খেলাঘরখেলাঘর

শিবমের কথা



লকু এগিয়ে আসে,দেখবে বলে,শালিকের বাচ্চা.এমনি সময় পাখীর মা বাবা হবে,ডেকে উঠলো ওদের ভাষায়,শিবমের মনে হলো ওদের বাচ্চার জন্য ওরা খুব দুঃখ পাচ্ছে!
শিবম বলল,ওই দেখ পাখীর ঘর,বাচ্চাটাকে ঘরে উঠিয়ে দে না!
লকুর এই সময় গাছে উঠতে ইচ্ছে হলো না,অনিচ্ছায় বলে উঠলো,আমি পারব না,তুই ওঠ,কিন্তু  সাবধান,অন্ধকার হয়ে গেছে,দেখবি গর্তে সাপ টাপ থাকতে পারে কিন্তু!

পাখীর মা বাবারা ঘন ঘন ডেকে উঠতে লাগলো,শিবম থাকতে পারলো না,বাচ্চাটাকে লকুর হাতে ধরিয়ে চড়ে গেলো গাছে.তারপর লকুর হাত থেকে বাচ্চা নিয়ে পাখীর বাসায় রাখল,আর অমনি সময় ঘ্যাঁচ করে কিছুতে কামড়ে দিলো ওকে। মনে হলো কয়েকটা ছোট ছোট দাঁত বিঁধে গেলো ওর হাতে। সামান্য লাগলো,কিন্তু প্রচন্ড ভয়ে ভয়ঙ্কর চীত্কার করে উঠলো শিবম। হাত ছেড়ে গিয়ে গাছের
নীচে এসে পড়ল।বিশেষ লাগেনি তার,কেবল ভয়ে জোরে জোরে চীত্কার করতে লাগলো।

অন্ধকারে কোথায়,কিসে কামড়ালো,ভলো ভাবে দেখা গেলো না কিছু,লকু আমের ব্যাগ ফেলে দিয়ে শিবমকে ধরে নিয়ে ছুটতে লাগলো বাড়ির দিকে। বাড়ি পৌঁছে ঘটনার কথা বলল।শিবমকে বিছানায় শুয়িয়ে দেওয়া হলো। দংশিত জাগার উপরে নিচে কাপড় দিয়ে বাঁধন দেওয়া হলো।জাগাটা থেকে অল্প অল্প রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল। শিবমের মা মাসি কান্না কাটি করতে লাগলেন। শিবমের মেসো ডাক্তারের কাছে ছুটলেন,গ্রামের ওঝাকেও ডাকানো হলো।

শিবমের শরীর দুর্বল লাগছে,দংশনের জাগায় বেশ ব্যথা করছে। তবে খুব যে ব্যথা তা নয়!ওকে ভয়ে জড়সড় মনে হচ্ছে,আর হয়তো ও বাঁচবে না, ক্রমশঃ ওর মনে হতে লাগলো জ্ঞান শূন্য হয়ে যাচ্ছে।

ডাক্তার আর ওঝা এক সঙ্গে ঘরে ঢুকলেন,দু জনেই নিজের নিজের মত করে পরীক্ষা করতে লাগলযে। শিবমের ঘুম পাচ্ছে,মনে হচ্ছে ঘুমলে আর হয়তো সে কোনো দিন জাগবে না!বাড়িতে কান্না কাটির রোল পড়ে গেলো।
ডাক্তার বলে উঠলেন,বিষধর সাপ না।
ওঝা একই মত জানালেন।
দংশনের জাগা থেকে রক্ত বের হচ্ছিল,আর দংশিত জাগায় স্পষ্ট চারটে দাঁতের দাগ,ডাক্তার বাবু আর ওঝা এক মত হলেন,বিষধর সাপের কামড়ে দুটো দাগের দাগ থাকে,আর ক্ষত বেয়ে রক্ত পড়তে থাকে না। শিবমের দেহে চারটা দাঁতের দাগ,রক্তও অনেক গড়িয়ে পড়েছে। তা ছাড়া তার নাড়ির গতি,রক্ত চাপ সবই ছিলো স্বাভাবিক। শিবম এতটা সময় অজ্ঞানের ঘোরে ছিলো,বস্তুতঃ মনের দুর্বলতা ওকে জ্ঞান শূন্য করে রেখেছিল। ওর কানে যখন ডাক্তার বাবুর আর ওঝার কথা গেলো,ধীরে ধীরে ও স্বাভাবিক হয়ে এলো। 

মা বাবা উত্কন্ঠায়,কান্না জড়িত গলায় ডেকে উঠলেন,শিবম,বাবা,এখন কেমন লাগছে?
শিবম তখন অনেক স্বাভাবিক হয়ে এসেছে--ও জবাব দিলো না কিছু,কিন্তু ওর মুখে ছড়িয়ে গেলো হালকা হাসির রেখা.
সে হাসির রেখা দেখে সবার সঙ্গে লকু,পল্টু,খেদুর মুখেও হাসি ফুটল।



তাপসকিরণ রায়
জবলপুর , মধ্য প্রদেশ

 

তাপস কিরণ রায় অর্থশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। স্কুলে শিক্ষকতা করেন বেশ কিছু বছর। পরে আয়কর বিভাগে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি মধ্য প্রদেশের জবলপুর শহরে বাস করেন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি করেন। ছোটদের এবং বড়দের জন্য লেখা তাঁর অনেকগুলি বই-ও প্রকাশিত হয়েছে।