সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
রামধনুর জন্ম

পৃথিবী যখন সদ্যোজাত, সেই সময়ে একদিন নানাবোজো বিশাল ঝরনাটার ধারে তার বাড়ির জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকাতে খেয়াল করল তার বাগানের সবকটা ফুলের রংই এক— ঘি রং। ব্যাপারটা তার কাছে খুব একঘেয়ে, ম্যাড়মেড়ে বলে মনে হল। সে ভাবল, একটু কিছু বদল আনা দরকার। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। সঙ্গেসঙ্গে সে তার সব রংগুলো এক জায়গায় জড়ো করে, তুলিগুলো নিয়ে বাগানে বেরিয়ে এল।

লম্বা লম্বা ঘাসের মধ্যে বসে নানাবোজো চারপাশে তার লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল আর বেগুনি রঙের বাটিগুলো সাজাতে লাগল। আর তারপরেই সে শুরু করল তার বাগানের ফুলগুলোকে বিভিন্ন রঙে রাঙাতে। ভায়োলেট ফুলগুলোকে সে গাঢ় নীল রং করল আর টাইগার লিলিগুলোকে কমলা, মাঝে ছোট্ট ছোট্ট বাদামি ফুটকি। গোলাপগুলোকে সে লাল, গোলাপি আর নীলচে লাল রং করল। তার মনে যা যা রং ভেসে এল তার প্রত্যেকটা দিয়ে সে প্যানজিগুলোকে রঙিন করে তুলল। তারপর প্রত্যেকটা ড্যাফোডিলকে সে উজ্জ্বল হলুদ রং করল। সূর্য ভায়ার দারুণ ঝকমকে আলোয় কাজ করতে করতে নানাবোজো আনন্দের সঙ্গে নিজের মনে গুনগুন করতে লাগল।

মাথার ওপর দুটো ছোট্ট ছোট্ট গায়ক পাখি পরস্পর খেলা করছিল। ওদের মধ্যে একজন বাগানের এদিক থেকে ওদিক তার বন্ধুকে তাড়া করছিল। আবার তার পর মুখ ঘুরিয়ে অন্য পাখিটা উলটো পথে একে ধাওয়া করছিল। টুইটি-টিক টুইটি-টিক করে ডাকতে ডাকতে যেই একজন আকাশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তের দিকে উড়ে গেল অমনি অন্যজন টিকটি-টুই টিকটি-টুই করে ডাকতে ডাকতে ঝলমলে রোদ্দুরের মধ্যে তাকে তাড়া করল। কখনো কখনো নানাবোজো হাত দিয়ে রোদ্দুর আড়াল করে ওপরের দিকে তাকায় . . . ওপরে, ওই সীমাহীন নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট পাখি দুটোকে আপনমনে খেলা করতে দেখে। তারপর সে আবার তার কাজে ডুবে যায়, সাদা ডেইজিগুলোর মাঝখানটা হলদে রং করতে থাকে। এদিকে, তার মাথার ওপর সেই পাখি দুটো ঠিক করে তাদের মধ্যে কে সবার আগে নীচের সবুজ মাঠে ঝাঁপ দিতে পারে তা পরীক্ষা করবে। যেই না ভাবা, অমনি ওদের মধ্যে একজন উড়তে উড়তে ভাসতে ভাসতে নীচে নেমে এল তবে মাটি ছোঁয়ার ঠিক আগে দিল এক ঝটকা। নানাবোজোর পাশ দিয়ে উড়ে যাবার সময়, তার ডান পাখাটা লাল রঙের বাটিটায় ডুবে গেল। এর পরেই যখন অন্য গায়ক পাখিটা সেই সবুজ ঘাসের দিকে ঝাঁপ দিল, তার বাঁ পাখাটা কমলা ডিবেটায় ডুবে গেল।

নানাবোজো পাখি দুটোকে খুব একচোট বকাবকি করল বটে, কিন্তু তারা যেখানে বসে নানাবোজো ছবি আঁকছিল সেই জায়গায় বার বার ঝাঁপ দেওয়া আর পরক্ষণেই আকাশে উড়ে যাওয়ার খেলাটা চালিয়েই যেতে থাকল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের পাগুলো আর ডানাগুলো সবকটা রঙে রঙিন হয়ে উঠল। শেষমেষ নানাবোজো উঠে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে হুসহাস করে পাখি দুটোকে তাড়াতে লাগল।

এবার পাখি দুটো অনিচ্ছুকভাবে নানাবোজো আর তার রঙের বাটিগুলির থেকে দূরে চলে গেল। আবার তারা খেলায় মাতল। একবার এদিকে ভেসে আসে তো সঙ্গেসঙ্গে ওদিকে উড়ে যায়। এভাবে খেলতে খেলতে একসময় তারা নানাবোজোর বাড়ির পাশের বিশাল ঝরনাটার ওপর উড়তে লাগল। টুইটি-টিক, টুইটি-টিক করতে করতে একজন ঝরনাটার ছিটকে আসা জলকণার মধ্যে দিয়ে উড়ে গেল। সারা আকাশ জুড়ে সে একটা লম্বা, লাল দাগ রেখে গেল। টিকটি-টুই, টিকটি-টুই করতে করতে অন্যজন সেই জলকণার ভেতর দিয়ে তার বন্ধুকে তাড়া করল, আর সেইসঙ্গে আকাশের বুকে একটা কমলা দাগ রেখে গেল। এর পর তারা ফেরার পথ ধরল। এবার তাদের মধ্যে একজন আকাশের বুকে হলদে আর অন্যজন একটা সুন্দর নীল-বেগুনি দাগ রেখে গেল। তারা যত এদিক ওদিক ছুটোছুটি করে একে অন্যকে ধাওয়া করতে লাগল, আকাশের গায়ে রংগুলো একটু একটু করে স্পষ্ট, আরও জ্বলজ্বলে হয়ে উঠল। সূর্য ভায়া যেই না রংগুলোর ওপর আলোর ছটা ফেলেছে, অমনি তারা ঝরনার জলকণার মধ্যে দিয়ে ঝিকমিক ঝিকমিক করে উঠল।

রামধনুর জন্ম

এদিকে নীচে, যখন তার বাগানের ওপর অসাধারণ উজ্জ্বল সব রং ছড়িয়ে পড়ল তখন নানাবোজো খুশিতে মুখ তুলে ওপর দিকে তাকাল। ঝরনার ওপরে আকাশ জুড়ে একটা ঝকমকে, জমকালো লাল আর কমলা আর হলদে আর সবুজ আর নীল আর বেগুনি রঙের খিলানের মতো তোরণ চিকমিক চিকমিক করছে। নানাবোজো মজাদার ছোট্ট গায়ক পাখি দুটোর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল আর বলল, "তোরা একটা রামধনু বানিয়েছিস যে রে!"

নানাবোজো এতটাই খুশি হল যে সে তার ঝরনার ওপর চিরকালের মতো রামধনুটাকে ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেল। ঝরনার জলকণা আর সূর্য ভায়ার দৌলতে রামধনুটার রংগুলো ঝিকমিক ঝিকমিক করে কাঁপতে লাগল। সেই তখন থেকে আজ পর্যন্ত যখনই সূর্যভায়া বৃষ্টি বা জলকণার ওপর তার আলো ফেলে, একটা সুন্দর রামধনু তৈরি হয়। এটা সেই সুন্দর রামধনুটারই জলছবি যেটা আজও নানাবোজোর বাড়ির পাশের সেই ঝরনাটার ওপর দেখতে পাওয়া যায়।


( আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের 'গ্রেট লেক্‌স্‌' অঞ্চল এবং কানাডার অনেকখানি অংশ জুড়ে বসবাসকারি বিভিন্ন আদিম জনগোষ্ঠীগুলিকে একত্রে বলা হয় 'আনিশিনাবেগ'। এই আদিম অধিবাসীদের অনেকগুলির মধ্যে একটি হল ওজিবওয়ে গোষ্ঠী। এই গল্পটি তাঁদের বহুযুগ ধরে চলে আসা লোককথার অন্তর্গত সৃষ্টিরহস্যের বিভিন্ন গল্পগুলির মধ্যে একটি। নানাবোজো হল ওজিবওয়েদের পুরাণের গল্পগুলির সাথে জুড়ে থাকা এক জনপ্রিয় মজাদার চরিত্র। অন্যান্য গোষ্ঠীগুলির কাছে নানাবোজো আরো অন্য অনেক নামে পরিচিত। )


ছবিঃ চন্দ্রিমা ঘোষ

ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র অনমিত্র রায়ের পথ চলার সঙ্গী গানের সুর,ছবির রং আর চারপাশ ঘিরে থাকা চেনা-অচেনা মানুষজন, পশুপাখি, গাছপালা—বিচিত্র জীবনধারা। কলম দিয়ে ছবি আঁকেন বাইরের জগৎ, মনের জগৎ-- দুইয়েরই। কখনো কবিতায়, কখনো গদ্যে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা