খেলাঘরখেলাঘর

পোকা

ছেলে ফিরে এলে তাকে কেমন ভোজ খাওয়াবে, সেটা ভাবতে ভাবে ওয়াং বুড়ি মনে আনন্দে প্রায় নেচেই ফেলল।

"আদরের ছেলে আমার, সে আমাদের ভাগ্য দেখে কতই না অবাক হবে - আর সবই কিনা হয়েছে সে তার বুড়ি মা'কে যত্ন আত্তি করেছে বলে।"

যখন মিং-লি ফিরে এল, মুখ গম্ভীর করে,তার মা তার মুখ দেখেই বুঝল খবর ভাল নয়।

"  এস, এস বাছা!" সে ডেকে উঠল, " হাত মুখ ধুয়ে নাও, আর মুখে হাসি আন, কারণ দেবতারা আমাদের প্রতি সদয় হয়েছেন আর আমি খুব দ্রুত তোমাকে দেখাব আমার প্রতি তোমার ভালবাসার জন্য তুমি কেমন পুরষ্কৃত হয়েছ।" এই বলে , সে ফুটন্ত জলের মধ্যে সোনালি গুবরেপোকাটাকে ফেলে দিয়ে আগুণ খোঁচাতে লাগল।

মিং-লি গম্ভীরভাবে তার দিকে তাকিয়ে ভাবল, মা নিশ্চয় খিদের চোটে পাগল হয়ে গেছে। এই দুঃখও দেখার ছিল। সে কি তার নিজের পরণের শেষ পোষাকটি বিক্রি করে কয়েক পয়সা যোগাড় করে মায়ের জন্য যব কিনে আনবে?

ভুলু এসে তার হাত আদর করে চেটে দিল, যেন বলতে চাইল, " আর দুঃখ কর না তুমি, আমাদের ভাগ্য এবার খুলেছে।" পুষি এক লাফে বেঞ্চে উঠে পড়ে মনের আনন্দে মিউমিউ করতে লাগল।

মিং-লিকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। পলক ফেলতে না ফেলতেই সে শুনতে পেল তার মা ডাকছে-

" টেবিলে এসে বস বাবা, আর এই পোলাওটা গরম থাকতে থাকতে খেয়ে ফেল। "

সে কি ঠিক শুনছে? সে ভুল কিছু শুনল না তো? না, ওই তো টেবিলের ওপর এক বিশাল থালা ভর্তি সুস্বাদু পোলাও, যা পৃথিবীর মধ্যে সে সবথেকে বেশি ভালবাসে, অবশ্যই, তার মা'কে ছাড়া।

"খেয়ে নাও, আর কোন প্রশ্ন কর না" বুড়ি ওয়াং বলল। "তোমার খেয়ে পেট ভরলে আমি তোমায় সব কিছু বলব।"

ভাল কথা! ছেলের হাত পোলাওএর থালার ওপর দ্রুত চলতে থাকল। সে মনের খুশিতে অনেক খেল, আর তার মা তাকে অবশেষে পেট ভরে খেতে দেখে সত্যিই খুশি হল। কিন্তু সেই বুড়ি তার ছেলেকে এই অসাধারণ রহস্যটা জানানোর জন্য এতই উতলা ছিল,  সে তো আর ধৈর্য্য ধরে রাখতেই পারেনা ।

"শোন, বাছা!" সে আর থাকতে না পেরে ছেলের খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই বলল- "এই দেখ আমার গুপ্তধন!" আর সে তার চোখের সামনে সোনালি পোকাটাকে তুলে ধরল।

"আমাকে আগে তুমি বল কোন দেবদূতের মত দয়ালু ধনী ব্যক্তি আমাদেরকে এত টাকা দিলেন?"

"সেটাই তো আমি তোমায় বলতে চাইছি," তার মা হেসে বলল, " আজ দুপুরে এখানে সত্যিই একজন দেবদূর এসেছিলেন, শুধু তাঁকে দেখতে ছিল টাকমাথা পুরোহিতের মত। এই সোনালি পোকাটাই একমাত্র জিনিষ যা উনি আমাকে দিলেন, কিন্তু এর ক্ষমতা হাজার হাজার টাকার থেকে বেশি।

ছেলে পোকাটাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল, নিজেই নিজেকে সন্দেহ করল, আর অধৈর্য্যভাবে নিজের সুস্বাদু খাবারের কথা ভাবতে থাকল।"কিন্তু, মা, এই পিতলের খেলনাটার সাথে এই অসাধারণ পোলাও এর সম্পর্ক কি? এত ভাল খাবার যা জীবনে খাইনি?"

"খেলনাই বটে! পিতল! ছিঃ ছিঃ বাছা! তুমি জান না তুমি কি বলছ। শুধু শোন আর এমন এক গল্প শুনবে যা তোমার চোখ খুলে দেবে।"

তার মা তাকে খুলে বলল কি কি হয়েছে, আর গল্পের শেষে , বাকি পড়ে থাকা পোলাও সবটুকু ভুলু আর পুষির জন্য মাটিতে ছড়িয়ে দিল, যেমনটা তার ছেলে আগে কোন দিন করতে দেখেনি, কারণ তারা এতই গরিব ছিল যে পরে খাওয়ার জন্য সবকিছু চেঁছে-পুঁছে জমিয়ে রাখত।

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।