খেলাঘরখেলাঘর

অ্যালজেব্রা


ঢং ঢং করে ঘন্টা বেজে গেল। তার মানে আজকে ক্লাস শেষ। হইহই করে উঠল সব্বাই।
‘কি করে হল?’ ‘
‘তার মানে কি দিকশূন্যপুরের মিষ্টি খেলে কি সত্যিই বুদ্ধি বাড়ে?’
‘দিকশূন্যপুরটা ঠিক কোনদিকে?’
‘তারপর কি হল?’
কারো প্রশ্নের আর শেষ নেই।

আজকের দিনটা ওদের বছরের প্রথম ক্লাস আর আমি ওদের অঙ্কের মাস্টারমশাই। ঘাড় নেড়ে বললাম, ‘না মিষ্টি খেলে বুদ্ধি বাড়ে এমন প্রমান বিজ্ঞানীর এখনও অবধি পেয়েছেন বলে তো জানি না’
একজন বলে উঠল, ‘তবে যে অঙ্ক গুলো মুখে মুখে করে দিলেন?’
আমি হেসে উঠলাম, ‘আরে দূর, সে কি মিষ্টি খেয়ে নাকি? আমার মনে জড় হয়ে ছিল ভয়। অঙ্ক নিয়ে অনেকের অনেক ভয় থাকে। বিভিন্ন রকমের ভয় অঙ্ক বুঝতে না পারার ভয়, পরীক্ষার হলে গিয়ে অঙ্ক করে না আসতে পারার ভয়, অঙ্ক ভুল করলে মারের ভয় – এইসব গিয়ে জড় হয় অঙ্ক বইয়ের পাতায়। আসলে অঙ্কটাকে ভয় করার কিছু নেই। ভয়টা দূর করাই আসল। অঙ্ক তো এমনিই হয়ে যাবে। ব্যাপারটা আমার বাড়ির কেউ ধরতে পারেন নি, ধরতে পারেন নি আমাদের ইস্কুলের গোবিন্দ স্যারও। বুঝেছিলেন আমার পিশেমশাই।’

প্রথম দিনটা আমি বই টই কিছুই আনি না। খালি চক দিয়ে বোর্ডের ওপর লিখি - অ্যালজেব্রা। তারপর অঙ্কএর বই না খুলে বীজগণিত পড়ানো শুরু করার আগে, প্রত্যেক বছর আমি এই গল্পটা আমার সব ছাত্রদের একবার করে বলি। অনেক বছর ধরে বলে আসছি, তবু গল্পটা পুরনো হয় না।



অভ্র পাল
কলকাতা