রানীদের ঘর রাজাদের ঝুপড়ি ঘরের সামনে। মাঝখান দিয়ে যাতায়াতের রাস্তা চলে গেছে। রানী একটি মেয়ের নাম। ধনী ঘরের মেয়ে রানী। চার তলা বিরাট বাড়ি ওদের।
চার বছর বয়েস রানীর।স্কুলে যায়। ডি.পী.সী.স্কুলে। রোজ সকালে স্কুলের গাড়ি আসে ওকে নিতে। বিকেলে ওই গাড়ি ওকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে যায়। পড়া লেখার চাপ বিশেষ নেই।হোম ওয়ার্ক--সে এক ঘন্টা বসেই শেষ করে নেয়।তারপর খেলা--কত রকম খেলনায় তার ঘর ভরা!কি নেই তাতে?চাবি দাও,মানুষ নাচে,গান করে। ট্রেন ছুটে চলে,পাখী উড়ে যায়। প্রকান্ড বড় বড় নানা রকম ডল। এ ছাড়া আছে রান্না বাটি খেলার সমস্ত সরঞ্জাম। যখন যে খেলা পছন্দ তাই নিয়ে খেলো!এত খেলনাও মাঝেমাঝে তার মন কাড়তে পারে না। নতুনত্বের খোঁজে সে বাবা মার কাছে বায়না ধরে--আরও চাই,আরও পুতুল,অন্য অন্য রকমের!
তিন তলায় রানীর পড়ার ঘর,শোয়ার ঘরও সেটাই.বাবা মার সঙ্গেই শোয় ও।
একদিন সে ওই তিনতলা থেকে আবিষ্কার করল একটা বাচ্চা ছেলেকে।ওদের বাড়ির নীচে,রাস্তার ওপারের ঝুপড়ি ঘরে বসে আছে ছেলেটা। ওই ঘরগুলি কেমন ভাঙাচোরা। দরজা,জানালা,দেওয়াল--কোনো কিছুরই ঠিক নেই!বোরা,প্লাস্টিক কাগজ,বাঁশ কঞ্চির ঘেরায় তৈরী। ঘরে ছেলেটা খেলা করছে -একা একা--ঘরের দরজা আধ খোলা।ছাদের রেলিং ধরে রানী উঁকি মেরে দেখছিল। সেই ছেলে পাথরের টুকরো ,গাছের ডালের টুকরো,ভাঙা পুতুল,বাক্স নিয়ে চুপ চাপ খেলা করছে।রানীর কাছে এ যেন এক আবিষ্কার।খেলা ধুলার ফাঁক,পড়া লেখার অবসরে ওই ছেলেটাকে দেখতে ও ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।ওর খেলা,ওর নাচানাচি,লাফালাফি সব কিছু দেখে রানী খুব আনন্দ পায়।
একদিন রানী দেখল রাজা খেলে বেড়াচ্ছে.ওদের ভাঙা ঘরের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে যে রোদের আলো গিয়ে পড়েছে।তাই দিয়ে ও খেলছে।কখনো ও ধরতে যাচ্ছে রোদের টুকরো,কখনো সে দেখে তার নিজের গায়েই লেগে আছে ওই টুকরো রোদ।ঝিকির মিকির রোদের খেলনা দেখতে দেখতে রাজা হাততালি দিয়ে উঠছে।খেলার এ দৃশ্য দেখে রানী নিজের অজান্তে হাততালি দিয়ে উঠলো।রাজার কান পর্যন্ত পৌঁছালো সে তালির শব্দ।হাততালির শব্দ মিলিয়ে রাজা ওদের আধ খোলা দরজার ফাঁক দিয়ে রানীকে দেখতে পেল। দেখল তার মতই ছোট একজন--যে হাততালি দিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।খুব আনন্দ হলো ওর।আনন্দে সেও রানীর দিকে তাকিয়ে আবার হাততালি দিয়ে উঠল।