সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
সখা
সখা পত্রিকা

তবে ফিরে দেখলে 'বালকবন্ধুর' মত ছোটদের মনের কাছাকাছি যে পত্রিকাগুলো আসে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হ'ল প্রমদাচরণ সেন মহাশয়ের 'সখা' পত্রিকা। দশ বছরের প্রকাশকালে এই পত্রিকাকে একাধিক বার বন্ধ হয়ে যেতে হয়েছে, বহুবার হাতবদল হয়েছে এবং প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে ঢের, কিন্তু তা সত্ত্বেও এত গুণীজন এই পত্রিকায় এত ভাল ভাল রচনা লিখে গেছেন, যা ভোলার নয়। ষোলো-সতেরো বছর বয়স থেকেই সখা পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। সম্পাদক প্রমদাচরণ সেনের সঙ্গে তিনি এবং মন্মথনাথ মুখপাধ্যায় একসাথে এই পত্রিকাকে আরও কত সুন্দর করে তোলা যায়, সেই চেষ্টায় ব্রতী ছিলেন। এবং তাঁদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন আরও অনেকে। 'সখা'র ষষ্ঠ সংখ্যায় বিপিনচন্দ্র পাল 'সুরেন্দ্রবাবুর কারাবাস' নামে একটি প্রবন্ধ লেখেন। বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে যখন ব্রিটিশ সরকার জেলবন্দী করে,সেই রাজবিদ্রোহ মামলার বিচার, কারাবাসের কারণ এবং সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৎকালীন জীবন বৃত্তান্ত সহজ ভাষায় লেখা ছিল এই প্রবন্ধে। শিশুপাঠ্য পত্রিকায় এটিই প্রথম রাজনৈতিক প্রবন্ধ। বিপিনচন্দ্র পাল নিজেও ছিলেন একজন বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং রাজনৈতিক নেতা। যদি আগ্রহী হও, বিপিনচন্দ্র পাল এবং সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্বন্ধে অবশ্যই বড়দের কাছে প্রশ্ন করবে, জানতে চাইবে তাঁদের কথা। সম্পাদক প্রমদাচরণ সেন, এই 'সখা' পত্রিকাতেই শিশু সাহিত্যের প্রথম উপন্যাসটি ধারাবাহিক ভাবে দশটি কিস্তিতে প্রকাশ করেন, উপন্যাসের নাম 'ভীমের কপাল'। ভীমের কপালের 'ভীম' কিন্তু মোটেই পঞ্চ পাণ্ডবদের মেজভাই নয়। এই ভীম একজন বাঙালী ছেলে, যে নানারকম পরিস্থিতিতে পড়ে কী ভাবে শিক্ষা লাভ করে (যাকে বলে ঠেকে শেখা), সেই নিয়েই গল্প এগোতে থাকে। সেই সময়কার বাংলার গ্রাম, মফঃস্বল এবং শহরের জীবনও ফুটে উঠেছে উপন্যাসের মধ্যে। এই ধারাবাহিক ছোটদের উপন্যাস সেই সময় বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। এ ছাড়া ছিল আরও একটি ছোটদের খুব প্রিয় বিভাগ 'ঠাকুরদার আসর' – এর মাধ্যমে গল্পের ছলে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়াসে ব্রতী ছিলেন মন্মথনাথ মুখোপাধ্যায়।

গল্প, ইতিহাস ও বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ বিভাগগুলি 'বালকবন্ধু'র মত হলেও তার যে একটা নিজস্বতা ছিল, তা আশা করি বুঝতেই পারছ। এবং এর সঙ্গে আরও একটি বাড়তি পাওনা ছিল বিদেশী শ্রেষ্টপুরুষদের সচিত্র জীবনী। পত্রিকায় প্রকাশিত নানারকম ছবির মান ছিল উন্নত (এবং এর পেছনেও উপেন্দ্রকিশোরের অবদান ছিল)। প্রমদাচরণ মহাশয় ছিলেন উদার এবং বাস্তববাদী, রুচিও উন্নত। কৃষক এবং অনুন্নত শ্রেনীর দরিদ্রদের প্রতি সমবেদনাশীল ছিলেন। পত্রিকা ও তাঁর রচনার মধেও এসবের প্রকাশ মেলে। 'সখা'র বিভাগ এতই বিস্তৃত যে - পোশাক, আচার-ব্যবহার, স্বাস্থ্য ও অধ্যয়ন সম্বন্ধে শিক্ষা, মুখরোচক খাদ্য প্রস্তুত প্রণালী, পাঠক-পাঠিকাদের পত্র ও প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, ছোটদের বইয়ের সমালোচনা, বিবিধ-প্রসঙ্গ স্তম্ভে দেশী-বিদেশী খবর, ধাঁধা ও পুরস্কার... এইসব কিছু মিলে ছোট্ট বন্ধুদের একেবারে মন মাতিয়ে রাখা বই। ছোট পাঠক-পাঠিকারা অপেক্ষা করত, কখন 'সখা' পত্রিকার পরবর্তী সংখ্যা হাতে আসবে। অথচ এত জনপ্রিয়তার মাঝেও 'সখা' পত্রিকার সংক্ষিপ্ত জীবনটি করুণই বলা চলে। ১৮৮৩, ১লা জানুয়ারী 'সখা' প্রকাশিত হয় ছোটদের মাসিক পত্রিকা রূপে। তিন বছর সাফল্যের সঙ্গে সম্পাদনার কাজ চালানোর পরে ১৮৮৫ সালের ২১শে জুন প্রমদাচরণ সেনের অকাল মৃত্যু হয়। ওনার পর সখার সম্পাদক হলেন শিবনাথ শাস্ত্রী (১৮৮৫ জুলাই থেকে ১৮৮৬), যিনি পরবর্তী 'মুকুল' নামে অন্য একটি ছোটদের পত্রিকা সম্পাদনার ভার গ্রহণ করেন। ১৮৮৭ সাল থেকে 'সখা' পত্রিকা থেকে পরিচালনা করেন অন্নদাচরণ সেন। তাঁর পর দায়িত্ব নেন নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য। এমন হাতবদল হ'তে হ'তে একসময় সখা পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়, শেষ সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৯০ সালে । এর প্রায় চার বছর পর ভূবনমোহন রায় ১৮৯৪ খ্রীষ্টাব্দে 'সাথী' পত্রিকা প্রকাশ করেন, এবং তার সঙ্গে 'সখা'র নামটি জুড়ে দিয়ে 'সখা ও সাথী' হয়ে যায়। বুঝতেই পারছ, এমন হাতবদল এবং স্বল্প সময়ের জন্য প্রকাশ হলেও, মাসিক পত্রিকা হিসেবে 'সখা' খুবই প্রিয় ছিল ছোট পাঠকদের কাছে। এবং সেই কারণেই ভুবনমোহন বাবু নিজের পত্রিকার সঙ্গে 'সখা' শব্দটি জুড়ে দেন ('সখা' পত্রিকা নিশ্চিৎ ভাবে ওনার মনেও প্রভাব ফেলেছিল)।

পুরোপুরি কলকাতার মানুষ হলেও, জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়ের নিবাস এখন ব্যাঙ্গালোর বা ব্যাঙ্গালুরু। কলকাতারই কলেজ থেকে বি টেক পাশ করে এখন একটি বহুজাতিক সংস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কর্মী। বাংলা সাহিত্যের প্রতি ভালবাসা থেকেই মাঝে মধ্যে একটু লেখা আর সময় সুযোগ হ'লে ব্যাগ গুছিয়ে কাছে-দূরে কোথাও বেরিয়ে পড়া, এই নিয়েই জয়দীপ। সেই সব বেড়াতে যাওয়ার নানা রকম অভিজ্ঞতা ছোটদের কাছে বলার ইচ্ছে বহুদিন। সেই ইচ্ছাপূরণ করতেই ইচ্ছামতীর ছোট্ট বন্ধুদের জন্য কলম ধরা।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা