সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

আগে, আগে মানে বেশ কিছুদিন আগে, আমাদের এখনকার শোয়ার ঘর তখনকার রান্নাঘর ছিল। পাকা ছাদ নয়, লাইটরুফ। কাকের ক্রমাগত ঠোক্করে সে-ছাদে অনেক ছিদ্র। বর্ষায় সেই ছিদ্র বেয়ে জল পড়ে। টুপ টাপ, টুপ টাপ। তড়িঘড়ি ফাঁকা গামলা, বালতি নিয়ে এসে ছিদ্রর সমকোণে বসাতে হয়। চড়ার 'সা' নিমেষে খাদের 'সা'-তে পালটে যায়।

জলে ভিজে ভিজে ক্ষয়ে যাওয়া পুবের জানলার পাল্লা দুটো খুললেই রান্নাঘরে শিশু রোদ আসে। সে একদিন। জানলা খুলে আমি আর মা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি। মা বিড়বিড় করছে, 'জবাকুসুমসঙ্কাশং. . .', গ্যাসে চায়ের জল ফুটছে। হঠাৎ কোত্থেকে একটা মৌমাছি পাশের বাড়ির ছাদের ওপরের ডুমুর গাছটার ওপর উড়তে লাগল। আমাকে অবাক করে দিয়ে মা জিজ্ঞেস করল, 'আচ্ছা, এই ব্যস্ত মৌমাছিটাকে নিয়ে তুই কোনো কবিতা লিখতে পারবি?' অবাক হলেও সেদিন একটা কবিতা আমি লিখেছিলাম। ওই মৌমাছিটাকে নিয়েই। কতদিন হয়ে গেল। পুরোটা আর মনে নেই। খাতাটাও হারিয়ে গেছে বোধ হয়। শুধু শেষ চার লাইন আজও মনে আছে---
        . . .দিন চলে যায়
            নষ্ট সময়
            মানুষ দাঁড়ায়
            সময় দাঁড়াতে জানে না। . . .
দিন চলে গেল। কেউই দাঁড়ায়নি। মানুষও না, সময়ও নয়। কিন্তু, সময়টা কি সত্যিই নষ্ট হল? কে জানে!

সেই রান্নাঘরে টেবিলে বসে সকালের জলখাবার খেতে খেতে পুবদিকে নাকবরাবর তাকালে দেখা যেত, ওইইই দূরে হাওড়া ব্রিজের মাথা। সূর্যের আলো পড়ে চকচক করছে। যেন কলকাতার কাঞ্চনজঙ্ঘা। রান্নাঘরের উত্তরের দরজাটা খুলে কাকাদের অংশ লাগোয়া ছাদে এক পা বাড়ালেই বাঁ-পাশে উঠে গেছে লোহার রডের সিঁড়ি, তার বাঁ-দিকে লোহার রডের রেলিং, ডান দিকে কাকাদের রান্নাঘর। একবার সিঁড়ি বেয়ে তিনতলার ওই ছাদে উঠলেই কলকাতার কাঞ্চনজঙ্ঘার আরও পরিষ্কার, সুন্দর ভিউ। কিন্তু ন্যাড়া ছাদ, তাই আমরা, যারা ছোটো, কুচোকাচার দল, তাদের সেখানে ওঠা বারণ। আমাকে তাই রান্নাঘরের ভাঙা পাল্লার জানলা দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার টুকরো দেখেই খুশি থাকতে হত। কতদিন কেটে গেছে এই মুগ্ধতায়। তা ছাড়া, আর একটা ব্যাপারও ছিল। বন্ধুদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতার ছায়া। কেউ কেউ বলত, 'জানিস, আমাদের বাড়ির ছাদে উঠলে হাওড়া ব্রিজটা স্পষ্ট দেখা যায়।' কতদিন তাদের মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলেছি, 'আমাদের ছাদে ওঠার প্রয়োজন পড়ে না। আমি পাঁউরুটিতে মিক্সড ফ্রুট জ্যাম মাখিয়ে খেতে খেতে, ঘরে পাখা চালিয়ে, চেয়ারে বসে কাঞ্চনজঙ্ঘার মাথায় সোনারোদের ঝিলিক দেখি। অপূর্ব সে আলো।'

একদিন হঠাৎ দেখি আমার গর্বের চুড়োয় সোনারোদ নয়, কালো মেঘের আভাস। দু-তিন গলি পরের আম চারাটা বড়ো হয়ে গেছে। তার তো কোনো দোষ নেই। প্রকৃতির নিয়মে তার তো বড়ো হওয়ারই ছিল। তবু, তখনও সে ততটা বড়ো হয়নি যে, কলকাতার কাঞ্চনজঙ্ঘাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবে। একটু কষ্ট করে দু-পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে ডিঙি মেরে দাঁড়ালেই, কাঞ্চনজঙ্ঘার রোদমাখা চুড়োটা দেখা যেত। তবে, শুধু চুড়োটাই। বাকিটা যে সবুজ পাতায় ঢেকে গেছে। অথবা, আমার সাধের কাঞ্চনজঙ্ঘায় গলন শুরু হয়েছে।

এরপর একদিন দু-বাড়ি পরের একতলা বাড়িটা দোতলা হল। সুন্দর, মিষ্টি গোলাপি রং। তারও কিছুদিন পর, গোলাপি দোতলার সামনে জন্ম নিল তিনতলা বাড়িটা।
এখন শুধু ছাদের তারে তারে লাল, নীল, রংবেরঙের শাড়ি জামা।

কলকাতার কাঞ্চনজঙ্ঘা এক অনন্ত ছুটিতে চলে গেছে।

 

ছবিঃ ঈশিতা ছেত্রী

ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র অনমিত্র রায়ের পথ চলার সঙ্গী গানের সুর,ছবির রং আর চারপাশ ঘিরে থাকা চেনা-অচেনা মানুষজন, পশুপাখি, গাছপালা—বিচিত্র জীবনধারা। কলম দিয়ে ছবি আঁকেন বাইরের জগৎ, মনের জগৎ-- দুইয়েরই। কখনো কবিতায়, কখনো গদ্যে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা