-”ওহিয়া মানে তোমার ভাই এর যে নাম?” আমি বললাম।
স্যাম মাথা নাড়ল, “ ওহিয়া একজন হ্যান্ডসাম বীর যোদ্ধ্বা ছিল, যে সুন্দরী মেয়েটিকে সে ভালবাসত, তার নাম ছিল লেহুয়া, দুজনে খুব সুখীই ছিল, বাধ সাধল লাভা ও আগুনপাহাড়ের দেবী পেলে, সে সুন্দর ওহিয়াকে খুব ভালবেসে ফেলল, ওহিয়া তাকে ভাল না বাসলে সে ঈর্ষায় বোধবুদ্ধি হারিয়ে তাকে গাছ বানিয়ে দিল। পরে লেহুয়া দেবতাদের কাছে বিচার চাইলে তারা তাকে সেই গাছের ফুল করে দিল। আর এর পর থেকে, ওহিয়া লেহুয়া গাছটি যেন পেলে দেবীকে উপহাস করে তার টাটকা লাভার উপর জন্মে ওঠে, যখন অন্য কোনো গাছ সেখান জন্মাতে পারে না। কেমন গল্পটা?”
আমি বললাম “কবিতার মত সুন্দর, এটা নিশ্চই উপকথা”
স্যাম হেসে বলল “কেন আমি বানাতে পারিনা? এতোটাই নিরস ভাবো আমাকে”
দুজনেই হেসে উঠলাম।
সমু বলল-”তাহলে ব্যাপারটা এরকম দাঁড়াল, যে সেই জায়গাটার কালচে মাটির লাভা ফ্লো খুব প্রাচীন নয়”।
হ্যাঁ,দাদু বললেন-তবে প্রাচীন বলতে তুমি শতখানেক নাকি হাজারখানেক বোঝাচ্ছ সেটা তো জিওলজিস্ট বলতে পারে।এখানে বেশীরভাগ দ্বীপই অবশ্য ভলক্যানিক, সেটা খুব আশ্চর্যের নয়, কিন্তু স্যামের মতে ঐ নির্দিষ্ট গাছ ছাড়া ওখানে বাকি ভেজিটেশন গজিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, কারন নতুন লাভা ফ্লো এর উপর প্রথমে এটি গজিয়ে ওঠে ও অন্যদের সুবিধা করে দেয়, ঠিক যেমন বীর সৈনিক নতুন দেশ জয়ের পর সাধারন মানুষ বসতি গড়ে।
এবার আমি আশ্চর্য হয়ে দেখলাম স্যাম বড় গর্তগুলোর দিকে খুব সতর্কপায়ে এগোচ্ছে, আমাকে হাত নেড়ে আসতে নিষেধ করল। একটা কাপড়ের লম্বা প্রান্ত আগুন জ্বালিয়ে গর্তে নামিয়ে দিল, প্রায় সাথে সাথে দেখলাম কাপড়টা সে টেনে তুলল, নিভে যাওয়া কালো কার্বন।
আমার কাছে এসে বলল- “নীচু জায়গা এভয়েড করবে, এখানে মাটি থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বেরোচ্ছে, মাত্রা এতো বেশী যে মারা পরবে। গাছপালা তাই জন্মায়নি প্রায়””।””
সে রাত্রে সমুদ্রের ধারে আগুন জ্বেলে বসে ডিনার সারলাম, তখনই স্যাম আমাকে দুধ চিনি ছাড়া কফি খাওয়ায়, তার মতে এতে ঘুম গভীর হয় না, প্রথমদিন তো জঘন্য লেগেছিল,পরে কি করে যেন অভ্যেস হয়ে গেল। এই সময় পরদিন অন্যদিকটা দেখার প্ল্যানটাও স্যাম সেরে নিল, কাল বিকেলের মধ্যে আমরা ফিরেও যাব ঠিক হল। রাতে তাঁবুতে শুয়ে খুব ভাল ঘুম হলো না, দিনে যেটা অনুভব করিনি রাত্রে সেই গা ছমছমে ভাবটা স্বস্তি দিচ্ছিল না আমাকে অথবা কফি এফেক্ট। আলো ফুটতেই ঘুম ভেঙে গেল , স্যাম বেশ ঘুমোচ্ছে দেখলাম, আমি তাঁবুর বাইরে এলাম। সমুদ্রের হাওয়ায় একটু এক্সেরসাইজ করছিলাম, হঠাৎ মনে হল পিছন দিকে একটু অন্যরকম কিছু দেখলাম, ঘুরে দেখি দূরে পশ্চিমদিকে একটু উঁচু জায়গায় একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। খুব অবাক হয়ে আমি ভালোভাবে দেখার জন্যে কয়েক পা এগোতেই লোকটা একটা বড় পাথরের আড়ালে সরে গেল। আমি তাড়াতাড়ি স্যামকে জাগিয়ে বললাম ব্যাপারটা। সে বেশ চিন্তিত মুখে বলল যে এরকমটা সে আশঙ্কা করেছিল কেননা এখানকার দ্বীপগুলোর ওপর দখলদারির জন্যে অনেক ঝামেলা চলছে, লোকটা কোনো ইউনিফর্মে ছিল কিনা সে জানতে চাইল। তখন আমি বুঝলাম আসল কথাটাই বলিনি, মানুষটা একজন নেটিভ পলিনেশিয় ছিল। স্যাম বলল- কিভাবে বুঝলে এতো দূর থেকে?
আমি বললাম- লোকটা তো এখানকার ট্র্যাডিশ্যানাল পোষাকে ছিল। যেরকম সামোয়াতে ওহিয়ার বাড়ির দেওয়ালে টাঙানো দেখেছি। বর্ননা শুনে স্যাম তো বেজায় চোটে গেল, ভাবল আমি তাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছি।