। পঞ্চম দৃশ্য ।
(যতীন মাটিতে শুয়ে আছে। বোঁ বোঁ করে কিসের শব্দ। সাধের ঘুড়িটা গোঁৎ খেয়ে কোলের ওপর পড়ল। ঘুড়ি যেন বলছে, তুমি আমাকে যত্ন করেছ, তাই আমি তোমাকে সাহায্য করতে এসেছি। শিগ্গির আমার ল্যাজটা ধরো। যতীন ঘুড়ির লেজ ধরল। ঘুড়ি ওকে নিয়ে শোঁ করে আকাশে উঠতে গেল, পারল না। ঘুড়ির লেজ ধরে যতীন মঞ্চের এক পাশ থেকে অন্য পাশে ছুটে যাবে। দরজিরা ঘুড়ির সুতো কাটতে ছুটে আসবে। তাদের হাতে বড়ো বড়ো কাঁচি।)
দরজিরা : এই ধর ধর ধর ধর। ঘুড়ির সুতোটা এক্ষুনি কেটে দে।
প্রথমজন : (হাঁপাতে হাঁপাতে) ঘুড়িটাকে ধরতে পারলে তবে না।
দ্বিতীয়জন : ধরতেই হবে।
তৃতীয়জন : যে করেই হোক ধরতেই হবে।
চতুর্থজন : থামলে তো ভাই চলবে না।
প্রথমজন : ওই কথাটি বলবে না। (আওয়াজ ওঠে চলবে না, চলবে না।)
(হৈ হট্টগোলের মধ্যে, আলোর ওঠানামার মধ্যে দেখা যাবে যতীন সিঁড়ির নীচে শুয়ে আছে, তার পাশে তার ঘুড়ি। যতীন উঠে বসে।)
যতীন : (মাথায় হাত দিয়ে) উঃ মাথায় বড্ড ব্যাথা। ভয়নক বেদনা, মাগো মা।
(যতীনের মায়ের প্রবেশ)
মা : আহা বাছা, সিঁড়ি দিয়ে পড়ে গিয়েছ বুঝি?
যতীন : কিছু মনে নেই মা। কোথায় ছিলাম এতক্ষণ, তোমাকে কী বলব!
মা : সিঁড়ি দিয়ে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ছিলে যে!
যতীন : তা নয় বুঝলুম, তবে চটির একটা পাশ হাঁ করে ছিল, সেটি তো দেখতে পাচ্ছি না।
মা : কী জানি বাপু! এসব তো তুমিই ভালো বুঝবে।
যতীন : কিন্তু মা, সেই মুচিদের, দরজিদের দেখতে পাচ্ছি না যে!
মা : ওরা এখানে থাকে? ওরা যার যার কাজে লেগে আছে। তোমার মতো আরও কত যতীনের চটিজুতো ধুতি সেলাই করতে হবে না?
যতীন : ঠিক বলেছ মা । পৃথিবীতে কি আর একটা যতীন আছে?
মা : তাই বলে আমার যতীন তো আর ফ্যালনা নয়। (মা ওকে আদর করে।)
(কিছুদিন ভুগে যতীন সুস্থ হয়। আলোর পরিবর্তন বোঝাতে হবে।)
যতীন : মা এখন আমি ঠিক হয়ে গেছি।
মা : আহা বাছা কত দুর্বল হয়ে গেছে। সে ফুর্তি নেই, লাফাঝাপিয়ে চলা নেই, কিছুই নেই।
যতীন : তা নইলে একজোড়া জুতো চারমাস যায়?
মা : (হাসতে হাসতে) এ ব্যাপারটা তো ভেবে দেখিনি!
যবনিকা
ছবিঃচন্দ্রিমা ঘোষ