সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
খুম্বা

আফ্রিকার এক বিস্তির্ণ আধা মরু অঞ্চল দ্য গ্রেট কারু। সেই কারুতে এক ছোট্ট জলাশয়কে কেন্দ্র করে বসবাস করে একদল জেব্রা। তারা তাদের জলাশয়টিকে অন্য প্রাণীদের থেকে লুকিয়ে রাখার জন্য তার চারিদিক দিয়ে রীতিমত কাঁটাঝোপ জড়ো করে বেড়া দিয়ে রেখেছে। সেই জেব্রাদের প্রধাণদের মধ্যে একজন হল সেকো। তার স্ত্রী লুঙ্গিসা। অসুস্থ লুঙ্গিসা একটি ছেলের জন্ম দিল। তার নাম রাখা হল খুম্বা। কিন্তু সেই নতুন খোকাকে নিয়ে তাদের হল মহা সমস্যা। কারণ খুম্বার শরীরের অর্ধেকটা জুড়ে রয়েছে কালো দাগ। শরীরের পেছনের দিকটা একেবারে সাদা। এই নিয়ে তো খুম্বার বাবা-মাকে অনেকেই নানা কথা শোনায়। দলের অন্যান্যরা অনেক সময়েই খুম্বাকে নিয়ে মজা করে। বলে সে হল আধা জেব্রা। সব মিলিয়ে খুম্বার বেজায় মন খারাপ। তার একমাত্র ভাল বন্ধু হল টোম্বি নামের মেয়েটা। কিন্তু টোম্বি তাকে যতই বোঝাক, খুম্বা তাও মন খারাপ করে থাকে।

এর মধ্যে আবার এল খরা। সারা কারু জুড়ে কোন বৃষ্টি নেই। জেব্রাদের নিজস্ব জলাশয়ের জল ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে। দলের কিছু মাতব্বর, কুসংস্কারি জেব্রা এর জন্য খুম্বাকেই দায়ী করল- তার শরীরের অর্ধেকটায় যে কালো দাগ নেই, সে তো এক আস্ত অভিশাপ।খুম্বার উচিত চলে যাওয়া। সে চলে গেলেই আবার বৃষ্টি আসবে।এইসব দেখেশুনে সেকোরও মন মেজাজ খারাপ। একদিকে তার ছেলের প্রতি ভালবাসা, অন্যদিকে দলের ভালমন্দের প্রতি দায়বদ্ধতা। সে কি করবে ভেবে পায়না।

একদিন এক বুড়ো ম্যান্টিস কোথা থেকে বা উড়ে উড়ে এল। সে এসে খুম্বার সামনে মাটিতে একটা ছবি আঁকল। ছবিটা দেখে খুম্বা কিছুই বুঝল না। উলটে সে টোম্বির সাথে ঝগড়া করে। তাদের বেড়ার বাইরে থেকে জল চেয়ে ভেতরে ঢুকতে চায় এক বুড়ি ভেড়া। দয়ালু খুম্বা তাকে দরজা খুলে দেয় জল খাওয়ার জন্য। আর সেই সময়েই সে প্রথম দেখে একচোখো ভয়ঙ্কর চিতা ফাঙ্গোকে। খোলা দরজার সুযোগ পেয়ে ফাঙ্গো আরেকটু হলেই ঢুকে পড়ছিল জেব্রাদের সুরক্ষিত বাসস্থানে। সব মিলিয়ে খুম্বা সবার কাছে খুব বকা খায়। তার বাবা তাকে শাস্তি দেয়- সে এক সপ্তাহ আরো কম জল আর খাবার খেয়ে থাকবে। তার মধ্যেও খুম্বা নিজের ভাগের খাবার এনে অসুস্থ মাকে দেয়। তার মা তাকে জেব্রাদুনিয়ার এক অনেক পুরনো গল্প শোনায়। এক জাদু জলাশয়ের গল্প, যেখানে ডুব দিয়ে প্রথম জেব্রারা তাদের গায়ের দাগ পেয়েছিল। খুম্বা মনে মনে ভাবে সেও যাবে সেই জাদু জলাশয়ের খোঁজে। তারও চাই সারা শরীর জুড়ে কালো দাগ। নাহলে তাকে কেউ জেব্রা বলে মনেই করে না।

একটু পরেই খুম্বার মায়ের মৃত্যু হল। খানিক শোকে, খানিকটা নিজের শরীর জুড়ে কালো দাগ পাওয়ার নেশায় খুম্বা জীবনে প্রথমবার তার নিরাপদ বাসস্থান ছেড়ে বেরিয়ে এল। সামনে পড়ে রয়েছে এক অজানা পৃথিবী- যতদূর চোখ চলে দেখা যাচ্ছে রুক্ষ গ্রেট কারু। এই দুনিয়ার সাথে খুম্বার কোন পরিচয় নেই। প্রথমেই তার দেখা হল স্কাল্ক নামের জংলি কুকুরের সাথে। স্কাল্ক মহা ধড়িবাজ। সে চেষ্টা করল সরল খুম্বাকে ফাঙ্গোর সামনে নিয়ে ফেলতে, যাতে সে নিজে ফাঙ্গোর রোষ থেকে বাঁচতে পারে।

খুম্বা

কিন্তু খুম্বাকে স্কাল্ক-এর খপ্পর থেকে বের করে আনল দুই দারুণ বন্ধু- মামা ভি নামের এক মধ্যবয়সিনী ওয়াইল্ডেবিস্ট আর ব্র্যাডলি নামের এক হামবড়া উটপাখি।মামা ভি অন্য সমস্ত মহিলাদের মত ঘরের কোণে বন্দী হয়ে না থেকে দুনিয়াটা ঘুরে দেখতে বেশি আগ্রহী। সে খুব দাপুটে আর মেজাজি, কিন্তু আসলে তার মনে স্নেহ মমতা কিছু কম নেই। উটপাখি ব্র্যাডলি মুখে যা আসে তাই বলে, আর নিজের পালকগুলিকে নিয়ে সে সদাই ব্যস্ত। এহেন ব্র্যাডলিকে খুব স্নেহ করে মামা ভি। ব্র্যাডলিও মামা ভি বলতে অজ্ঞান। এরা দুজনে হয়ে গেল খুম্বার জাদু জলাশয়ের খোঁজের যাত্রাপথের সঙ্গী।

খুম্বা

এদিকে খুম্বা জানেনা, ফাঙ্গো কিন্তু আসলে খুঁজে বেড়াচ্ছে তাকেই। ফাঙ্গো জন্মেছিল একটা খারাপ চোখ নিয়ে। সেই কারণে তার দল তাকে ছোট্টবেলায়আলাদা করে দেয়। সেই থেকে ফাঙ্গোর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য- সম্পূর্ণ হয়ে ওঠা। আর চিতাদের মুখে মুখে চলে আসা কাহিনী অনুযায়ী,সেইটা সম্ভব হবে যখন ফাঙ্গো লড়াইতে হারিয়ে বধ করবে অর্ধেক দাগওয়ালা "অসম্পূর্ণ" এক জেব্রাকে। স্কাল্কের মুখে খুম্বার বর্ণনা শুনে ফাঙ্গো এগিয়ে চলে খুম্বার খোঁজে। তার চোখ খারাপ বলে তার ঘ্রাণ শক্তি খুব তীব্র। সেই তীব্র ঘ্রাণশক্তির সাহায্যে সে খোঁজে খুম্বার যাত্রাপথ।

খুম্বা

ম্যান্টিসের এঁকে দেওয়া ছবি অনুযায়ী টেবিলের মত মাথাওয়ালা পাশাপাশি তিনটে পাহাড়ের দিকে এগিয়ে চলে খুম্বা, তার সঙ্গীদের নিয়ে। পথে তাদের দেখা হয় আরো নানা ধরণের পশুদের সাথে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতি, কেউ মানুষের তৈরি করা অভয়ারণ্যে দিব্যি থাকার অভ্যাস করে নিয়েছে, কেউ বা দল বেঁধে চলেছে জলের খোঁজে। চলতে চলতে নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে খুম্বা য়ার তার সঙ্গীরা বুঝতে পারে, সেই জাদু জলাশয় রয়েছে ফাঙ্গোর গুহার ভেতরে- সেই পর্বতমালার গভীরে, যেখানে কেউ যেতে সাহস করে না। এবার তাহলে কি করবে খুম্বা, মামা ভি আর ব্র্যাডলি?

খুম্বা কি খুঁজে পাবে সেই জলাশয়, যার জলে স্নান করলে তার গায়ে ফুটে উঠতে পারে কালো দাগ? তার কি আর দেখা হবে তার বাবার সাথে, টোম্বির সাথে? ফাঙ্গোর সাথে কি তার লড়াই হবে? - সেসবের উত্তর আমি নাহয় নাই দিলাম। সে সবের উত্তর পেতে হলে দেখে ফেলতে হবে "খুম্বা" নামের এই অ্যানিমেশন ছবিটা। তবে আমি এটুকু বলতে পারি, গল্পের শেষে খুম্বা এবং বাকি সবাই, এমনকি বাক্যবাগিশ ব্র্যাডলিও বুঝতে পেরেছিল , যে কারোরই আসল পরিচয় তার বাইরের চেহারাটা নয়। তার কাজকর্ম, তার মানসিকতাই তার আসল চরিত্রের হদিশ দেয়।

বাড়িতে বড়দের বলেই দেখ একবার এই ছবিটার ডিভিডি যোগাড় করে দিতে। ২০১৩ সালে এই ছবিটা তৈরি করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রিগারফিশ অ্যানিমেশন স্টুডিওজ। অ্যানিমেশনের দুনিয়ায় ট্রিগারফিশ এক নতুন নাম, কিন্তু তাদের কাজের প্রযুক্তিতে তারা অনায়াসে অনেকদিনের প্রতিষ্ঠিত ডিজনি বা পিক্সারের সাথে পাল্লা দিচ্ছে। ৮৫ মিনিটের এই ছবিতে স্বর দিয়েছেন হলিউড ও আফ্রিকার বেশ কিছু বিখ্যাত শিল্পী।

এখানেই শেষ নয়। খুম্বার দুনিয়ায় তার সাথে অ্যাডভেঞ্চারে নামতে চাইলে তুমি ট্রিগারফিশের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে নিতে পার খুম্বার অ্যাডভেঞ্চার অ্যাপ, বা অনলাইন একটু রেস খেলে নিতে পার ।তোমার যদি ছবি রঙ করতে ভাল লাগে তাহলে ডাউনলোড করে নিতে পার খুম্বা, টোম্বি বা ব্র্যাডলির ছবি, আর রঙে ভরিয়ে ফেলতে পার তাদের।



ছবিঃ
ট্রিগারফিশ
উইকিপিডিয়া

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা