৪.
গ্রামে থাকতে রুনির খুব ভালো লাগছে। বিকেল হলে ও বিজনদের সাথে এদিক ওদিক ঘুরতে যায়। ওদের মধ্যে বিজনের আবার খুব সাহস। বাঁশবনের মধ্য দিয়ে, জংলা ঝোঁপের ফাঁক গলে ও ভেতরে ঢুকে যায়। মা ওকে বলেছেন, বর্ষাকালে অনেক সাপ এদিক সেদিক দিয়ে চলাচল করে। সাপে কাটলে খুব কষ্ট হবে। বিজন গেলেও রুনি তাই ঝোপের মধ্যে সহজে ঢুকতে চায় না। রুনিকে একদিন পাখির বাসা পেড়ে এনে দিয়েছিল বিজন।সেই বাসাটায় আবার দুটো পাখির ছানাও ছিল। রুনির প্রথমে আনন্দ হলেও যখন মনে হয়েছে মা পাখিটা এসে যখন খুঁজবে ওর ছানাদুটোকে তখন কি হবে। বিজনকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আবার বাসাটাকে ও গাছের ডালে বসিয়ে দিয়ে এসেছে।
আজ দুপুর পেরোবার পরই বিজন রেশমা ভুলু এসে রুনিকে ডেকে নিয়ে গেল উঠোনে। ঘরে নয় ওরা আজ বাইরে বেরোবে ঠিক করল। তারপর সবাই মিলে বেড়াতে বেরোলো। হাঁটতে হাঁটতে আলপথ পেরিয়ে বেশ দূরের একটা জংলা মত জায়গা দেখিয়ে বিজন বলল, চল ওই জমিদার বাড়িতে আজ যাই। শুনেই রুনির মনে ভয় আনন্দ মিশিয়ে একরকমের উত্তেজনা তৈরি হল কিন্তু বাধ সাধল রেশমা। ও বলল, বুড়ো বটতলার নিচ দিয়ে আমি কখখোনো ঐ ভাঙা বাড়িতে যাব না। ওখানে গলাকাটা পেত্নীরা আসে, মা বলেছে জ্যান্ত খেয়ে নেবে আমাকে পেলে। বিজন তো সাহসী ছেলে শুনেই চোখে তাচ্ছিল্য ফুটিয়ে বলল, আরে যা যা ভীতুর ডিম কোথাকার। তোদের যেতে হবে না আমি একাই যাচ্ছি।বিজন ওরকম করে বলাতে রুনিও বলে বসল রেশমা না গেলেও ও বিজনের সাথে যাবে। কি করা আর রেশমাও ওদের সাথে চলল।
বটতলাটা পেরোতে রুনিরও কেমন ভয় ভয় করতে লাগল।তখন বিকেল হলেও এদিকটা বেশ শুনসান। অনেক দূরের নদী থেকে ঠান্ডা হাওয়া আসছে। চারদিকে কেমন স্তব্ধ একটা ভাব। ওরা আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল পুরোনো বাড়িটার কাছে।বাড়ির সামনে বড় বড় কিছু গাছ, রুনি কোনো গাছের নাম জানে না, বিজনকে জিগ্যেস করে শুনল এগুলো দেবদারু গাছ। বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ল ওরা। খুব ঠান্ডা আর শান্ত একটা বাড়ি যেখানে কেউ বাস করে না। ভয়ের বদলে এবার ওদের মনে কৌতুহল জাগতে শুরু করেছে। ঘোরানো সিঁড়ি উঠে গেছে দোতলা ছাড়িয়ে ছাতে। ওরা সেই সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল ছাতে। বাড়ির আনাচে কানাচে চারদিকে ঝোপঝাড়, ছাতেও এখানে সেখানে গাছ উঠেছে। বিজন ছাত থেকেই দেখতে পেল ঝোপের মধ্যে ডাসা পেয়ারা ভর্তি একটা গাছ। দুদ্দাড় নেমে পড়ে বিজন গাছে উঠে পেয়ারা পাড়তে লাগল। ঠিক তখুন গাছের নিচে দাঁড়ানো রুনি আর রেশমা পায়ে কাছে খসখস শব্দ্ শুনে চমকে তাকিয়ে দেখে একটা সাপ ওদের খুব কাছাকাছি হেলেদুলে যাচ্ছে। ভুলুটা ঘেউ ঘেউ করে উঠতেই বিজন তাকিয়ে দেখে রুনি আর রেশমা ভয়ে দুজনকে জড়িয়ে ধরেছে। মুহূর্তের মধ্যে বিজন গাছ থেকে নেমে কোথা থেকে একটা ডাল জোগাড় করে এনে এক ঝটকায় সাপটাকে তুলে দূরে ছুঁড়ে মারল।তারপর রুনি আর রেশমাকে নিয়ে একছুটে সেখান থেকে বেড়িয়ে দৌড়।
উফফ্ দৌড়াতে দৌড়াতে রুনির মনে হলো কী সাংঘাতিক একটা ব্যাপার হত আরেকটু হলেই।
বাড়ি ফিরে মা’কে রাতে সব বলতে মা রুনিকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বললেন, মামণি বিপদ কি বলে কয়ে আসে কখনও। আমাকে না বলে আর কখনও যেন এমন কাজ করতে যেও না। রুনিও মনে মনে ভাবল মা তো ঠিক বলছে্ন। মা’কে রুনি জড়িয়ে ধরে বলল, স্যরি মা আর কখনও এমন করব না।