সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
আন্‌ফেয়ারি টেল্‌স্‌

২০১৬ সালের ২৯শে মার্চ, ইউনিসেফ (United Nations Children's Emergency Fund), অর্থাৎ ইউনাইটেড নেশ্‌ন্‌স বা রাষ্ট্রসঙ্ঘের যে বিভাগ সারা বিশ্বের ছোট ছোট শিশুদের এবং মায়েদের নিয়ে কাজ করে, তারা তিনটি ছোট ছোট অ্যানিমেশন ফিল্ম প্রকাশ করে। এই তিনটি ফিল্মকে তারা একত্রে নাম দিয়েছে 'আনফেয়ারি টেল্‌স্‌' (Unfairy Tales)। এই তিনটি আনফেয়ারি টেল দেখে আমার মনে হল এগুলি তোমার ও দেখা উচিত। গল্পগুলি তোমারই বা আশেপাশের বয়সী তিনটি ছেলে-মেয়ের গল্প। তাদের নাম মালাক, আইভিন আর মুস্তাফা।এ গল্পগুলি আমাদের চেনা ছকে বাঁধা ছোটদের সিনেমার দলে পড়ে না। কিন্তু ছোটদের সিনেমা যদি নাই হয়, তাহলে দেখতে বলছি কেন? সেটা বলব একটু পড়ে; তার আগে ছোট করে বলে নিই সেইসব কথা, যেগুলি জানলে এই তিনটি ছবিকে বুঝতে সুবিধা হবে।

'ফেয়ারি টেল্‌স্‌' মানে তো জানি - রূপকথার গল্প - ছোট্টবেলা থেকে শুনে আসা, পড়ে আসা সেইসব গল্প, যেখানে রাজা থাকে, রানী থাকে, থাকে রাজপুত্র-রাজকন্যা; দুয়েকটা রাক্ষস বা দৈত্য অথবা হিংসুটে সুয়োরানীও থাকে; রাজপুত্র বা রাজকন্যার জীবনে কোন না কোন একটা সমস্যা আসে। নানারকমের বিপদ কাটিয়ে, শত্রুর সাথে যুদ্ধ করে, রাজকন্যা বা রাজপুত্র জয়ী হয়। মাঝেমধ্যে আবার তাদের বিয়েও হয়। শত্রুপক্ষকে হারানোর গোপন সব উপায়ের হদিশ বাতলে দেয়, বা সেই কাজে সাহায্য করে আরো অন্যান্য চরিত্র। সেই গল্প দিশি হলে এইসব সাহায্য করার জন্য পক্ষীরাজ ঘোড়া বা ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী থাকে; বিদেশী হলে তাতে থাকে ভাল ড্রাগন, ডোয়ার্ফ্‌স্‌ বা পিক্সি; মোট কথা, গল্পটা পড়ে শেষে বেশ মন ভাল হয়ে যায়। কারণ ভাল লোকের ভাল হোক, আর মন্দ লোকেরা সব নিপাত যাক- এটা কে না চায়? তা এই রূপকথা যদি আবার ফিল্ম হয়ে যায়- যা চোখে দেখে, কানে শুনে উপভোগ করা যায়, তাহলে তো আর কথাই নেই - একেবারে সোনায় সোহাগা ! সেই কারণেই তো 'শ্রেক', ' স্নো হোয়াইট অ্যাণ্ড দ্য সেভেন ডোয়ার্ফস' বা রাপুন্‌জেল-এর গল্প অবলম্বনে তৈরি 'ট্যাঙ্গেল্‌ড্‌' দেখে মন বেশ খুশি খুশি হয়ে যায়।

কিন্তু 'আনফেয়ারি টেল্‌স্‌' - এর মানে কি? মানে যে গল্প রূপকথা নয়? সোনার কাঠি-রূপোর কাঠি ছোঁয়ানো রূপকথা যদি না হয়, তাহলে কি আছে এই সব ছবিতে? ইউনিসেফ থেকে প্রকাশিত এই তিনটি আনফেয়ারি টেল্‌স্‌ দেখতে পাওয়া যাবে ইউটিউবে। কিন্তু দেখার আগে একটু ছোট্ট করে জেনে নিতে হবে, কেন ইউনিসেফ এই তিনটি ছবি তৈরি করল।

যদি তুমি একটু একটু দেশ-বিদেশের খোঁজ খবর রাখ, তাহলে নিশ্চয় জান, যে গত বছর থেকে হঠাৎ করে ইউরোপে শরণার্থী সমস্যা নিয়ে বিশ্বের সমস্ত সংবাদ মাধ্যমে খুব হইচই হচ্ছে। তবে শরণার্থী বা উদবাস্তু সমস্যা মাত্র গত বছরই তৈরি হওয়া আলাদা কোন নতুন সমস্যা নয়। যুগ যুগ ধরে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে, বিভিন্ন কারণে - যুদ্ধ, মহামারী, খরা বা বন্যার কারণে দলে দলে মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছে, অন্য জায়গায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে, 'শরণ' নিতে বাধ্য হয়েছে; নিজেদের বহুদিন ধরে বসবাস করা ঘর-বাড়ি-বাস্তুভিটে ছেড়ে , ছোট একটা পুঁটুলি সম্বল করে গিয়ে পড়েছে নতুন কোন দেশে, নতুন কোন জায়গায়, নতুন মানুষদের মধ্যে- সেখানে তাদের পরিচয় হয়েছে 'উদবাস্তু' বা 'শরণার্থী' রূপে। যারা ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস জানে, তারা এটা জানে, কিভাবে স্বাধীনতা লাভের সময়ে ভারতের দুইদিক থেকে কিছুটা করে অংশ কেটে নিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্থান নামে আলাদা দেশ সৃষ্টি হয়েছিল। তার ফলে দু-টুকরো হয়ে পড়ে ভারতের পশ্চিমে পঞ্জাব ও পূর্বে বাংলা নামের বড় বড় দুটি অঙ্গরাজ্য। প্রাণের ভয়ে, ধর্ম বদল হয়ে যাওয়ার ভয়ে, নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের কাছে থাকার তাগিদে দলে দলে মানুষ মিছিল করে সেই নতুন ভাবে ভাগ করা দুই দেশের মাঝের নতুন করে তৈরি করা সীমা পার করে চলে যায় এদিক থেকে ওদিক, বা ওদিক থেকে এদিক - একটু ভাল থাকার আশায়, একটু নিরাপত্তার সন্ধানে, দু-মুঠো খাবার আর আশ্রয়ের খোঁজে।

আন্‌ফেয়ারি টেল্‌স্‌
ম্যাপের মধ্যে লাল রং-এর দেশটি সিরিয়া

গত বেশ কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়াতে গৃহযুদ্ধ চলছে। সে দেশের শাসকের নাম বাশার আল-আসাদ। বিভিন্ন কারণে বাশার আল-আসাদের ওপরে সিরিয়ার সাধারণ মানুষ খুশি ছিলেন না। ২০১১ সাল নাগাদ যখন দেশের মানুষেরা আন্দোলন ও প্রতিবাদের মাধ্যমে তাঁকে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন , আসাদ তখন পদত্যাগ তো করলেনই না, বরং নিজের দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। সিরিয়ার সৈন্যবাহিনী, সিরিয়ারই শাসকের নির্দেশে, আক্রমণ করল সিরিয়ারই সাধারণ নাগরিকদের। ক্রমে সেই যুদ্ধ জটিল আকার ধারণ করে। এই মূহুর্তে সিরিয়াতে আসাদের পক্ষে, বিপক্ষে এবং আলাদা করে নিজেদের মধ্যে বহু আলাদা আলাদা আতঙ্কবাদী গোষ্ঠী এবং বাইরের বিভিন্ন দেশ - আমেরিকা, রাশিয়া, তুরস্ক, ইরান এবং আরব দুনিয়ার দেশগুলি - একে অপরের সাথে যুদ্ধ করে চলেছে। সিরিয়ার সাথে সাথে বিপদের মধ্যে আছে পাশের দেশ ইরাকের এক বিরাট অংশ। এই সব অঞ্চল প্রতিদিন বোমা-বিস্ফোরণ-গোলা-গুলির আওয়াজে ভরে থাকে। যখন তখন মারা যাচ্ছে শ'য়ে শ'য়ে শিশু ও তাদের বাবা-মা। স্কুল-কলেজ হয়েছে বন্ধ, বাড়ি ঘর ভেঙে হয়েছে ধ্বংসস্তূপ।

সিরিয়ার এই যুদ্ধ কিন্তু সিনেমায় দেখা যুদ্ধ নয়। বা ভিডিও গেম্‌স্‌-এর এলিয়েনদের সাথে লড়াই নয়। সেখানে কিন্তু সত্যি যুদ্ধ হচ্ছে। সত্যি সত্যি যুদ্ধের কারণে সত্যি সত্যি বিপদে পড়া মানুষদের বাঁচাতে আসার জন্য নেই কোন ব্যাটম্যান, সুপারম্যান বা স্পাইডারম্যান। নেই কোন অ্যাভেঞ্জার্স বা ইন্‌ক্রেডিবল্‌স্‌ এর মত কোন সুপারপাওয়ার ভরপুর পরিবার। নেই বাল গণেশ, ছোটা ভীম কিংবা বুর্কা অ্যাভেঞ্জার। তাহলে কি করবে সিরিয়ার সাধারণ মানুষেরা?

এই সব মানুষের কাছে ছিল , এখনো আছে- একটাই উপায়; দেশ থেকে পালানো। নিজেদের সামান্য জমানো পুঁজিটুকু ব্যাগে পুরে, অজানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়া। কিন্তু সিরিয়া ছেড়ে বেরিয়ে তারা যাবে কোথায়? যেখানে কিনা সিরিয়ার আশেপাশের দেশগুলোর মধ্যে অনেকেই সিরিয়ার নির্দয় শাসককে সমর্থন যোগাচ্ছে, অথবা নিজেরা নিজেদের দেশের মধ্যে অন্যান্য লড়াইতে ব্যস্ত? লেবানন, ইরাক, জর্ডন, তুরস্ক, মিশর এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলি ছাড়াও সিরিয়ার মানুষদের কাছে তাই প্রধান গন্তব্য হয়ে উঠল ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। কিন্তু যেতে চাইব বললেই কি আর যাওয়া যায়? পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন ধনী দেশগুলি নিজেদের সীমান্ত কড়া প্রহরায় আটকে রেখেছে। সিরিয়া থেকে পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পৌঁছানোর একটা পথ হল ভূমধ্যসাগরের ওপর দিয়ে নৌকা বা ভেলায় করে ভেসে গ্রীস বা ইতালি চলে যাওয়া । অথবা দক্ষিণ দিকে আফ্রিকা মহাদেশের কিছু দেশে। সিরিয়ার মানুষ বেশিরভাগই যাওয়ার চেষ্টা করেছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। কখনো লুকিয়ে চুরিয়ে, রাতের অন্ধকারে সীমান্ত রক্ষীর চোখে ধুলো দিয়ে ভূমি সীমান্ত পেরিয়েছে্ন। আবার অনেকেই সমুদ্রতীরে পৌঁছে, কোনমতে একটা ছোট ডিঙ্গি বা ভেলা ভাড়া করে , লাইফ জ্যাকেট গায়ে জড়িয়ে, পাড়ি দিয়েছেন অজানার উদ্দেশ্যে।

আন্‌ফেয়ারি টেল্‌স্‌
গ্রীসের লেস্‌বস্‌ দ্বীপে এসে আশ্রয় নিচ্ছে সিরিয়ার শিশু

এক একটা ছোট ছোট ভেলাতে আট-দশজন করে মানুষ। তাদের মধ্যে রয়েছে মালাক, আইভিন বা মুস্তাফার মত ছোট ছোট মেয়েরা আর ছেলেরা, যাদের মধ্যে অনেকেই সাঁতার জানে না। কোনদিন নৌকা চাপেনি, সমুদ্র দেখেনি। তারা ফেলে এসেছে তাদের বাড়ি, পাড়া-পড়শী, বন্ধু, খেলনা, স্কুল, পড়ার বই...সবকিছু। ভূমধ্যসাগরের উথালপাথাল ঢেউতে , ভয়ানকভাবে দুলতে থাকা ছোট্ট ডিঙ্গিতে বসে থাকা সাত বছরের মালাক-এর মনে হয়েছে সমুদ্রের ঢেউগুলো যেন হাত পা বাড়িয়ে তাদের গিলে থেকে আসছে। আর একইরকমের দুর্যোগের মধ্যে দিয়ে মায়ের হাত ধরে নিরাপত্তা খুঁজতে থাকা আইভিনের সঙ্গী হয় তার ছোট্ট বালিশ। আইভিনের ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্নে তাদেরকে তাড়া করে বেড়ায় রক্তলোলুপ মিসাইলের দল।তের বছরের মুস্তাফাকে ফেলে রেখে আসতে হয় তার প্রিয় খেলনাগুলো। নতুন দেশে, শরণার্থী ক্যাম্পে, সে একজনও নতুন বন্ধু খুঁজে পায়নি এখনো।

২০১১ সাল থেকে বিভিন্ন হিসেব ধরলে দেখা যাচ্ছে, সিরিয়ার প্রতি চার জন মানুষের মধ্যে একজন গৃহহীন অথবা শরণার্থী হয়েছেন। আর যতজন শরণার্থী, তার মধ্যে প্রায় অর্ধেক হল শিশু, যাদের বয়স বারোর নিচে। হাজার হাজার শিশু একেবারে একা একা শরণার্থী ক্যাম্পে এসে পৌঁছেছে, তাদের সাথে কোন বয়স্ক সঙ্গী নেই। এই মূহুর্তে সিরিয়ার আশেপাশের দেশগুলিতে মোট ৪,৮৪২,৮৯৬ জন মানুষকে শরণার্থী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং নাম নথীভুক্ত করেছে UNHCR (ইউনাইটেড নেশন্‌স্‌ হাই কমিশন ফর রিফিউজিস)। এর বাইরে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আরো কত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন, তার পুরো হিসেব এখনো জানা নেই।

সেই ২০১১ সাল থেকেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয়ের খোঁজে ভীড় জমাতে থাকেন সিরিয়ার মানুষেরা। ইউরোপের দেশগুলি ব্যাপারটাকে নিয়ে মাথা খুব ঘামাচ্ছিল না। বেশিরভাগ দেশ সিরিয়ার মানুষদের আশ্রয়ও দিতে চাইছিল না। কিন্তু ২০১৫ সালের ২রা সেপ্টেম্বর সকালবেলা, তুরস্কের এক সমুদ্রতীরে,দেখতে পাওয়া যায় তিন বছরের সিরিয় শিশু আয়লান কুর্দির মৃতদেহ। তার পরিবারের সাথে একটা ভেলা চেপে ছোট্ট আয়লানও চলেছিল নতুন দেশের উদ্দেশ্যে। কিন্তু মাঝসমুদ্রের জোরালো ঢেউয়ের তাল সামলাতে পারেনি সেই ছোট্ট রবারে তৈরি ভেলা। আয়লানের সাথে সাথে জলে ডুবে প্রাণ হারান তার মা আর তার পাঁচ বছরের দাদা গালিব । পরনে লালা-নীল জামা-প্যান্ট, সমুদ্রতীরে পড়ে থাকা আয়লানের ছোট্ট প্রাণহীন শরীরের ছবিটি ইন্টারনেটের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। নাড়া দেয় অনেক মানুষের মন। যারা এতদিন এত বড় সমস্যাটাকে পাত্তাই দিচ্ছিল না, তারা সবাই নড়েচড়ে বসে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং অন্যান্য বড় দেশগুলিকেও জোর করা হতে থাকে এইসব মানুষদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য। হটাৎ করেই সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলি খুব বেশি করে নজর দিতে শুরু করে সিরিয়ার শরণার্থী সমস্যার দিকে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলি শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার কথা খোলাখুলি ঘোষণা করে। ঠিক এই মূহুর্তে, আমেরিকা ও কানাডা ছাড়া, ইউরোপের এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশগুলির মধ্যে কিছু কিছু দেশ প্রচুর মানুষকে আশ্রয় দিচ্ছে; কেউ কেউ একদমই দিতে চাইছে না; আবার কেউ কেউ হিসেব করে বলেছে ঠিক কতজন মানুষকে তারা আশ্রয় দিতে চায়।

ইউনিসেফ আমাদের জানাচ্ছে, মালাক-মুস্তাফা-আইভিনদের মত আরো হাজার হাজার শিশু একইরকম সাঙ্ঘাতিক মানসিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন কাটিয়েছে বা কাটিয়ে চলেছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। পৃথিবীর যেকোন প্রান্তেই হোক না কেন, শরণার্থী শিশুরা যখন আশ্রয়ের খোঁজে একটা নতুন দেশে এসে পৌঁছায়, তাদের পথ চলা সেখানে শেষ হয় না। সেখান থেকে শুরু হয় এক নতুন পথ চলা। সারা পৃথিবীতে প্রতিবছর, অন্তত ৬৫০ লক্ষ শিশু-কিশোর-কিশোরী এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যেতে বাধ্য হয়- যুদ্ধের কারণে, খাবারের খোঁজে অথবা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে। বেশিরভাগ সময়েই তাদেরকে সাহায্য করেন অজানা অচেনা মানুষেরা। এইরকম ভাল কাজের খবর যাতে আরো বেশি করে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে, তাই ইউনিসেফ তৈরি করেছে নতুন হ্যাশট্যাগঃ #actofhumanity । পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে, শরণার্থী শিশুদের সাহায্য করা হচ্ছে- এইরকম কোন ভাল খবর যদি তুমিও জেনে থাক, তাহলে #actofhumanity হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সেই খবর পৌঁছে দিতে পার ইউনিসেফের কাছে।

আয়লান আর গালিবের মত পরিণতি না হয়ে, মালাক, আইভিন বা মুস্তাফা, এবং তাদের মত আরো অনেক শিশু যে আজ বেঁচে আছে, দুমুঠো খাবার পাচ্ছে , নতুন দিনের আশা করতে পারছে, তার পেছনে রয়েছে অসংখ্য নাম-পরিচয়হীন সাধারণ মানুষের হাত। এই সব অজানা অচেনা মানুষদের ছোট্ট ছোট্ট সাহায্য গুলির কথা খবরের কাগজে হেডলাইন হয় না। কিন্তু তাঁদের সাহসিকতা এবং মনুষ্যত্ববোধকে সেলাম জানানোর জন্য; এবং আরো মানুষকে এইরকম আরো শিশুদের সাহায্য করতে অনুপ্রাণিত করার জন্যই এই তিনটে ছোট্ট অ্যানিমেশন ফিল্ম তৈরি করেছে ইউনিসেফ।

মালাক অ্যাণ্ড দ্য বোট

দ্য স্টোরি অফ আইভিন অ্যাণ্ড পিলো

মুস্তাফা গোজ ফর আ ওয়াক

এই তিনটি ছোট্ট অ্যানিমেশন ফিল্ম শুরু হয় ঠিক রূপকথার গল্পের ফিল্মের মত - তারাভরা রাতের আকাশ; বা আলো ঝলমল দিনের আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ায়। কিন্তু তারপরেই আসে সেই কঠিন বাস্তব। তাই এই ছবিগুলি 'ফেয়ারি টেল' নয়। এদেরকে একত্রে বলা হয়েছে 'আনফেয়ারি টেল;' গল্পগুলি ছোটদের নিয়ে, ছোটদের ঘিরেই। কিন্তু ছোটদের জন্য কখনই নয়। বাস্তব জীবনে এইরকম গল্প বড়রা যখন ছোটদের উপহার দেয়, তখন বয়সে বড় একজন মানুষ হিসাবে লজ্জায় আমার মাথা নুয়ে আসে।

এই পৃথিবী কবে যুদ্ধবিহীন, কলহবিহীন হবে আমরা কেউ জানিনা। তোমাদের জন্য ফুলে-ফলে ভরা, আলো-ঝলমল হাসি-খুশি এক পৃথিবী রেখে যেতে আমরা বড়রা পারব কিনা জানিনা। কিন্তু এটুকু আশা রাখতেই পারি, যুদ্ধ-বিবাদের খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে তুমি আর তোমার বন্ধুরা যদি ছোটবেলা থেকেই সচেতন হও, তাহলে হয়ত বড় হয়ে তোমরাই যুদ্ধবিহীন শান্তিপূর্ণ এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে পারবে - যে পৃথিবীতে থাকবে না কোন 'আনফেয়ারি টেল্‌স'।


ছবিঃ
ইউনিসেফ
ইউটিউব
আলাবামা ম্যাপ্‌স্‌
ভিডিওঃ ইউটিউব

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা