সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

'টং লিং… টং লিং'… কীসের আওয়াজ বলতে পারবে? শুনেছ এমন আওয়াজ কখনও? নদীর ওপরে থাকা পুলের ওপর দিয়ে চেন ঝোলাতে ঝোলাতে মালগাড়ি চলে গেলে নাকি এমন শব্দ হয়। কে শোনে? ওরা তিনজন, চাঁদ, বিশে আর সিংহ, পেরিস্তানে সবুজ ঘাসের ওপর লম্বা হয়ে শুয়ে শুয়ে শোনে সেই আওয়াজ। অবাক হচ্ছ? ভাবছ পেরিস্তান আবার কোথাকার কোন দেশ? ভূগোল বইয়ে বা ম্যাপে তো কোনওদিন চোখে পড়েনি জায়গাটার নাম! আরে বাবা সব কি আর ম্যাপে পাওয়া যায়? কিছু কিছু জিনিসকে নিজের মধ্যে থেকেই খুঁজে নিতে হয়, আর তেমন তেমনভাবে খুঁজে পেলেই নিজের ভেতরে কেমন যেন একটা ম্যাজিক হয়ে যায়, নানারকম খুচরো বা বড়সড় সমস্যাকেও এক তুড়িতে উড়িয়ে দিয়ে আরামসে থাকা যায়। সেই খুঁজে পাওয়ার গল্পই আছে টংলিং-এ।

রোগাসোগা ছেলে চাঁদ, পুজোর আগে দেশের বাড়িতে ক’দিনের জন্য থাকতে এসেছে সে, মা বাবা ভাইয়ের সঙ্গে নয় কিন্তু, একলা। তাকে তেমনভাবে কেউ মানে না, বিভুদা সুযোগ পেলেই চোরাগোপ্তা মার চালায়, চাঁদের কোনও বন্ধুও নেই। এখানে যদিও বাড়ি ভর্তি লোক, তাও চাঁদের সঙ্গে মেলে ক’জনের? তাই চাঁদ একা একা ঘুরে বেড়ায়, এভাবেই সে আবিষ্কার করেছে পেরিস্তান, আর আলাপ জমিয়েছে বিশে আর তার পোষা কুকুর সিংহের সঙ্গে। কুকুরের নাম সিংহ শুনে হেসো না। মানুষের নাম গজা বা পান্তো হতে পারে, আর কুকুরের নাম পশুরাজের নামে হলেই হাসি পাবে? এ ভারি অন্যায়।

যাইহোক, পেরিস্তান-বিশে-বিভুদার গাল টানা এসবের মাঝেই পুজো কাছে এসে পড়ল, বাড়িতে শুরু হয়ে গেল নাটকের রিহার্সাল। এইবার শুরু হল আসল গল্প। বইয়ের কথা লিখতে বসে গল্প পুরো বলে দিলে মজা মাটি, সাসপেন্স নষ্ট হয়ে যায়, তাই গল্প বিশদে আর বলছি না। বইখানা জোগাড় করে পড়ে ফেলো শিগগির, পেরিস্তান কী, বিশে কে, নাটকের রিহার্সালে কী হল, একটা বেজায় গোলমেলে সমস্যা কীভাবে সমাধান হল, সবের উত্তর পেয়ে যাবে। সেই সঙ্গে একটা দারুণ ম্যাজিক শিখে ফেলবে নিজে নিজেই! কেমন সে ম্যাজিক, সেটাও পুরোটা বলা যাবে না এখানে, বলে দিলেই বই পড়ার সময়ে টানটান ভাবটা থাকবে না আর!

এমন ম্যাজিক আসলে মিশে আছে লীলা মজুমদারের লেখা প্রতিটি গল্পে। তাঁর কোনও গল্প পড়লে মনে হয় তিনি মোড়ায় বসে গল্প শোনাচ্ছেন, আর আমরা সব চারধারে গোল হয়ে বসে তন্ময় হয়ে গল্প শুনছি। আবার কোনও গল্প পড়লে মনে হয় তিনি বুঝি গপ্পখানা লেখার সময় তোমাদের মতোই ছোট্ট কোনও ছেলেমেয়ের মনের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলেন। ছোটদের যা যা যথেষ্ট গুরুতর সমস্যা, যাকে বড়রা কেউ মোটেই পাত্তা দেন না, হেসে উড়িয়ে দেন, কিংবা একবারের বেশি দু’বার সেসব সমস্যার কথা তাঁদের বলতে গেলেই "কাজ করছি এখন, বিরক্ত কোরো না" বলে হাঁকিয়ে দেন, সেইসব সমস্যার কথা নিয়ে লীলা মজুমদার একের পর এক গল্প লিখে রেখেছেন তোমাদের জন্য। আমরা যখন তোমাদের বয়সের ছিলাম, তখন সেসব গল্প পড়ে আমাদেরও মনে হতো, "আরে, এ তো আমার কথাই লেখা আছে!" এই গল্পগুলোই এখন তোমরা যদি পড়ো, তোমাদেরও মনে হবে এসব তোমাদেরই মনের কথা।

‘টংলিং’ এরকমই একটা গল্প। গল্পের রোগাসোগা ছেলে চাঁদের নানান সমস্যা, তার মনে আসা-যাওয়া করা নানান ভাবনাচিন্তা, সেসব পড়লে মনে হবে খুব চেনা, খুব নিজের। আর সেটা মনে হবে বলেই পড়তে পড়তে কখন যে গল্পের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ম্যাজিক তোমার নিজের ভেতরেও ঢুকে পড়বে, নিজেই বুঝতে পারবে না।

এমন ম্যাজিক মেশানো একখানা বইয়ের মলাট আর ছবিটবিও ম্যাজিক মেশানো না হলে হয় নাকি? আমাদের সবার অত্যন্ত প্রিয় মানুষ সত্যজিৎ রায়ের হাতের জাদুতে সেজেছে বইয়ের মলাট আর পাতাজোড়া সব ছবিরা। বইয়ের আদি সংস্করণেও এই ছবিগুলিই ছিল। বইটির এই নতুন সংস্করণের ভূমিকায় এই ব্যাপারে জানিয়েছেন শ্রী সন্দীপ রায়।

'টংলিং' যারা ইতিমধ্যেই পড়েছ, তারা এক নতুন মোড়কের সন্ধান পেয়েছ, নিশ্চিত। যারা এখনও পড়োনি, তারা ইচ্ছামতীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে, অথবা পুজোর উপহার হিসেবে জোগাড় করে নিতেই পারো ‘টংলিং’।

'টং লিং…টং লিং…' পেরিস্তান সফর শুভ হোক।

টংলিং
লীলা মজুমদার
প্রচ্ছদ ও চিত্রাঙ্কনঃ সত্যজিৎ রায়
বর্তমান প্রকাশকঃ লালমাটি প্রকাশন
মূল্যঃ ১২০ টাকা

ভূতপূর্ব ইঞ্জিনিয়ার, বর্তমানে সাংসারিক কাজের মাঝে সু্যোগ পেলেই পড়া আর লেখার আনন্দে মাতার চেষ্টায় থাকেন। সেই গোত্রের মানুষ, যারা আর কিছু না পেলে ঠোঙ্গায় ছাপা খবরও মন দিয়ে পড়েন। সারাদিনের অনেকটা সময় কাটে মেয়ে কুটুনের সঙ্গে; তার কীর্তিকলাপ মাঝেমধ্যে লিখতে চেষ্টা করেন;বর্তমানে ধানবাদের বাসিন্দা।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা