সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
কোকো

মাত্র কিছুদিন আগেই গেল দুর্গাপুজো। আর দেবীপক্ষ শুরু হওয়ার ঠিক আগের দিনটিকে বলা হয় 'মহালয়া'। এই দিনে হিন্দু ধর্মের মানুষদের মধ্যে অনেকেই তর্পণ করেন। বলা হয়, এই দিনে আমাদের পূর্বপ্রজন্ম আমাদের কাছে আসেন, গ্রহণ করেন জল। বছরের পর বছর, আমাদের সবথেকে বড় উৎসবের প্রাক্কালে, এই নিয়ম পালন করে—আসলে— আমরা তাঁদের মনে রেখে দেওয়ার অভ্যাসটা বজায় রেখে যাই, নিজেদেরকে ভুলে যেতে দিইনা। আবার কালী পুজোর ঠিক আগের সন্ধ্যেয়, যেদিনটি ভূত চতুর্দশী নামে পরিচিত, সেদিনও বাড়ির বিভিন্ন দরজায় যে চৌদ্দ প্রদীপ জ্বালানো হয়, তার পেছনেও রয়েছে এমনই এক ভাবনা — আমাদের পূর্বপ্রজন্ম, যাঁরা এইদিনে পরলোক থেকে নেমে আসেন আমাদের দেখতে, তাঁদের পথ দেখানোর জন্যই নাকি প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখতে হয়। এই কাজগুলির পেছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা যাই থাকুক না কেন, সেসবের খোঁজ রেখে বা না রেখে এই প্রথাগুলিকে উৎসাহভরে পালন করে থাকেন বহু মানুষ। আনন্দ উৎসবের মাঝেও যাতে পূর্বপ্রজন্মকে ভুলে না যাই, নিজেদের পারিবারিক বন্ধন যেন ভুলে না যাই — এই ভাবনাটাই কাজ করতে থাকে।

আর এমন ভাবনা শুধু আমাদের দেশের বা হিন্দু ধর্মের মানুষদের মধ্যে নেই। প্রায় একই রকম ভাবনায় নভেম্বর মাসের ১ তারিখে, খ্রীষ্ট ধর্মের মানুষদের একাংশ পালন করেন All Souls' Day। নভেম্বরের ১ এবং ২ তারিখে মেক্সিকোর মানুষেরা উদযাপন করেন Día de los Muertos/ Día de Muertos/ Day of the Dead বা 'মৃতদের দিন'। আবার তেমনই, ৩১ অক্টোবর তারিখে, 'হ্যালোউইন' নামের যে বিদেশি পার্বন নিয়ে ইদানীং এত মাতামাতি হয়, তার সঙ্গে আদতে 'ভূত চতুর্দশী' উদযাপনের মিল খুব বেশি ।

কোকো 'কোকো' ছবিতে সাজানো 'অফ্রেন্দা'

অ্যানিমেটেড ছবি 'কোকো' নিয়ে আলোচনা শুরু করার আগে বিশ্বের নানা ধরনের উৎসব পালন করা নিয়ে এত কথা লিখলাম কেন? এর কারণ এই যে, এই দারুণ মনমাতানো অ্যানিমেটেড ছবিটি তৈরিই হয়েছে Día de los Muertos/ Day of the Dead -কে ঘিরে। কী হয় ঠিক এই উৎসবে? মেক্সিকোর মানুষেরা এই উৎসবের সময়ে নিজেদের বাড়িতে তৈরি করেন 'অফ্রেন্দা ( Ofrenda) ' নামের একাধিক ধাপযুক্ত মঞ্চ, যেখানে সাজিয়ে রাখা হয় পরলোকগত প্রিয় মানুষদের ছবি। সামনে সাজিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের প্রিয় খাদ্য, জল ও মিষ্টি; মঞ্চটি সাজানো হয় মোমবাতি আর উজ্জ্বল কমলা ও হলুদ রঙের গাঁদাফুল (cempasúchil) দিয়ে। বাড়ির দরজা থেকে সেই মঞ্চ অবধি ছড়িয়ে দেওয়া হয় গাঁদাফুলের পাপড়ি, যেগুলি পথ দেখাবে প্রিয় আত্মাদের। ঠিক এমন ভাবেই সমাধিক্ষেত্রে সাজানো হয় সমাধিগুলি। তবে এই উৎসব একেবারেই গুরুগম্ভীর মেজাজের হয় না। বরং পরিবারের সবাই এক সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করে, মড়ার খুলির আকারের মুখোশ পরে, একে অপরকে মড়ার খুলির আকারের মিষ্টি উপহার দিয়ে, মজা করে কাটানো হয়। এই সময়ের আরও একটি জনপ্রিয় নিয়ম হচ্ছে চেনা পরিচিত জীবিত মানুষেরা কে কী ভাবে মারা যেতে পারেন, সেই বিষয়ে মজাদার কবিতা লেখা। এই কবিতাগুলি calaveritas নামে পরিচিত এবং স্কুলের ছেলেমেয়েরাও এমন সব কবিতা লেখার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।

'কোকো' নামের এই অ্যানিমেটেড ছবিটি আমাদের নিছক এক পারিবারিক গল্প বলে না, আমাদের পরিচিত করায় পৃথিবীর বিপরীত গোলার্ধের একটা একেবারে নতুন, অন্যরকম — তবুও খানিক চেনা-চেনা ভাবনার — সংস্কৃতির সঙ্গে। অন্যান্য অনেক অ্যানিমেটেড ছবির তুলনায়, এই দিকটাই 'কোকো' ছবিটিকে একেবারে আলাদা করে রেখেছে। এই ছবির নির্মাতারা বহুদিন ধরে মেক্সিকোর বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে এবং থেকে, সেখানকার মানুষদের জীবনযাত্রা কাছ থেকে দেখে, মেক্সিকোর সংস্কৃতির প্রতি সম্মান রেখে তারপরে এই ছবি নির্মাণ করেছেন।

কোকো 'কোকো' ছবিতে Día de los Muertos উদযাপনে সাজানো কবরখানা

মেক্সিকোর পটভূমিতে নির্মিত এই ছবির সমস্ত চরিত্রের জন্য ভয়েস ওভার করেছেন অ্যান্থনি গন্‌জালেজ, গেল গার্সিয়া বার্নাল, আলান্না উবাখ, বেঞ্জামিন ব্রাট, রেনি ভিক্টর সহ একাধিক দক্ষিণ আমেরিকার বাসিন্দা বা সেখান থেকে আসা অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। এই কথাটি আলাদা করে জানানোর কারণ এই যে, হলিউডে সুবিশাল বাজেটে এমন 'all Latino' , বা শুধুমাত্র রঙিন চামড়ার কলাকুশলীদের নিয়ে ছবি খুব কমই তৈরি হয়ে থাকে । ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ১০৫ মিনিটে, ইংরেজি ভাষার এই ছবি নির্মাণ করেছেন পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিওজ; সঙ্গে প্রযোজনা করেছে ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্স।

কোকো মিগেল

মিগেল রিভেরা নামে ছেলেটার বয়স বারো। সে থাকে মেক্সিকোর সান্তা সিসিলিয়া নামের এক ছোট শহরে । মা-বাবা- ঠাকুমা-কাকা-কাকিমা-ভাই বোন এবং বাবার দিদিমা কোকোদিদিমাকে নিয়ে মিগেলের আছে এক জমজমাট পরিবার। মিগেল গান গাইতে খুব ভালোবাসে। সে মনে মনে স্বপ্ন দেখে, বিখ্যাত গায়ক এরনেস্তো দে লা ক্রুজের মত খুব জনপ্রিয় এবং সফল গায়ক হবে। এরনেস্তো দে লা ক্রুজ ছিলেন মিগেলের শহরেরই বাসিন্দা। তাঁর মূর্তি, তাঁর ব্যবহার করা গিটার রাখা আছে শহরের কবরস্থানের মাঝে নির্মিত তাঁর স্মৃতিসৌধে ।

কিন্তু, মিগেলের পরিবারের কেউ গান-বাজনা পছন্দ করেন না। সঠিক করে বলতে গেলে, মিগেলের পরিবারে গানবাজনা একেবারে নিষিদ্ধ। মিগেলের ঠাকুমার গানের প্রতি এমনই রাগ যে বাড়ির পাশের গলি দিয়ে কেউ গান গাইতে গাইতে গেলেও তেড়ে মারতে যান। মিগেলের পরিবারের নিজস্ব জুতোর ব্যবসা আছে। তার বাড়ির সব্বাই এই জুতোর ব্যবসায় কাজ করে। মিগেল নিজে করে পথচলতি মানুষের জুতো পালিশ করার কাজ। এই গানবাজনার প্রতি বিরক্তি আর জুতোর ব্যবসার মধ্যে একটা যোগ আছে অবশ্য। মিগেলের ঠাকুমার যিনি দাদু, অর্থাৎ তার কোকোদিদিমার যিনি বাবা, সেই মানুষটির গানবাজনা নিয়ে থাকতে পছন্দ করতেন । তিনি চেয়েছিলেন একজন জনপ্রিয় গায়ক হতে। তাই তিনি তাঁর স্ত্রী ইমেল্‌দা আর ছোট্ট মেয়ে কোকোকে বাড়িতে রেখে ভাগ্যের সন্ধানে বেরিয়ে যান। কিন্তু তিনি আর কোনোদিন ফিরে আসেননি। দুঃখে, অভিমানে ইমেল্‌দা নিজের জীবন থেকে গান-বাজনার সমস্ত চিহ্ন মুছে ফেলেন । এমনকি ইমেল্‌দা আর কোকোর সঙ্গে কোকোর বাবার যে ছবি ছিল, সেই অংশটাকেও ছিঁড়ে ফেলে দেন। তিনি জুতো বানানোর কাজ শিখে সেই ব্যবসা শুরু করেন। তিনি নিজের মেয়ে কোকোকে জুতো তৈরি করতে শেখান। তারপরে একে একে কোকোর স্বামী এবং ছেলেমেয়েরা সবাই এই কাজই শিখে পারিবারিক ব্যবসাকে বড় করে তোলেন। কিন্তু ইমেল্‌দার শর্ত মেনে বাড়ির কেউ আর গানবাজনার কথা ভুলেও মনে আনে না।

এহেন বাড়িতে যেদিন মিগেলের ঠাকুমা জানতে পারেন যে মিগেল লুকিয়ে একটা গিটার যোগাড় করে, চুপিচুপি ভিডিও ক্যাসেট চালিয়ে, নিজে নিজে এরনেস্তো দে লা ক্রুজের মত করে গিটার বাজাতে আর গাইতে শিখছে, সেদিন তিনি খুব রেগে গিয়ে সেই গিটার ভেঙে ফেলেন। সেই দিনটা ছিল মেক্সিকোর সবথেকে বড় বার্ষিক উৎসব Día de los Muertos/ Day of the Dead বা 'মৃতদের দিন' । রাগে দুঃখে বাড়ির বড়দের কথা না মেনে মিগেল বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে যায় শহরের মাঝখানের প্লাজায়। সেখানে সেই রাতে হবে গানের প্রতিযোগিতা। কিন্তু মিগেলের গিটার তো ভেঙে গেছে! আর গিটার না থাকলে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া যাবে না। অন্য প্রতিযোগিরা কেউ রাজি হল না মিগেলকে অল্প সময়ের জন্য গিটার ধার দিতে। তাই মিগেল ঠিক করল, স্মৃতিসৌধে রাখা দে লা ক্রুজের ব্যবহার করা গিটারটাই খানিক্ষণের জন্য নেবে আর গান গাইবে। সুযোগ বুঝে জানলা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ,সেই গিটারে সুর ছোঁয়াতেই ঘটে গেল এক আশ্চর্য ঘটনা । মিগেল বুঝতে পারল, তাকে চোর ভেবে খুঁজতে এলেও, আশেপাশের মানুষেরা তাকে আর দেখতে পাচ্ছে না। কিন্ত... সে দেখতে পেল আর মুখোমুখি হল তার পরিবারের পরলোকগত পূর্বপুরুষ ও পূর্বনারীদের।

কোকো মিগেল ও তার পূর্বপ্রজন্ম

আর তারপরে কী হল? নিজের পূর্বপ্রজন্মের হাত ধরে, গাঁদাফুলের পাপড়ি দিয়ে তৈরি এক অলৌকিক, নরম সেতু পেরিয়ে মিগেল গিয়ে পড়ল মৃতদের দুনিয়ায় ( Land of the Dead) । সেখানে একাধিক রোমাঞ্চকর ঘটনার মধ্যে দিয়ে মিগেল খুঁজে পেল তার সেই হারিয়ে যাওয়া পূর্বপুরুষ - তার কোকোদিদিমার বাবা, হেক্টর রিভেরাকে; মিলিত করল বিচ্ছিন্ন পরিবারকে আর শাস্তি দিল এক দুষ্টু লোককে, যার কারণেই হারিয়ে গেছিলেন হেক্টর রিভেরা। সবথেকে বড় কথা, মিগেল পেল গান গাইবার আশীর্বাদ - যে গানের সুর বইছে তার শরীরে।

কী করে ঘটল এমন সব ঘটনা, জানা যাবে অ্যানিমেটেড ছবি 'কোকো' দেখে নিলে। লি আঙ্করিচ, আদ্রিয়ান মোলিনা, ম্যাথিউ অল্ড্রিচ আর জেসন কাত্‌জ্‌ যৌথভাবে এই ছবির গল্প লিখেছেন। ছবিটির পরিচালনা করেছেন লি আঙ্করিচ। একাধিক পুরস্কার পাওয়া এই ছবিটি বাণিজ্যিকভাবেও খুব সফল হয়। এর গল্প, অ্যানিমেশন, গান এবং সর্বোপরি, মেক্সিকোর সংস্কৃতিকে যথাযথ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ছবিটি প্রশংসা পায়।

কোকো মৃতদের দেশ

'কোকো' কিন্তু সাধারণভাবে পরিচিত হাড় হিম করা ভূতের গল্প নয়, বা এই ছবির ভূতেদের দেখে ভয় পাওয়ার কোনো অবকাশই নেই । বরং মেক্সিকোর সংস্কৃতিতে পরিবার, জীবন, মৃত্যু এবং পরকাল নিয়ে যে আলাদা রকমের ভাবনা রয়েছে, তাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে এই গল্প। ছোটদের জন্য নির্মিত ছবিতে মৃত্যু, আত্মা, পরলোক ইত্যাদি বিষয়গুলি সরলভাবে মিশিয়ে দেওয়া সহজ কাজ নয়। কিন্তু এই ছবিতে সেই কাজটি খুব ভালোভাবেই করতে পেরেছেন ছবির নির্মাতারা। এই ছবিতে পরলোক বা Land of the Dead- এর ঝলমলে, অত্যাধুনিক রূপ — জীবিত মানুষে ভরা ধুলোমাটিমাখা ফ্যাকাশে চেহারার সান্তা সিসিলিয়ার থেকে একেবারে আলাদা — ঠিক যেন এক বিশাল অতি আধুনিক, প্রায় কল্পবিজ্ঞানের ছোঁয়া লাগা এক দেশ । সেখানে আত্মারা সুন্দর রঙিন পোষাক পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আধুনিক যানবাহন এবং কম্পিউটার ব্যবহার করা হচ্ছে — যেন জীবিত মানুষদের থেকে বেশিই সুখ সুবিধা উপভোগ করছেন সেখানকার বাসিন্দারা। আবার এই অতি আধুনিক নগরেই, ঘুরে বেড়াচ্ছে উজ্জ্বল, রঙিন আলেব্রিহে (alebrije) — যেগুলি হল মেক্সিকোর নিজস্ব লোকসংস্কৃতির অংশ — কাল্পনিক নানা প্রাণী। সুকুমার রায়-এর 'খিচুড়ি' ছড়ার সেই হাঁসজারু,বকচ্ছপ বা হাতিমিকে মনে আছে? ঠিক তাদের মত , কাঠের বা পেপার ম্যাশের তৈরি 'আলেব্রিহে' গুলি মেক্সিকোতে ছোট ছোট পুতুলের আকারে বিক্রি হয়। এই ছবির শুরুর দিকে একটা শটে আমরা দেখি পথের ধারে এক দোকানে বিক্রি হচ্ছে নানা ধরণের আলেব্রিহে। মৃতদের দুনিয়ায় এই সব আলেব্রিহেরাই হয়ে ওঠে সজীব, হয়ে ওঠে একেকজন আত্মার 'স্পিরিট গাইড'। পশ্চিমী দর্শনে ,' স্পিরিট গাইড' হল সেইসব নিরাকার শক্তি যা জীবিত মানুষকে সুখে-দুঃখে সবসময়ে পাশে থাকে, সাহায্য করে। বিভিন্ন ধরনের নিত্যদিনের কল্পনা মিলে মিশে যায় এই দুনিয়ায়, যা দেখে মিগেল অবাক হয়ে বলে ওঠে - "আমি তো ভেবেছিলাম এগুলো সবই বানানো গল্প, যেমনটা বড়রা বলে থাকে ছোটদের..."

কোকো আলেব্রিহে 'স্পিরিট গাইড' পেপিতা ও দান্তে

এই ছবির মজা হল এই যে, মেক্সিকো দেশটার যে সব মানুষ বা যে সব জিনিষ একেবারেই তার নিজস্ব, বা মেক্সিকো বলতে আমাদের যা যা কিছু মনে পড়তে পারে, সেসবের বহু কিছুর সূত্র ব্যবহার করা হয়েছে এই ছবিতে, এবং সেগুলি ব্যবহার হয়েছে মৃতদের দুনিয়ায়; যেমন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ফ্রিদা কাহ্‌লো, যাঁর সঙ্গে মিগেলের হঠাৎ দেখা হয়ে যায়। মিগেলের সঙ্গে কথা বলে তাকে আদর করে ফ্রিদা বলেন, "...you have the spirit of an artist..."। মেক্সিকোর সাংস্কৃতিক জগতের এমন অনেক বিখ্যাত চরিত্রের 'আত্মা'কে দেখা যায় এরনেস্তো দে লা ক্রুজের বিলাসবহুল পার্টিতে। সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন গানের অনুষ্ঠানগুলিতে শুনতে পাওয়া যায় মেক্সিকোয় প্রচলিত বিভিন্ন ঘরানার গান।

'কোকো' ছবিতে মিগেলের কুকুর বন্ধু 'দান্তে' হয়ে ওঠে তার স্পিরিট গাইড। 'দান্তে' হল জোলোইত্‌জ্‌কুইন্তল (Xoloitzcuintle) প্রজাতির লোমহীন কুকুর, যেটি মেক্সিকোর জাতীর কুকুর রূপেও গণ্য হয়।'দান্তে' কেন ও কীভাবে হয়ে উঠল মিগেলের 'স্পিরিট গাইড' সেই বিষয়ে বিশদে আলাদা করে গপ্পো হবে অন্য কোনো সময়ে। তুমি বরং ছবিটা দেখে রহস্যটা বোঝার চেষ্টা করতে থাকো।

গান গাইতে বাধা পেয়ে বাড়ি থেকে চলে আসার সময়ে মিগেল বলে এসেছিল, " আমার ছবি 'অফ্রেন্দা'তে না থাকলে আমার বয়েই গেছে... আমি এই পরিবারে থাকতে চাই না..." । তার কাছে পরিবারের সবার ইচ্ছের থেকে নিজের ইচ্ছের মূল্য অনেক বেশি ছিল। মৃতদের দুনিয়ায় এসে তার দেখা হল সেইসব আত্মাদের সঙ্গে, যাদের কথা কেউ মনে রাখেনি, তাদের ছবি কেউ সাজায় না ফুল-জল দিয়ে। সে দেখতে পেল কেমনভাবে কেউ মনে রাখেনি বলে একেবারে নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে একেকজন আত্মা। "...this place runs on memories..." জানায় তাকে হেক্টর। জীবিত মানুষের স্মৃতিতেই 'বেঁচে থাকে' পরলোকগত আত্মারা। স্মৃতি হারিয়ে গেলে, তারাও একেবারে হারিয়ে যায়।

মৃতদের দুনিয়া থেকে যে মিগেল ফিরে এল, সে মনে মনে অনেক বড় হয়ে ফিরল - পরিবারের বন্ধন আর পরিবারের মানুষদের ভালোবাসার মূল্য বুঝে ফিরল।

'কোকো' খুব স্বল্পমূল্যে দেখতে পাওয়া যায় ডিজনির ইউটিউব চ্যানেলে। এছাড়া একটি জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও বিভিন্ন ভাষায় দেখতে পাওয়া যায় এই ছবিটি।

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা