সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
আনাড়ির কাণ্ডকারখানা

তখনও একা একা বইমেলায় যাওয়ার মতো বড়ো হইনি। মায়ের সঙ্গে যেতাম। কোনো এক বছর রাশি রাশি বইয়ের মধ্যে হারিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ একটা স্টলে ঢুকলাম যার নাম 'ভস্তক'। বই ঘাঁটতে ঘাঁটতে চোখ আর মন ভরে গেল এক অবর্ণনীয় ভালো লাগায়। সুন্দর সুন্দর রঙিন সব ছবি আর ঝকঝকে ছাপায় অবিশ্বাস্য কম দামে কী দারুণ সব বই—সোনার পেয়ালা, চড়ুইছানা, সার্কাসের ছেলে, আনাড়ির কাণ্ডকারখানা ১, ২, ৩ . . .। অন্যান্য আরো বইয়ের সঙ্গে সে বছর আমার সঙ্গে বাড়ি এল 'আনাড়ির কান্ডকারখানা' সিরিজের বেশ কয়েকটা বই। আর বইগুলো খুলেই আমি সোজা ঢুকে পড়লাম এক দারুণ রূপকথার দুনিয়ায়।

আনাড়ির কাণ্ডকারখানা

সে এক রূপকথার শহরে থাকত টুকুনরা। ফুলনগরী তার নাম। তারা ছিল একেবারে এইটুকুন, তাই সবাই তাদের বলত টুকুন। টুকুনদের প্রত্যেকের খুব মজার মজার নাম ছিল। যেমন সুরতান, ব্যস্তবাগীশ, তুলিবুলি, পিঠেপুলি, হয়ত, নয়ত—এমনি সব আজব নামের খোকন। টুকুনদের গল্পে যেসব খুকুদের দেখা মেলে তাদের নামগুলোও ভারি আজব। কারুর নাম কাঠবিড়ালি, কারুর নাম খরগোশ, কেউ আবার পরিচিত ফড়িং নামে। তবে খোকনদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল আনাড়ি নামের এক খোকন। সবাই তার নাম দিয়েছিল আনাড়ি, কারণ সে কিছুই জানত না।

কিন্তু না জানলে কী হবে, সব ব্যাপারে আনাড়ির ছিল খুব আগ্রহ। সব কাজে তাই সে এগিয়ে এসে অংশ নিতে চাইত। আর যেহেতু সে কিছুই জানত না, তাই শুরু থেকেই সেই কাজে একটার পর একটা ভুল করতে থাকত আর গোলমাল পাকাত। বাকি টুকুনরা তাই কেউ তাকে কোনো কাজে হাত দিতে দিত না।

আনাড়ির কাণ্ডকারখানা

একবার আনাড়ি ভাবল সে তুলিবুলি-র মতো আঁকিয়ে হবে। কিন্তু রং তুলি নিয়ে যেই সে আঁকতে শুরু করল, অমনি দেখা গেল শেষ পর্যন্ত সে খুবই খারাপ ছবি এঁকেছে।

ছবি আঁকিয়ে হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যেতে আনাড়ি ভাবল সে কবি হবে। রূপকথার সেই শহরের কবি ফুলকুমারের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করে আনাড়ির মনে হল, কবিতা লেখার মতো সহজ কাজ আর কিছুই হয় না। কিন্তু শব্দের সঙ্গে শব্দ মিলিয়ে ছন্দ তৈরি করতে গিয়েই যত গোল বাধল।

শেষমেষ আনাড়ি কি কবি হতে পারল? আনাড়ি আর কী কী অদ্ভুত কাণ্ড করল?

যদি খুব জানতে ইচ্ছে করে এই টুকুন বন্ধু আনাড়ির কথা তাহলে 'আনাড়ির কাণ্ডকারখানা' সিরিজের বইগুলোর পাতা উলটে দেখতে পারো। বরিস কালাউশিন-এর আঁকা মন মাতানো ছবি আর অরুণ সোম-এর সরল অনুবাদে আনাড়ি নিমেষেই হয়ে উঠতে পারে তোমার মনের মানুষ। মোট সতেরোটা বইয়ে তুমি দেখা পাবে আনাড়ি আর তার বন্ধুদের।

সেই ছোটবেলায়, যখন তোমার মত ছোট ছিলাম, সোভিয়েত ইউনিয়ন কাকে বলে সে-সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছিল না। আর একটা গোটা দেশও যে ভেঙে টুকরো টুকরো হতে পারে তা-ও জানা ছিল না। তাই আচমকা একদিন সেইসব কম দামি, ঝকঝকে ছাপার মন মাতানো বই আসা বন্ধ হয়ে যেতে মন যারপরনাই খারাপ হয়ে গেল। খালি মনে হতে লাগল, কেউ কি আর কোনোদিন এই বইগুলো ছাপবে না? কেউ না?

ঈশ্বরের আশীর্বাদের মতোই একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে জানতে পারলাম কিছু মানুষ এই হারিয়ে যাওয়া বইগুলোকে আবার ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছেন, তবে একটু অন্যভাবে।' সোভিয়েত বুক্‌স্‌ ইন বেঙ্গলি' (http://sovietbooksinbengali.blogspot.in) নামের ওয়েবসাইটটা খুললেই পাওয়া যাবে একের পর এক সেইসব রাশিয়ান বই। আর একটুও দেরি না করে বসে যাই ফেলে আসা শৈশবকে নতুন করে খুঁজে নিতে। এই ওয়েবসাইট থেকেই মন ভোলানো এইসব রাশিয়ান বইগুলোর জন্মের ইতিহাস জানতে পারি। জানতে পারি, ১৯৩১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রীয় প্রকাশন সমিতির উদ্যোগে বিদেশের বিভিন্ন ভাষায় সোভিয়েত সাহিত্যের আর রুশ ভাষায় বিদেশি সাহিত্যের অনুবাদ এবং একই রকম চিন্তাভাবনার বইপত্রের প্রচারের উদ্দেশ্যে মস্কোয় 'বিদেশি শ্রমজীবীদের প্রকাশন সমিতি' নামে একটা সংস্থা গড়ে উঠেছিল। ১৯৩৯ সালে সংস্থাটি নাম পালটে 'বিদেশি ভাষায় সাহিত্য প্রকাশালয়' এবং ১৯৬৩ সাল থেকে 'প্রগতি প্রকাশন' নামে পরিচিত হয়।

আনাড়ির কাণ্ডকারখানা

রুশ সাহিত্য ছিল মূলত মানবতাবাদী। তাই সারা দুনিয়া জুড়ে রুশ সাহিত্যের অগুন্তি পাঠক ছিলেন। গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে সোভিয়েত দেশের প্রকাশালয়টিতে স্থায়ী বাংলা বিভাগ গড়ে উঠেছিল। সেই সময় অনুবাদক হিসেবে আমাদের দেশ থেকে সেখানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন অরুণ সোম, ননী ভৌমিক, নীরেন্দ্রনাথ রায়, কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ও আরও অনেকে। দিনের পর দিন এঁরা ওই দেশে থেকে অনুবাদের কাজ চালিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে একে একে আরও অনেকে অনুবাদক হিসেবে যোগ দেন। আশির দশকে 'প্রগতি'-র অগ্রগতি এতদূর হয়েছিল যে বিশেষভাবে গল্প উপন্যাস এবং শিশু ও কিশোর সাহিত্য অনুবাদের জন্য ১৯৮২ সালে 'রাদুগা' নামে আরও একটা প্রকাশন সংস্থা গড়ে ওঠে।

তাহলে আর দেরি করে লাভ নেই। একদিন সময় করে বসে পড় 'সোভিয়েতবুক্‌স্‌ইনবেঙ্গলি' ওয়েবসাইট খুলে। এই সাইট থেকে 'আনাড়ির কান্ডকারখানা' সিরিজের বইগুলি বিনামূল্যে ডাউনলোড করতেও পারা যাবে। এখানে এই সাইট সম্পর্কে দুয়েকটা কথা বলতেই হয়। কলকাতার কয়েকজন উৎসাহী লেখক-পাঠক, যাঁরা বইপত্র খুব ভালবাসেন, তাঁরা এই ওয়েবসাইটটি পরিচালনা করেন। তাঁরা অনেক পরিশ্রম করে, অনেক যত্ন নিয়ে এইসব পুরনো বইগুলোকে স্ক্যান এবং ডিজিটাল ইমেজ এডিটিং করে করে উন্নত মানের পিডিএফ ফাইল বানিয়েছেন। ফাইলগুলি এতই ভাল যে চাইলে ভাল কাগজে প্রিন্ট করে নতুন বই বানিয়ে নেওয়া যাবে। বইগুলিকে নিজেদের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে স্ক্যান করতে দিয়েছেন সাইটের পরিচালকমন্ডলী এবং ভারত ও বাংলাদেশের বহু মানুষ। এই দারুণ সুন্দর সব পুরনো বইগুলিকে সহজেই আমাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এঁদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাই।

আনাড়ির বইগুলো পড়তে পড়তে দেখ তো একবার, ছোটবেলাটাকে একটু অন্যরকম লাগে কীনা !

ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র অনমিত্র রায়ের পথ চলার সঙ্গী গানের সুর,ছবির রং আর চারপাশ ঘিরে থাকা চেনা-অচেনা মানুষজন, পশুপাখি, গাছপালা—বিচিত্র জীবনধারা। কলম দিয়ে ছবি আঁকেন বাইরের জগৎ, মনের জগৎ-- দুইয়েরই। কখনো কবিতায়, কখনো গদ্যে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা