এটা ত জানা কথা যে গরমে ঘাম হয়। কিন্তু কেন হয় বলতে পার ? কারন শরীর থেকে ঘাম বেরিয়ে গিয়ে বাষ্প হয়ে গেলে শরীর শীতল হয়, মানে গরম বোধ কমে যায়। তার অর্থ নির্গত ঘামকে বাষ্প হতে হবে, আর তাতে দেহ থেকে তাপ বেরিয়ে যাবে লীনতাপের মাধ্যমে (এটাও আগে কখনও লিখেছি,পড়ে নিও)! আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি থাকলে, বিশেষ করে গরম কালে, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমান বেশি থাকে, ফলে দেহ থেকে ঘামের মাধ্যমে যে বাষ্প বেরোতে চায় তা বেরোয় না। কারন, বাতাসের বাষ্পধারন ক্ষমতা ত অসীম নয়। তাই ঘাম বা বাষ্প বেরোলেও বাতাসে সেই বাষ্প যেতে পারে না, আর তাতে দেহ ঠান্ডাও হয় না। ঘাম বাষ্প হয়ে বাতাসে না যেতে পেরে গা বেয়ে গড়িয়ে পড়ে, জামাকাপড় ঘামে ভিজে জবজবে হয়ে একেবারে বিদিকিচ্ছিরি কান্ড হয়, আর গরমে হয় প্রান ওষ্ঠাগত ! এর ওপর রয়েছে বৃষ্টি না হয়ে সূর্যের প্রতাপে পৃথিবীর তাপবৃদ্ধি। (আসলে জল তাপ শোষন করতে পারে, তাই বৃষ্টি হলে পরিবেশ ঠান্ডা হয়)। এ অবস্থায় শরীর ঠান্ডা করতে গেলে পাখার হাওয়ার দরকার হয়, যাতে জোর করে দেহের ঘাম শুকিয়ে দেওয়া যায়।
এমত অবস্থায় ঘরের জানালা-দরজা খুলে দিলে ভেতরের জলীয় বাষ্পপূর্ন বদ্ধ বাতাস বেরিয়ে গিয়ে আপেক্ষিক আর্দ্রতা কমে যায় কিছুটা। তবে বাইরে গরম বাতাস থাকলে জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ে ঘর গরম করতেও পারে। তাই খোলা বন্ধটা বুঝেশুনে করা দরকার।
শীতকালে আবার ঠিক উল্টো ব্যাপার। বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকে, মানে আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম থাকে। চটপট ঘাম শুকিয়ে যায় গা থেকে আর শরীরও খুব তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে যায়। তাছাড়া সূর্যও বেশি তাপ ছড়াতে পারে না, এর ফলে আমাদের চারপাশ শীতল থাকে। আর জানালা-দরজা বন্ধ রেখে আপেক্ষিক আর্দ্রতা যাতে না কমে সেটা দেখা হয়,আর ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে আমাদের গরম জামা পড়তে হয়।
তার মানে হল আপেক্ষিক আর্দ্রতা খুব বড় ব্যাপার।
পুকুরের ধারে যখন বেড়াচ্ছ, তখন সেখানে জলীয় বাষ্প বেশি থাকারই কথা, থাকেও তাই। সেখানকার আপেক্ষিক আর্দ্রতা তাই বেশি হবে। তখন শরীরের ঘাম শুকতে চাইবে না, আর শরীরও ঠান্ডা হবে না। তাই পুকুরের ধারে গেলেই যে সর্বদাই ঠান্ডা লাগবে, তা মোটেই নয়। কখনও কখনও লাগতে পারে যখন আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম থাকে।
এ সময়ে আমাদের রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো শুকনো (আগে বলেছি) হওয়ার কারনে আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম হওয়ায় তাপমাত্রা কলকাতা থেকে বেশি হলেও অনেকটা স্বস্তিদায়ক, কেননা সেখানে ঘাম বেশি বিব্রত করে না, বরং তাড়াতাড়ি বাষ্প হয়ে গিয়ে শরীরকে শীতল করে।