঁচড়ানোর শব্দ শুনে বুড়ো একটু অবাক হয়ে গেল। সে একটু গলা তুলে জিজ্ঞাসা করল, “কে ডাকে?”

“আমি শয়তান।”

বুড়ো তো ভয়ের চোটে সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরের নাম জপতে শুরু করল। শুনতে পেয়ে পুরোহিত গলা মোটা করে বলল, “ওসব ভগবানের নামটাম করে কোন লাভ হবে না। জগতের কেউ-ই আমার থেকে তোকে বাঁচাতে পারবে না। তোর অত্যন্ত দুরবস্থা দেখে, তোর জন্য আমি মাটির তলায় এক ঘড়া মোহর পুঁতে রেখেছিলাম। সেটা তুলে এনে তুই তোর স্ত্রীর শ্রাদ্ধশান্তি সব তো খুব ধূমধামের সঙ্গেই করলি দেখলাম। কিন্তু সব টাকা তো খরচ হয়নি। তবে বাকি টাকাটা এখন ফেরৎ দিচ্ছিস না কেন? শিগ্‌গির টাকাগুলো ফেরৎ দে বলছি, নইলে কিন্তু ঘো--র বিপদ হবে।”

ঘরের মধ্যে ঠক্‌ঠক্‌ করে কাঁপতে কাঁপতে বুড়ো ভাবতে লাগল, “আগে যখন আমার কাছে কোন টাকাপয়সা ছিল না, তখনও আমরা দুজন কোনরকমে খেয়েপরে থেকেছি। আর আজ তো আমি একলা, টাকাগুলো ফেরৎ দিলে আর বেশি খারাপ কি হবে? আমি ঠিক চালিয়ে নেব।” বাইরে কে দাঁড়িয়ে আছে দেখবার জন্য সে জানলা দিয়ে উঁকি দিল। দেখল, গায়ে ছাগলের চামড়া, মাথায় ছাগলের শিং, আবার দাড়িও রয়েছে, এরকম একটা ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। “ওরে বাবা, এইরকম চেহারা? এ শয়তান না হয়ে যায় না” – মনে হতেই বুড়ো প্রায় অজ্ঞান হয়ে যায় আরকি! সন্তর্পণে সে দরজা একটুকু ফাঁক করে টাকার ঘড়াটা বাইরে ছুঁড়ে দিয়ে দড়াম্‌ করে আবার দরজা বন্ধ করে দিল। একবারও চুপি দিয়ে দেখল না সত্যিই কে ঘড়াটা নিয়ে গেল।

আর বাইরে হল কি? এত সহজে কার্যসিদ্ধি হতে দেখে পুরোহিত তো খ্যাঁ খ্যাঁ করে হেসে গড়িয়ে পড়ল। দারুণ আনন্দে দুটো ডিগবাজিই দিয়ে দিল সেখানে। তারপর ঘড়াটা নিয়ে লাফাতে লাফাতে বাড়ির দিকে রওনা হল।

বাড়ি এসে শোবার ঘরের মেঝেতে যখন সে পুরো ঘড়াটা উপুর করে দিল, সারা মেঝেতে সোনার মোহর ঝর্‌ঝরিয়ে ছড়িয়ে পড়ল। তাই দেখে পুরোহিতের কি উল্লাস! সে একবার মোহরগুলির উপর গড়াগড়ি দিচ্ছে, আবার দুহাত দিয়ে মোহরগুলি তুলছে, ফেলছে, কি যে করছে, কেন করছে কিছুরই কোন মানে নেই। তার স্ত্রীও এসে তার মাতামাতিতে যোগ দিল। কিছুক্ষণ পর ক্লান্ত হয়ে সে তার স্ত্রীকে বলল ছাগলের চামড়াটা খুলে দিতে। কিন্তু কী আশ্চর্য বলতো! অনেক টানাটানি করেও চামড়াটা তার গা থেকে খোলা গেল না। শুধু তাই নয়, ছাগলের শিংটাও, দেখা গেল, আট্‌কে গেছে। না পেরে স্ত্রী শেষ পর্যন্ত রান্নাঘর থেকে মাংস কাটার ছুরি নিয়ে এল। সেটা দিয়ে কাটতে গিয়ে পুরোহিতের শরীর চিরে রক্ত ঝরতে লাগল। সে যন্ত্রণায় চিৎকার করতে লাগল; কিন্তু কিছুতেই তার গা থেকে সেই চামড়া বা শিং খোলা গেল না।

ছেলেমেয়েরা, ভাবতো, পুরোহিতের কি দশা? সারা জীবন সে যে লোকের সঙ্গে এত খারাপ ব্যবহার করেছে, আজ যে সে বুড়োকে এইভাবে ঠকাল, এর ফলেই কি সে সত্যিসত্যিই শয়তান হয়ে গেল?

 

 

(রুশ-উপকথা থেকে ভাবানুবাদ)

শুক্তি দত্ত ভালবেসে প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। রূপকথা, প্রাচীন সাহিত্য, দেশবিদেশের লোকসাহিত্য, গল্পকথা পড়তে ভালবাসেন। সেগুলো নিয়ে আলোচনা বা শিশুদের সেই গল্প শোনাতেও ভালবাসেন। প্রধানতঃ শিশুমনস্তত্ত্ব ও তাদের শিক্ষাসংক্রান্ত কাজে দীর্ঘকাল কাটিয়েছেন। সেটা শুধু পড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তিনি শিশু সাহিত্য, লোকসাহিত্য প্রভৃতিকে তাদের মূল্যবোধ বিকাশে কাজে লাগাতে চান।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা